লেখাটি অামার নয়। শুধু শিরোনামটি আমার নিজের দেয়া। সামুর পাঠকদের সুবিধার্থে একটি কপি -পেস্ট পোস্ট
সপ্তাহখানেক আগে শিয়াদের আক্বীদার বিষয়ে কিছু লিখব বলে বলেছিলাম। সেই ক্রমধারায় আজকের লেখাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
ইন্টারনেট এ এই বিষয়ে অনেক লেখা আছে। সেগুলো থেকে কিছু সহায়তা নিয়েছি। এছাড়া আরো কিছু বইয়ের সহায়তায় এই লেখাটি সংকলিত করলাম।
মূল বিষয়টি এতটাই স্পর্শকাতর ও বিশাল যে ক্ষুদ্র একটি স্ট্যাটাসে সেটি সম্পর্কে লেখা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার অসংখ্য সুযোগ আছে। তারপরেও কিছু যৌক্তিক কারণে লিখলাম। কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখার সময় হয়ে এসেছে আমাদের মুসলিম উম্মাহর।
হে পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু মহিমান্বিত আল্লাহ পাক, আমার নিয়তকে কবুল করুন এবং আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমাকে ক্ষমা করুন।
.
মতবাদের উত্পত্তিঃ
----------
উমার রাঃ মৃত্যুর পর উসমান ইবন আফফান (রাঃ) যখন খলিফা, সে সময় কুফায় এসে একজন লোক ঘাঁটি গাড়লো যার নাম আবদুল্লাহ বিন সাবাহ। দুহাতে দান করা থেকে শুরু করে মানুষের মন জয় করার জন্য যা যা করা দরকার তার কিছুই করতে এই লোকটি বাদ রাখেনি। অল্পদিনেই কুফার অগণিত মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তার আসন নিশ্চিত হলো। তার নামটি মুসলিমের মতো শোনালেও প্রকৃতপক্ষে সে ছিলো একজন ইয়াহুদী গুপ্তচর (তখনকার সময়ে আরবীয় অঞ্চলের মুসলিম, খৃষ্টান, ইয়াহুদী কিংবা মুশরিক সকলের নামই এমন ছিলো)। এক সময় যখন ইবন সাবাহ তার আসন সম্পর্কে নিশ্চিত হলো, তখন সে ধীরে ধীরে মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলো।
তার মূল এজেন্ডা ছিলো এই যে, উসমান রাঃ অন্যায়ভাবে আলী রাঃ এর প্রাপ্য খিলাফত নিজের অধিকারে নিয়ে নিয়েছেন। রাসুলের পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসাবে মূলতঃ আলীরই খলিফা হওয়া উচিৎ। আহলে বাইত বা রাসুল পরিবারের মতো এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সে অল্পদিনের ভেতর মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে সক্ষম হলো। আর এরই ভিতর দিয়ে যেন ভেঙে গেলো ফিতনার দরজা, চিরতরে। শিয়া মতবাদের পত্তন হলো পৃথিবীর বুকে।
মুসলিম খিলাফতের রাজধানী মদীনায় পৌঁছে গেলো এ খবর, পৌঁছালো স্বয়ং খলিফা উসমান রাঃ এর কানেও। মজলিশে শুরার সদস্য সাহাবাগণ এগিয়ে এলেন যার ভিতরে স্বয়ং আলী রাঃ ও ছিলেন। তারা উসমান রাঃ কে তৎক্ষণাৎ বাহিনী পাঠিয়ে ইবন সাবাহকে শায়েস্তা করার পরামর্শ দিলেন। কোমল হৃদয় উসমান প্রত্যাখ্যান করলেন তা। অল্পদিনের ভিতরই আবদুল্লাহ বিন সাবাহ বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় মদীনা প্রবেশ করলো। খলিফার কাছ থেকে এবারো কোন বাধা না পেয়ে এক সময় তারা হত্যাই করে বসলো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দুই কন্যার স্বামী এবং পৃথিবীতে বসে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী উসমান রাঃ কে। মুসলিম উম্মাহ দেখতে শুরু করলো ফিতনার কদর্য রূপকে।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ইহুদী বাহিক্যভাবে ইসলাম গ্রহণ করে, আহলে বায়আত তথা রাসূলের পরিবারের প্রতি মহব্বত ও আলী রা.-র প্রতি ভালবাসার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয় এবং আলী রা.-কে খেলাফতের প্রথম ওসি দাবি করে। এক পর্যায়ে ইলাহ্-এর স্থানে অধিষ্ঠিত করে। সেখান থেকেই রাফেযী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি।
