“আমি তো একটা সুন্দর শৈশব পাই নাই? দুলালদা যখন তার ওই জিনিসটা আমার মুখে ঢুকায়ে দ্যায় তখন আমি অ্যাতো ছোটো, আমার মুখ অ্যাতো ছোটো, যে ওটা আঁটে নাই আমার মুখে। আমার ভালো লাগছিলো না খারাপ লাগছিলো মনে পড়ে না। তবু আমি তো কাউকে বলতে পারি নাই?”
- ভালো লাগছিলো না খারাপ লাগছিলো!? ভালো লাগার সুযোগ আছে তাইলে ৫০% এই বলতে চাচ্ছিস?
“এসব আমি আমার চারপাশে দেখে আসতেছি ছোটোবেলা থেকে। স্কুলে যাওয়ার আগে থেকেই হবে। এসব জিনিস বড়দের ভালো লাগে, সেই জ্ঞান আমার হইছিলো।”
- তাইলে ওই জিনিস ভালো লাগাইতে হবে এই জ্ঞানও নিশ্চয়ই দিছে কেউ তোকে। তোর মনে আছে বা নাই।
“তা তো দিছে। ওরাই ওই জ্ঞান দিছে। ওই টাইপের দাদারা। নানান কিছু দ্যাখাইছে, নানান কিছু করতে শেখাইছে, যখন আমার সেসব দ্যাখার বা শেখার কথা না।”
- দুলালদা কে?
“ছিলো এক দুঃসম্পর্কের দাদা। আমাদের বাড়ি কাজটাজ করতো।”
- বাবা-মা কে বলিস নাই?
“এসব বাবা-মা কে বলার জিনিস না সেটা আমি শিখছিলাম। মা বা বাবারে ওসব কইতে গ্যালে বাবা হয়তো বকতো, মারতো, শেষমেষ মানা করতো ওসবের কাছে না যেতে। আমি কই নাই তার আরও কারণ থাকতে পারে, হয়তো আমি চাচ্ছিলাম ওসব দেখতে।”
কান্না করে করে এই কথাগুলো যে আমাকে বলেছিলো, সে নারী নয়, পুরুষ। হ্যাঁ, ভিক্টিম একজন পুরুষ এবং ষোলো কোটি লোকের দেশে নিশ্চিতভাবেই এমন ভিক্টিম আরও আছে। আপনার কোনো মেয়েবাবু নাই, শুধু ছেলেবাবু আছে, তাই পেডোফাইল বা শিশুকামীদের নিয়ে আপনার দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই, এমন কোনো ভাবনা থাকলে সেসব ঝেড়ে ফেলে দিন। আপনার শিশুসন্তানকে ভালো আর খারাপ স্পর্শ ও ভালো আর খারাপ আদর চেনান, তার শরীরের সীমা চেনান, তাকে বিশ্বাস করুন, তার অভিযোগে গুরুত্ব দিন, সে তার মামা-চাচা-কাজিন-খালা-ফুপু এবং যাবতীয় যেকোনো মানুষের কাছে যেতে না চাইলে কেন যেতে চায় না একটু খোঁজ করুন। সন্তানকে নির্ভরতার জায়গা দিন, তাকে জানান যে বাবা-মা কে ভয় পাওয়ার বা কোনো কিছু না বলার কিছু নেই। একজন মানুষের সারা জীবন ক্যামন হবে সেটা ডিসাইড করে দেয় তার শৈশব, এটা আমার কথা না, সাইকোলজিস্টরাও তাই বলেন। একটু সচেতন হন, বিশ্বাস করে শুনুন বাচ্চার কথা, জন্ম থেকেই একটা বাচ্চা মিথ্যে বলা শুরু করে না, সে আপনার প্রিয় আত্মীয়কে ছোটো করতে এমন করছে ভাবার কিছু নেই, আপনার প্রিয় আত্মীয় একজন অমানুষ হতেই পারে। একই সাথে আপাতদৃষ্টিতে সন্দেহজনক নয় এমন যাদের সাথে শিশুসন্তান মিশছে বা মিশতে পছন্দ করছে তাদের সম্পর্কেও খোঁজ রাখুন। বাচ্চার সাথে তাদের কী কথাবার্তা হয় জানুন, কেন এটা করবেন সেটা লিখছি পরের প্যারায়।
আপনি হয়তো চালডাল, বেতন, বউয়ের বুকের ওড়না বা বরের সুন্দরী পিএস এর বাইরে কিছুর খোঁজ রাখেন না, কিন্তু এসব শিশুকামীদের হাতে পড়লে কিংবা যৌনতার বিষয়বস্তু আপনার দুই থেকে ছয় বছরের বাচ্চার কাছে সহজলভ্য হলে তার মধ্যে অস্বাভাবিক যৌন আচরণ দ্যাখা দিতে পারে, যার ইংরেজী টার্ম হচ্ছে sexual behavior problem। যে উদাহরণ আমি শুরুতে দিয়েছি, সেটায় আমার ধারণা অ্যাবিউজ ও যৌনতার সহজলভ্যতায় ভিক্টিমের child sexual behavior problem থেকে থাকবে, যার অন্যতম একটি কারণ চাইল্ড অ্যাবিউজ বা মোলেস্টেশন, পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কারণ আছে। এতে আপনার শিশুসন্তানের মধ্যে অপরিপক্ব বয়সেই অস্বাভাবিক যৌন আচরণ দ্যাখা দিতে পারে আর সেই সঙ্গে সারা জীবনের মানসিক যে ক্ষত সে বয়ে বেড়াবে সেটা তো আছেই। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়সে বড় কেউ যদি খুব ‘ভালোবেসে’, নরম গলায়, কোলে বসিয়ে, গল্পচ্ছলে আপনার শিশুকে অস্বাভাবিক যৌনতার সাথে পরিচয় করায়, সেটাও চাইল্ড অ্যাবিউজ এবং এতে আপনার সন্তানের উপরোক্ত মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি সে শারীরিক ভাবে ক্ষতির শিকার নাও হয়, তবুও। (এখানে স্বীকার করে রাখি, এই মানসিক সমস্যা নিয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই, আমি শুধু ধারণা রাখি নিজস্ব পড়াশোনা থেকে। আমি যেটুকু বুঝেছি সেটুকু সাদা বাংলায় লিখলাম, মেডিক্যাল সায়েন্সের লোকজন ভালো জানবেন।)
যে সময়টুকুতে আপনি আপনার শিশুসন্তানের সাথে কোনো কিছু আলোচনা করছেন না কারণ সেসব অ্যাডামের নিষিদ্ধ আপেল এবং ভাবছেন আপনার সন্তানের বয়স হয়নি এসব আলোচনার, ততক্ষণে আপনার আত্মীয়স্বজন, ভাগ্নেভাগ্নী, ভাইপোভাইজি, কাজের মেয়ে কাজের ছেলে সেই দায়িত্ব পালন করছে সেই সম্ভাবনা প্রচুর। সঠিক শিক্ষার বিকল্প কিচ্ছু হতে পারে না, আপনার সন্তানের গাইড আপনিই হবেন এবং সন্তানের ভালো স্কুল, ভালো পোশাক, রোগমুক্ত শরীর, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো বিয়ে নিশ্চিত করার সাথে সাথে শৈশব থেকেই তার মানসিক সুস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করবেন এই আশা করি। আপনাদের জন্য শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