সত্যিকারভাবে ভালবাসে এমন মানুষগুলা দুইভাবে তাদের ভালবাসার অনুভূতি বিপরীত লিঙ্গের মানুষটার কাছে প্রকাশ করে। প্রথম প্রকাশ যারে বলে, প্রথমবারের মত জানানো। কিছু মানুষ বুঝে ফেলে তাদের ভালবাসার আহবান সাদরে গ্রহণ করবে অপর মানুষটা। ওই মানুষটার ভাবভঙ্গি বুঝিয়ে দেয়। ব্যাপারটা অনেকটা ফুটবল খেলার মত। একজনের পায়ে বল, সে অন্যজনকে বলটা পাস করে। অন্যজন তখন পাস গ্রহণ করে, আবার পাস ফিরিয়ে দেয় প্রথম জনের কাছে। সে আবার পাস নেয়, পুনরায় বল পাস করে। এভাবে দেয়ানেয়ার মাধ্যমে বুঝা যায় দুইজনই খেলতে আগ্রহী। প্রথম যে খেলাটা শুরু করেছিল তার মনে আর কোন ভয় থাকেনা। সামনে গোলপোস্ট, ভালবাসার মানুষটাও খেলতে চায়। তখন সে কোনদিকে না তাকিয়ে গোলটা দিয়ে দেয় খুশি মনে। ভালবাসার মানুষকে পেয়ে যায়।
এতক্ষণ বলছিলাম আত্নবিশ্বাসী কোন মানুষের কথা। এদের আত্নবিশ্বাস থাকে। থাকার কারণও আছে বহু। দেখতে সুদর্শন, পড়ালেখায় পারদর্শী, স্মার্টনেস, পাশাপাশি অন্যান্য যোগ্যতা থাকলে আত্নবিশ্বাস থাকবেই। সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে পাঠায়। এটা তাদের ক্রেডিট নয়, আবার সৃষ্টিকর্তার ক্রেডিটও নয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে সব মানব ভ্রুণই সমান।
কিছু মানুষ দেখতে সুদর্শন না, পাশাপাশি যোগ্যতারও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। অথবা দেখতে সুদর্শন না হলেও অন্যান্য যোগ্যতার ঘাটতি নেই। তা যাইহোক। এদের মাঝে আত্নবিশ্বাসের অভাব থাকে। অনেক বেশি অভাব থাকে, আবার বেশিরভাগই নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। "ওদের মন আছে, ওদের মধ্যেও প্রচন্ড ভালবাসা আছে" কথাটা বলতে ইচ্ছা হয়না। সস্তা প্রকৃতির বচন একেবারেই। সবাই জানি এসব। ওরা বল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে খেলার আশায়। পাস দিবে কোন একজনকে। ভয় পায়। প্রচন্ড রকমের না, ভয়ংকর রকমের ভয়। তবে আত্নার অবাধ্য কেউ হতে পারেনা, আত্নার কথা শুনতেই হয়। পছন্দের মানুষটার কাছে তার আবেগ অনুভূতিগুলা প্রকাশ করে। প্রকাশ করে তবে ধরণটা হয় ভিন্ন। ভয়, হীনমন্যতা, না পাওয়ার আশা সবকিছু মিশিয়ে প্রকাশ করে। এই প্রকাশের ভাষায় কোন অধিকার বা ন্যায্য চাওয়া থাকেনা। দয়া বা অনুগ্রহ পাওয়ার আশা থাকে। থাকবেই না কেন? ভালবাসার মানুষটা ছাড়া নিজের অস্তীত্ব কল্পনা করাও দুঃস্বপ্নের পর্যায়ে চলে গেছে। যেখানে অধিকার খাটে না সেখানে অনুগ্রহই কাম্য। তবুও না এরা একটু মিরাকলের আশা করে। সফলদের দেখে দেখে ক্লান্ত এরা। মিরাকল বলেও তো কিছু থাকে। সৃষ্টিকর্তার সহায়তা বলেও তো কিছু থাকে। এসব আশা।
মিরাকলও ঘটেনা এদের ক্ষেত্রে। সত্যিই ঘটেনা। কষ্ট পায় না এরা। কষ্ট মানুষ তখনই পায় যখন আশা করে আশাহত হয়। আশা করতেও তো ভয় পেতো এসব মানুষ। সরাসরি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যায়। একবার নিজেকে দোষে, একবার সৃষ্টিকর্তাকে দোষে। তার স্বয়ং সম্পূর্ণ না হয়ে আসার পেছনে কারোই হাত নেই। সে শুধু জানে তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে। সে চুপচাপ হয়ে যায়, ভাবে একা থাকবে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। নিজেকে কষ্ট দিবে, নিজেকে কষ্ট দেয়ার মাঝেও এক ধরনের অদ্ভূত আনন্দ আছে। সেই চাওয়াটাও পূর্ণ হয়না। স্বাভাবিক হাসিখুশি হয়েই বাঁচতে হয় তাদের। মরে যায় শুধু স্বপ্নগুলা। স্বপ্নরাই মরে....