এসব কথার সত্যতার প্রমাণ খোদ শিয়াদের কিতাবই। আল-কুম্মী তার “আল মাকালাত ওয়াল ফিরাক” গ্রন্থে বলেন, “আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাবা আলী রা.-কে ইমামতের প্রথম হকদার দাবি করে, আবু বকর, ওমর ও উসমানসহ সকল সাহাবা সম্পর্কে মিথ্যাচার ও বিষোদগারে লিপ্ত হয়।” অনুরূপ মন্তব্য করেছেন “ফিরাকুশ শিয়া” নওবাখতী ও “রিজালুল কিশ্শী” গ্রন্থে কিশ্শী। আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাবা সম্পর্কে একই মন্তব্য করেছেন বর্তমান যুগের শিয়া মুহাম্মাদ আলী আল-মু‘আলেম “আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাবা আল হাক্বীক্বাতুল মাজহুলাহ্” গ্রন্থে। তারা সকলে রাফেযী মতের এক একজন বড় পণ্ডিত। আল-বাগদাদী বলেন, “সাবায়ীরা হচ্ছে আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাবার অনুসারী। এ আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাবা-ই আলী রা.-র ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাকে নবী দাবি করেছে। পরবর্তীতে তাকে আল্লাহ পর্যন্ত দাবি করেছে।”
বাগদাদী আরো বলেন, “ইবনে সাওদা অর্থাৎ ইবনে সাবা আসলে ইয়াহুদী ছিল, কুফাবাসীর নিকট নেতৃত্ব ও সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে নিজেকে সে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করে। তাওরাতের সূত্র ‘প্রত্যেক নবীর একজন ওসী থাকে’ হিসেবে আলী রা.-কে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওসী আখ্যা দেয় এবং কুফাবাসীর নিকট তা প্রকাশ করে। সাহরাস্তানী ইবনে সাবা সম্পর্কে বলেন, সেই সর্ব প্রথম আলী রা.-র ইমামতের দাবী তুলে। সাবায়ী সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন, এরা প্রথম প্রথম ‘গায়বাত’ ও ‘রাজাআত’ মতবাদ পেশ করে। পরবর্তীতে তাদের অনুসারী শিয়ারা এ মতবাদের উত্তরাধিকারী হয়। আলী রা.-র ইমামত ও খেলাফত এবং তার ওসী হওয়ার অভিমত ইবনে সাবারই মীরাস। এরপর তার অনুসারী অর্থাৎ শিয়া সম্প্রদায় অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়। এভাবে আলী রা.-র ওসী ও ইমামত বরং ইলাহ হওয়ার দাবি নিয়ে ইহুদী ইবনে সাবার অনুসারী শিয়াদের উৎপত্তি হয়। শিয়া থেকে রাফেযী নামকরণ শিয়া বিদ্যান শায়খ মাজলেসী “বেহারুল আনওয়ার” কিতাবে উল্লেখ করেন। অধ্যায়: ‘রাফেযার ফযিলত ও নামকরণের সাধুবাদ’ অতঃপর সুলাইমান আল-আ‘মাশ থেকে উল্লেখ করেন, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ্ জা‘ফার ইবনে মুহাম্মাদের নিকট প্রবেশ করে বলি, আপনার জন্য আমাকে উৎসর্গ করেছি, মানুষেরা আমাদেরকে রাওয়াফেয (রাফেযী এর বহুবচন) বলে, রাওয়াফেয মানে কি? তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তারা এ নামকরণ করেনি, বরং আল্লাহ্ মুসা আ. ও ঈসা আ.-র ভাষায় তাওরাত ও ইনজিলে তোমাদের এ নামকরণ করেছেন।
আরো বলা হয় যে, যায়েদ আলী ইবনে হুসাইনের নিকট এসে বলে, আমাদেরকে আবু বকর ও ওমর থেকে মুক্ত করুন, যেন আমরা আপনার সাথে থাকতে পারি। তিনি বলেন, তারা দুজন তো আমার দাদার সঙ্গী আমি তাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করি। তখন তারা বলে, ﺇﺫﺍ ﻧﺮﻓﻀﻚ অর্থাৎ তাহলে আমরা আপনাকে বর্জন করব। অতঃপর সেখান থেকেই তাদের নামকরণ হয় রাফেযাহ্ বা রাফেযী। যারা তার হাতে বায়‘আত করে ও যায়দীয়া মত পোষণ করে, সাধারণত তাদেরকেই এ নামে অবিহিত করা হয়।
আরো বলা হয় যে, আবু বকর ও ওমরের ইমামাত অস্বীকার করার জন্য তাদেরকে রাফেযী বলা হয়। আরো বলা হয় যে, তারা যেহেতু দীন ত্যাগ করেছে, তাই তাদেরকে রাফেযা বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস বলেন, “আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত পালন করা তোমার অবশ্য কর্তব্য, এই সুন্নাতকে তোমরা হাতে- দাঁতে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। আর সাবধান! ইসলামী শরীয়তে তোমরা নতুন কিছু আবিস্কার করবে না, কেননা প্রত্যেক নব আবিস্কৃারই হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই হচ্ছে ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ্)
.
