somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Mythology(3): The First Astronut In The World !

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীসের ডেলফি শহরের মন্দিরের গায়ে অনেক হায়ারোগ্লাফি (খোঁদাই করা গ্রীক বাক্য) আছে , যার মাঝে একটি হল ,"Τίποτα δεν υπερβαίνουν" । উচ্চারণ , Tipota den ypervainoun যা ইংরেজীতে অনুবাদ করলে দাড়ায় Nothing In Excess অর্থাত্‍ কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয় ! কি ? লাইনটা খুব চেনা চেনা লাগে তো ? হুম । এটা আমরা ছোট কালে Idoms & phrase এ পড়েছিলাম । কিন্তু এর পিছনের ইতিহাসটা কি জানা আছে আমাদের ? অনেকেরই আছে আবার অনেকেরই নেই । তাই , এটা নিজেই এই নোট টা ।
.
প্রাচীন গ্রীসে ক্রীট নামে এক নগরী ছিল । সেখানে একটা গোঁলকধাঁধাঁ ছিল যা মিওনটর নামকে এক অর্ধমানব অর্ধষাড় কে আটকে রাখার জন্য তৈরী করা হয়েছিল । গোঁলকধাঁধাঁটি এমন ভাবে তৈরী যে একবার প্রবেশ করলে বেরুবার আর কোন উপায় নেই । বিশ্বের সবথেকে জটিল এই গোঁলকধাঁধাঁটি তৈরী করেন পৃথিবী সবথেকে বড় প্রকৌশলী এবং স্থপতি ডিডালুস । এই গোলকধাঁধাঁয় সুদর্শন রাজপুত্র থেসিয়াস এবং আরো ১৩ জনকে বন্দী করে রাখা হয় ঐ মিওনটরের হাতে মেরে ফেলার জন্য । এর পিছনের কাহিনী অন্য এক পোষ্টে বলা যাবে । আসল ঘটনায় আসি । বন্দী রাজপুত্র থেসিয়াসকে ক্রীটে এসে যখন জাহাজ থেকে নামানো হল তখন ক্রীটরাজকন্যা আরিয়াদনে প্রথম দর্শনেই তাকে ভালোবেসে ফেলেন !
.
এরপর থেকে রাজকন্যা আরিয়াদনের একমাত্র ভাবনা হল , কি করে এই মৃত্যুফাঁদ থেকে প্রিয়তমকে উদ্ধার করে তার কাছে রাখতে পারেন । রাজকন্যা জানতেন , কেউ যদি এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারে তবে সে হচ্ছে ঐ গোঁলকধাঁধাঁর নির্মাতা ডিডালুস । তাই তিনি ডিডালুসের শরণাপন্ন হলেন এবং তাকে কাকুতি মিনতি করে রাজপুত্রকে মুক্ত করার একটা উপায় বের করে দিতে অনুরোধ করলেন । কিন্তু ডিডালুস প্রথমে তার অনুরোধে সাড়া না দিলেও রাজকন্যার চোখের পানি এবং আত্নহত্যার হুমকি তে রাজি হয়ে গেলেন । অতঃপর তিনি রাজকন্যাকে একটা উপায় বাতলে দিলেন এবং সেই পদ্ধতিতেই রাজপুত্র থেসিয়াস ঐ গোঁলকধাঁধাঁ থেকে বেরুতে সক্ষম হন এবং রাজকন্যার সাথে ক্রীট ছেড়ে পালিয়ে যায় । বলুন দেখি উপায় টা কি ছিল ;-) ? এটাই আজ অবধি স্বীকৃত সর্বকালের সেরা গোঁলকধাঁধাঁ থেকে বেরুবার উপায় ;-) ! রাজকন্যা আরিয়াদনে থেসিয়াসকে একটা সোনার সুতার টোটা দেন এবং বলে দেন গোঁলকধাঁধাঁয় প্রবেশের মুখ হতে যেদিকেই যাবে এই সুতা ছাড়তে ছাড়তে যেন যায় তাহলে ঐ সুতার চিহ্ন দেখে আবার প্রবেশদ্বারে ফিরে আসতে পারবে । এবং অবশ্যই যেন গোঁলকধাঁধাঁয় মোড় নেয়ার ক্ষেত্রে সবসময়ই ডান দিকে মোড় নেয় !
.