.
শী'আদের দল-উপদল সমূহঃ
--------------
শী'আদের প্রথমতঃ তিনটি দল।
১.তাফযীলিয়া। এরা আলী রাযি.কে আবূ বকর ও ওমর রাযি. এর উপর ফযীল দিয়ে থাকেন।
২.সাবইয়্যা। এদেরকে "তাবরিয়া"ও বলা হয়। এরা হযরত সালমান ফারসী, আবূ জর গিফারী, মেকদাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াছির প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অন্য সকল সাহাবী থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, এমনকি তাঁদেরকে মুনাফিক এবং কাফের পর্যন্ত বলে।
৩.গুলাত বা চরমপন্থী শিয়া। এদের কতক আলী রাযি. এর খোদা হওয়ার প্রবক্তা ছিল। আর কতক মনে করত খোদা তাঁর মধ্যে প্রবেশ করেছেন অর্থাত্ তিনি ছিলেন খোদার অবতার বা প্রকাশ।
গুলাত বা চরমপন্থী শিয়াদের ২৪টি উপদল ছিল। যাদের একটি দল ছিল ইমামিয়া। এই ইমামিয়া ছিল শিয়াদের ১টি বৃহত্ সংখ্যাগরিষ্ট দল। সাবইয়্যাদের ছিল ৩৯টি উপদল। ইমামিয়া দলের মধ্যে প্রধান ও প্রসিদ্ধ ৩টি উপদল। যথাঃ ১.ইছনা আশারিয়া। ২.ইসমাঈলিয়া। ৩.যায়দিয়া। ইছনা আশারিয়া- শিয়াদের উপরোক্ত ৩টি দলের মধ্যে ইছনা আশারিয়া শিয়াদের অস্তিত্বই প্রবল। এদেরকে ইমামিয়াও বলা হয়। সাম্প্রতিক কালে সাধারণভাবে শিয়াবলতে এই "ইছনা আশারিয়া" বা "ইমামিয়া" শিয়াদেরকে বোঝানো হয়ে থাকে। উপমহাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র তাদের অনুসারী রয়েছে। বর্তমান ইরানে তারাই ক্ষমতাসীন। ইরাকেও প্রচুর সংখ্যক এরুপ শিয়া রয়েছে।
রাফেযীদের নানা দল উপদল “দায়েরাতুল মাআরেফ” কিতাবে বর্ণিত আছে যে, “প্রসিদ্ধ তেহাত্তর দলের চাইতেও শিয়াদের দল উপদলের সংখ্যা আরো বেশী।”{দায়েরাতুল মা‘আরেফ -৪/৬৭} প্রসিদ্ধ রাফেযী মীর বাকের আল দাম্মামের বরাতে বলা হয়েছে, হাদীসে বর্ণিত তেহাত্তর দলের সবাই শিয়া, তাদের মধ্যে মুক্তি প্রাপ্ত দল শুধু ইমামিয়াহ্ (ইমামিয়াহ্ শিয়াদের একটি উপদল)। মুকরেযী বলেন, তাদের দলের সংখ্যা তিনশোর মত। শাহ্রস্তানী বলেন, “রাফেযীরা পাঁচ দলে বিভক্ত: (১) আল কিসানিয়াহ্ (২) আল যায়দিয়াহ্ (৩) আল ইমামিয়াহ্ (৪) আল গালিয়াহ্ (৫) আল ইসমাঈলিয়াহ্।” বাগদাদী বলেন, “আলী রা. এর পরবর্তী যুগে রাফেযীরা চার ভাগে বিভক্ত হয়: (১) যায়দিয়াহ্ (২) ইমামিয়াহ্ (৩) কিসানিয়াহ্ (৪) গুলাত। রাফেযীরা বর্তমানে ‘শিয়াহ্’ নামে পরিচিত।
.
.
শিয়াদের আকিদা-বিশ্বাসঃ
--------------
• শিয়াদের মূল দল তথা ইহুদী পণ্ডীত আবদুল্লাহ ইবনে সাবার মতাদর্শীরা দাবী করে যে, খলিফা হবার অধিকারী ছিলেন হযরত আলী (রাঃ)। এটা তাঁর রাজনৈতিক অধিকার নয়, ধর্মীয় অধিকার। সাহাবায়ে কেরামের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট অংশ হযরত আলী(রাঃ) কে খলিফা রূপে মনোনীত না করে কাফের হয়ে গেছেন।
• শিয়াদের আরেক দল আরও একটু অগ্রসর হয়ে হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে এরূপ ধারণা প্রচার করতে থাকে যে, প্রকৃত প্রস্তাবে হযরত আলী (রাঃ)ই নবী ছিলেন। ফিরিস্তা জীবরাঈল (আঃ) ভুলক্রমে ওহী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) র নিকট নাযিল করে ফেলেছিলেন
• শিয়াদের ‘আকিদায়ে ইমামত’ হলো- ইসলামী আকিদা মতে একজন স্বতন্ত্র শরীয়াতধারী নবীর যে অর্থ, অবস্থান ও মর্যাদা, তাদের ইমামের মর্যাদাযাদ ফেরেস্তাদের চেয়েও বেশি।
• শিয়াদের মতে, ইমামগণ নিষ্পাপ, তারা গায়েব জানেন। আল- কুলাইনী “উসুলুল কাফী” গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “ইমাম জাফার সাদেক বলেন, আমরা হলাম আল্লাহর ইলমের ভাণ্ডার। আমরা আল্লাহর নির্দেশাবলীর অনুবাদক। আমরা নিষ্পাপ কওম। আমাদের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমাদের ফরমানী থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আসমানের নীচে ও যমীনের উপরে বিদ্যমান সকলের জন্য আমরা আল্লাহর পরিপূর্ণ হুজ্জাত তথা দলীল।” উক্ত গ্রন্থের অনুচ্ছেদ “নিশ্চয় ইমামগণ যখন জানার ইচ্ছা করেন তখনই তারা তা জেনে যান”-এ জা‘ফার সূত্রে কুলাইনী উল্লেখ করেন, “নিশ্চয় একজন ইমাম যখন জানার ইচ্ছা করেন তখনই তিনি তা জেনে যান, আর ইমামগণ কখন মৃত্যু বরণ করবেন, তাও তারা জানেন, তারা নিজেদের ইচ্ছা ব্যতীত মৃত্যু বরণ করেন না।
• শিয়াদের মতে, নবী করীম (সাঃ) এর ওফাতের পর সমগ্র সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে যাঁরা হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (রাঃ)কে খলিফা পদে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর হাতে বাইয়াত নিয়েছিলেন , তাঁরা সকলেই কাফেরে পরিণত (নাউযুবিল্লাহ)। কেননা, তাঁরা নিষ্পাপ ইমাম হযরত আলী(রাঃ)এর হাতে বাইয়াত হন নাই। এটাই হলো শিয়াদের সাহাবায়ে কিরামের প্রতি বিদ্বেষ
• শিয়াদের মতে, কোরআন মজিদ অবিকৃত থাকেনি। বর্তমান আকারে যে কোরআন মজিদ মুসলমানদের হাতে আছে , তা নির্ভেজাল কোরান নয় বরং তা হযরত উসমান(রাঃ) কর্তৃক সংকলিত কোরআন।তারা দাবি করে। রাসূলে কারীম(সাঃ)এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছিলেন তার মধ্যে ১৭০০০(সতেরো হাজার) আয়াত ছিল। কিন্তু, বর্তমানে মুসলমানদের নিকট যে কোরআন শরীফ বিদ্যমান আছে , সে কোরআনের মধ্যে হযরত আয়শা(রাঃ) এর গণনানুযায়ী মাত্র ৬৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি)টি আয়াত রয়েছে।
• শিয়ারা ইসলামের কলেমায় সন্তুষ্ট নয় বরং তারা কালেমা ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদু রাসূল্লাহ, আলীয়্যুন ওয়ালীউল্লাহ ওয়াসিয়্যু রাসূলিল্লাহ, খলীফাতুহু বিলাফসল।“ (আলী (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর একমাত্র ওয়ারিশ ও তাঁর সরাসরি খলিফা)’ প্রভৃতি বাক্য যোগ করে
• শিয়ায়ে ইসনা আশারিয়্যার মতাদর্শীদের আকিদা-বিশ্বাস হলো- তারা হযরত আলী (রাঃ) কে খোদা বলে দাবী করে। সে জন্য তারা ‘ইয়া আলী মদদ’ বলে তাঁকে সম্বোধন করে