রাজকন্যা আরিয়াদনে এবং রাজপুত্র থেসিয়াসের পালিয়ে যাবার খবর শুনে ক্রীটের রাজা মিনস এর বুঝতে বাকি রইল না যে , এই ঘটনায় একমাত্র ডিটালুসের হাত রয়েছে । কারণ তার তৈরী গোঁলকধাঁধাঁ থেকে মুক্তির উপায় তার ছাড়া কারোই জানার কথা নয় । তিনি ডিডালুসের উপর ভীষণ ক্ষীপ্ত হন এবং তাকে আর তার ছেলে ইকারস কে তারই তৈরী গোঁলকধাঁধাঁয় নির্বাসন দেন । এরপর তিনি গোঁলকধাঁধাঁর প্রবেশদ্বারে প্রহরী বসান যাতে তারা পালাতে না পারেন । কিন্তু ডিডালুস এতে মোটেও বিচলিত হলেন না । তিনি এটা সাময়িক দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়ে এর থেকে বেরুবার উপায় ভাবতে থাকেন । দিনের পর দিন , রাতের পর রাত ভাবতে ভাবতে তিনি তারই তৈরী এই মৃত্যুফাঁদ থেকে বেরুবার উপায় বের করে ফেলেন !
.
তিনি তার ছেলে ইকারাসকে বলেন ,"নদীপথে বা স্থলপথে হয়ত পলায়ন সম্ভব নয় , কিন্তু আকাশ আর আকাশপথ রয়ে গেছে মুক্ত !" এই ভাবনা থেকে তিনি তৈরী করলেন দুই জোড়া পাখা । তারপর মোম দিয়ে সেই পাখা নিজের এবং ছেলে ইকারাসের শরীরে জোড়া লাগিয়ে দিলেন । এখন শুধু উড়বার পালা ! উড়ে যাবার আগে তিনি ইকারাসকে বললেন ,"হে আমার পুত্র শোন , সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মাঝামাঝি পথে যেও । খুব উপর দিয়ে উড়না আবার খুব নিচে দিয়েও নয় ।" ইকারাস এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন ,"বেশি উপর দিয়ে গেলে সূর্যের তাপে মোম গলে গিয়ে পাখা খসে পড়বে আর খুব নিচু দিয়ে গেলে জাহাজের মাস্তুলে লেখে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তাই মাঝামাঝি পথে যাওয়াই ভালো ।" অতঃপর তারা উড়াল দিল মুক্তির উদ্দেশ্যে !
.
ডিডালুস এবং ইকারাস খুব স্বচ্ছন্দে গোঁলকধাঁধাঁ থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়তে থাকে । ডিডালুস মাঝামাঝি পথ দিয়ে স্বচ্ছন্দ গতিতে উড়ে যেতে থাকে । কিন্তু বিপত্তি বাধালো ইকারাস ! উড়ে যাবার আশ্চর্য ক্ষমতা পেয়ে সে ক্রমেই উপরের দিকে উঠতে থাকে ! পিতা ডিডালুস তাকে বারবার নিচে নামতে বলেন । প্রায়ই দেখা যায় বৃদ্ধের হিতোপদেশ তরুণের কর্ণপাত করে না । যার ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভাগ্য ! তেমনি ইকারাস ও এমন অসীম ক্ষমতার স্বাধ পেয়ে তার সীমা ভুলে গিয়ে পিতার নিষেধ বাক্য সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ক্রমে উপরের দিকে উঠতে থাকে ! ফলে একসময় সূর্যের তাপে মোম গলে গিয়ে ইকারাসের পাখা খসে পড়ল ! অনেক উঁচু থেকে সমুদ্রে পতনের ফলে সেখানেই তার সলিল সমাধী ঘটল ! আর ডিডালুস দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সিসিলি নগরীতে আশ্রয় নেন ।
.
কিন্তু ঠিকই ক্রীটের রাজা মিনস ডিডালুস আর তার পুত্রের পলায়নের খবর পান । তাই তাকে আবার বন্দী করার জন্য তিনি নতুন এক ফন্দী আঁটলেন । তিনি সর্বত্র ঘোষণা করে দিলেন ,"একটি সংক্ষিপ্ত শামুকের মধ্য দিয়ে যে সুতা বের করে দিতে পারবে , তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে ।" কারণ ক্রীটরাজ জানতেন একমাত্র ডিডালুসই এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন । এবং তার এই ফন্দী কাজে দিলে । তিনি জানতে পারলেন , ডিডালুস এখন সিসিলি নগরীতে অবস্থান করছে । তাই তাকে হত্যার জন্য সিসিলি নগরী আক্রমণ করেন । এদিকে সিসিলির রাজাও চান না ডিডালুসের মত মেধাবীকে হারাতে , তাই দুই রাজার মাঝে ভীষণ যুদ্ধ বাধল । যুদ্ধে অনেকের মৃত্যু হল , মৃত্যু হল ক্রীটরাজ মিনসেরও !
.
বিশ্বের প্রথম নভোচারীকে রক্ষার জন্য এক রক্ষক্ষয়ী সংগ্রাম হয় , কিন্তু আফসোস , তার একমাত্র পুত্র ইকারাস আত্নগর্বে স্ফীত হয়ে আলিঙ্গন করে শীতল মৃত্যু । তাই কোন মানুষেরই সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় ! অতিরিক্ত দম্ভ মানুষের পতনের কারণ । আর তাই তো গ্রীকরা বিনয়কে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×