• হযরত আবু বক্কর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) সহ সকল সাহাবি কাফির মাত্র দু এক জন ছাড়া (নাউযুবিল্লাহ)
• শিয়াদের ইমামদের উপর ঈমান আনা নবীদের উপর ঈমান আনার সমান
• শিয়াদের ইমামদের হাতে জান্নাত- জাহান্নাম, তাদের ইমামরা যাকে ইচ্ছা জান্নাত ও জাহান্নামে পাঠাতে পারবে
• হযরত আয়শা (রাঃ) জেনাকারিনী (নাউযুবিল্লাহ)
• মুতা বিয়ে (প্রতিবৃত্ততি) কে তারা অনেক সওয়াবের কাজ মনে করে।তাদের কাছে নারীদের সাথে সমকামিতাও বৈধ (নাউযুবিল্লাহ)
• হযরত উমর (রাঃ) রাসূল(সাঃ)এর ঘরে আগুন লাগিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)
• শিয়ারা কারবালার বাইরে সিজদা করার জন্য কারবালার বিশেষ স্থানের মাটি সংগ্রহ করে এবং সেই মাটি দ্বারা ছোট ছোট চাকতি তৈরী করে চাকতীতে কপাল ঠেকিয়ে সিজদা করে। (নাউযুবিল্লাহ)! এমনকি পবিত্র মক্কার বাইতুল্লাহ শরীফ এবং মদীনার মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার সময়ও তারা সেই চাকতি ব্যবহার করে। (নাউযুবিল্লাহ)
• শিয়াদের আরেক দলের বিশ্বাস যে, কারবালার ঘটনার পর বিদ্রোহ ঘোষনাকারী নিখোঁজ হওয়া মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাকে ইরাকের একটি পাহাড়ী অঞ্চলে সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। কেয়ামতের আগে দাজ্জালের মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীর সহযোগী রূপে তাঁর আবির্ভাব হবে
.
.
এবার চলুন বর্তমানের এই শিয়া- রাফিজিরা ইরাকী মুসলমানদের সাথে কি কি করেছিলঃ
.
কয়েক বছর আগে মিশরের একটি টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে শেইখ জহবি হাম্মাদ ইরাকের সুন্নিদের সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, আর তখন ইরাকের বাগদাদ থেকে একজন সুন্নি মুসলিম ফোন করে নিজের করুন কাহিনী বর্ণনা করেন।
তাঁর বর্ণনার কিছু বক্তব্য এরকম- “হে শেইখ, আমাদের মেয়েদেরকে বন্ধী করা হচ্ছে, আহলুস সুন্নাহর পুরুষদের দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাঁদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, বৃদ্ধাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। তাঁরা আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে কারন তাঁরা চায় আমরা যেন মা আয়েশা রাঃ কে গালি দেই (নাউজুবিল্লাহ)। তাঁরা আমার দাড়িতে ময়লা লাগিয়ে আমাকে অপদস্থ করেছে। হে আহলুস সুন্নাহর অনুসারিরা তোমরা কোথায়… আমাদের রক্ষা কর।” “তারা আমাদের মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে; আমাদের মাঝে যাদের নাম আবু বকর, ওমর, ওসমান আছে তাঁদেরকে তাঁরা জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করছে। তাঁরা আমাদেরকে মা আয়েশার রাঃ কে গালি দিতে বাধ্য করছে, যখন কেউ তা করতে অস্বিকার করে তাঁদের আগুল কেটে ফেলা হচ্ছে।” “ও শেইখ! আমি একটি মেয়েকে দেখেছি যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সে মেয়েটি আল্লাহ্র কসম করে বলেছে- ওয়াল্লাহি, আমি কুমারি ছিলাম! ওয়াল্লাহি আমি কোরআনের হাফিজ ছিলাম! সে চিৎকার করে বলে- কে আমার গল্প রসূল সাঃ এর কাছে পৌঁছে দিবে?” “হে শেইখ! এবার আমার নিজের কাহিনী শুনুন। রাফিজিরা আমার তিন বছরের ছেলেকে ওভেনের ভিতর দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কারন তাঁর নাম রেখেছিলাম ওমর। এরপর তাঁরা তাঁর পোড়া মৃত দেহ আমার কাছে রেখে যায়।”
.
.
এখন শিয়ারা কাফির কিংবা তাদের বিষয়ে মহিমান্বিত আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি মতো উম্মী মানুষের কিছু বলা উচিত মনে করছি না । তবে জগৎ বিখ্যাত আলিমগণ শিয়াদের সম্পর্কে কী বলে গিয়েছেন তা উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করছি ।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল লাতিফ আল আশ-শাইখ তার সময়কার রাফেজিদের সম্পর্কে বলেছেন, “আর বর্তমান সময়ে তাদের অবস্থা আরো নিকৃষ্ট এবং করুণ। কারণ তারা তাদের আকিদায় আউলিয়া, আহলুল বাইত এবং অন্যান্যদের ব্যাপারে সম্মানের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত রকমের বাড়াবাড়ি করছে এবং বিশ্বাস করে যে বিপদ কিংবা সুখের সময় তারা ভাল বা খারাপের ক্ষমতা রাখে। এবং তারা একে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম মনে করে। এবং তারা একে ধর্মের অংশ বিবেচনা করে। একারণেই যারা তাদের এই অবস্থার কারণে তাদের কুফর সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে, তাহলে সে নাবীগণ কী নিয়ে এসেছেন এবং কিতাবগুলোতে কী নাযিল করা হয়েছে সে সম্পর্কে অজ্ঞ। তার উচিত মৃত্যুর পূর্বে নিজের ঈমানকে পরীক্ষা করে দেখা”।
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ সূরা ফাতহের ২৯ নং আয়াতটি রাফেজিদের উপর কুফরির দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কেননা তারা সাহাবিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। আর যারাই সাহাবিদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, তারা কাফির। এই মাসয়ালায় উলামাদের একটি দলও ইমামের সাথে একমত পোষণ করেছেন। [তাফসির ইবন কাসির]
ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “আমি একজন ইহুদি, একজন খ্রিস্টান কিংবা একজন রাফেজির পিছনে সালাত আদায়ের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখি না। তাদের জবাই করা পশু খাওয়া যাবে না, তাদের সালাম দেয়া যাবে না, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না, তাদের সাথে বিয়ে দেয়া হবে না এবং তাদের দেখতে যাওয়া যাবে না”। [খালক আফ’আলুল ইবাদ]
ইমাম সামা’নি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “উম্মাহর মাঝে ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, শিয়ারা হলো কাফির। কারণ তারা বিশ্বাস করে, রাসুলের সাহাবিরা পথভ্রষ্ট, তারা তাঁদের ইজমাকে অস্বীকার করে এবং তাঁদের ব্যাপারে এমন সব কথা বলে তাঁদের সাথে মানানসই নয়”। [আল-আনসাব]
ইবন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “আর তারা সাহাবিদের সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করে, তাঁদের বিরুদ্ধে অসৎ হওয়ার এবং রাসুলের বিরুদ্ধে আঁতাত করার অভিযোগ আনে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিচার ও আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে। যারাই এই পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান নিয়েছে, তারা নিজেদের ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে নিয়েছে এবং ইমামদের ইজমা অনুযায়ী তারা কুফরি করেছে। আর মদ্যপান ছেড়ে দেয়ার থেকেও তাদের রক্ত ঝরানো বেশি হালাল”। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া]
ইমাম আব্দুর রহমান ইবন মাহদি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, জাহমিয়্যাহ এবং রাফিজিয়্যাহ ভিন্ন দুটি ধর্ম। [খালক আফ’আলুল ইবাদাহ]
এছাড়াও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল, মুহাম্মাদ ইবন ইউসুফ আল-ফিরইয়াবি, আহমদ ইবন ইউনুস, ইবন কুতাইবা আদ- দিনাউরি, আব্দুল কাদির আল- বাগদাদি, আল কাজি আবু ইয়ালা, ইবন হাযম আয-যাহিরি, আবু হামিদ আল- গাজ্জালি, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবন আবিদিন, আবু হামিদ মুহাম্মাদ আল- মাকদিসি, আব্দুল মাহাসিন আল- ওয়াসিতি রাহিমাহুমুল্লাহ আজমাঈন থেকে রাফেজিদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে যুক্তি ও বর্ণনা পাওয়া যায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় যা এখানে উল্লেখ করা হলো না।
শিয়াদের আক্বীদা ও মতবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ করার চেষ্টা করলাম।
উপসংহারঃ
-------
আমি আমাদের সবাইকে অনুরোধ করবো - সহীহ মুসলিম শরীফে উল্লিখিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এই দু’আটি পাঠ ও অনুসরণ করতে। এই দুআ’র বরকতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে মতভেদের প্রশ্নে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন ইনশা-আল্লাহ।
.
اللَّهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنْ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
.
“হে আল্লাহ! আপনি জিব্রীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভূ এবং পৃথিবীর স্রষ্টা; আপনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সব বিষয়েই সুবিদিত আছেন। আপনার বান্দাগণ যেসব বিষয়ে পরস্পর মতভেদ করছে, আপনি তার সুমিমাংসা করে দিন। যেসব বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তন্মধ্যে আপনার অনুমতিক্রমে যা সত্য আমাকে সেদিকে পথপ্রদর্শন করুন। নিশ্চয়ই যাকে ইচ্ছা আপনি সঠিক পথপ্রদর্শন করে থাকেন।“
(সহীহ মুসলিম শরীফ - ১২৮৯)
গ্রন্থ সহায়িকাঃ
-------
১। শিয়া বিলিফ, শাইখ খালিদ মাহমুদ, পিএইচডি, ইসলামিক একাডেমি অফ ম্যানচেস্টার
২। হিদায়াতুস শিয়া, শাইখ খালিল আহমেদ শাহারানপুরি
৩। তুহফাহ ইতনা ‘আশারিয়্যাহ, শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভি
৪। শিয়া কায় হাজার সাওলন কা জাওয়াব, শাইখ হাফিয মুহাম্মাদ মিইয়ানওয়ালউয়ি
৫। আকাইদুস শিয়া, মুহাম্মাদ ফারুক
৬। আয়াত বাইয়্যিনাত, শাইখ সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ মাহদি আলি খান
৭। মাসালা তাহ্রিফায় কুর’আন পুর বিনরি টাউন কা তাহকিকি ফাতওয়া, মুফতি মুহাম্মাদ ইনামুল্লাহ
৮। ইরশাদুস শিয়া, শাইখ মুহাম্মাদ সরফরাজ খান, মাকতাবাহ সাফদারিয়্যাহ
৯। খোমাইনিজম অর ইসলাম, শাইখ জিয়াউর রাহমান ফারুকি
১০। শিয়াইজম এক্সপোজড, মাজালিসুল উলামা, সাউথ আফ্রিকা
১১। সুন্নি স্ট্যান্ড পয়েন্ট অন শিয়াস, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত, ফর সুপ্রিম কোর্ট অফ পাকিস্থান
১২। দ্য ট্রুথ এবাউট শিয়াইজম, মাজালিসুল উলামা, সাউথ আফ্রিকা
১৩। শিয়া মাযহাব কায় চালিস বুনিয়াদি আকিদা, শাইখ আব্দুস সাকুর লখনৌভি
১৪। সুন্নি শিয়া মুত্তাফাকাহ তারজামাহ কুর’আন কা আযিম ফিতনা, শাইখ কাজি মাযহার হুসাইন
১৫। শিয়া ইতনা আশারিয়্যাহ অর আকিদাহ তাহ্রিফি কুর’আন, শাইখ মাঞ্জুর নোমানি
১৬। শিয়া মাযহাব, শাইখ আশিক ইলাহি বুলন্দশহরি
১৭। তাইদ মাযহাব আহলুস সুন্নাহ তারজামাহ রাদ রাওাফিদ, ইমাম মুজাদ্দিদে আলফে সানি
১৮। আসসাওয়াইকুল মুহ্রিকাহ, শাইখ ইবন হাজার আল-হাইতামি
লিখেছেন:
#জাভেদ কায়সার

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


