স্বপ্ন দিনের কথোপকথন!
বই পড়ার ক্ষেত্রে আমি নিজেকে সব সময়ই ভাগ্যবান মনে করি। বই পড়ার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কেউই আমাকে পথ দেখায় নি, তার পরেও কেমন করে যেন ভালো ভালো অনেক গুলো বই পড়ে ফেলেছি। তৃতীয় শ্রেনীতে পড়া অবস্থাতেই পেয়েছিলাম আলেকজান্ডার দ্যূমার "থ্রী মাস্কেটিয়ার্স"। সেবা'র সাথে পরিচয় তখন হতেই। এর পরেই হাতে আসে "লা মিজারেবল"; অবশ্য ভারতীয় একটা অনুবাদ- পাতলা নিউজপ্রিন্টে ছাপা বই। আমার এক বন্ধুর কাছ হতে ধার নিয়ে আর ফেরত দিই নি! বই পড়ে যেমন কেউ কখনো দেউলে হয় নি, তেমনি বই চুরি করে ও কখনো রাখা যায় নি। বছর চারেক পর আরেক বন্ধু (!)আমার অসম্ভব প্রিয় ঐ বইটা হাপিস করে দেয়! পরে অবশ্য সেবা'র অনুবাদটাও পড়েছি এবং এই বই পড়ে প্রিয়তে রাখে নি, এখন পর্যন্ত এমন একটা মানুষ ও পাই নি।
সাহিত্যকে যদি জীবনের ছাপচিত্র বলি, তবে সাহিত্যিক নিঃসন্দেহে একজন চিত্রশিল্পী। লা মিজারেবল (Les Misérables) তেমনি এক মহত্তম সৃষ্টি। ফরাসী ঔপন্যাসিক ও কবি ভিক্টর হুগোর (ভিক্তর ইউগো/ Victor_Hugo) এর অমর স্রষ্টা। ফরাসী বিপ্লবের পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাসে উঠে এসেছে ততকালীন ফ্রান্সের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি এবং ফরাসী সমাজের ভালো-মন্দ, নীতি-নৈতিকতা, দর্শণ, ধর্ম সহ মেহনিতী মানুষের দুঃখের দিনরাত।
Misérables অর্থ হতভাগ্য। সত্যিকার ভাবে, এক হতভাগ্যের জীবন কাহিনীই বলেছেন হুগো। উপন্যাসের মূল চরিত্র জাঁ ভালজাঁ (Jean Valjean)। তার জীবনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনা-দূর্ঘটনা নিয়েই কাহিনীর অগ্রযাত্রা। ক্ষুধার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মাত্র একটুকরো রুটি চুরির অপরাধে ১২ বছরের জাঁ ভালজাঁ ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হয়। তুলনের জেলে আমানুষিক দন্ডভোগ কালে বারেবারে পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে এই দন্ড বাড়তে বাড়তে ১৯ বছরে গিয়ে দাঁড়ায়। এই সুদীর্ঘ ১৯ বছরের জেলজীবন শেষে জাঁ ভালজাঁ হয়ে ওঠে সনাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এক অমানুষ।
রাতে যে পাদ্রী তাঁকে আশ্রয় দেয় তার বিড়ি হতেই সে চুরি করে ধরা পড়ে। কিন্তু, পাদ্রীর মহানুভবতায় সে ছাড়া পায়।
এই ঘটনায় আমূল বদলে দেয় তাঁকে। আইনের চোখে সারাজীবনের জন্য অপরাধী জাঁ ভালজাঁ পরিচয় লুকিয়ে নাম নেয় ম্যাদেলীন। আপন শ্রমে হয়ে ওঠে ফ্যক্টরী মালিক এবং শহরের মেয়র। শান্ত জীবনে তখনি ঘনিয়ে আসে মেঘ। শহরে নতুন আসা পুলিশ ইন্সপেক্টর জাঁভার্ট (Javert) চিনে ফেলে ভালজাঁকে।
পালাতে হয় ভাঁলজাকে। সত্যিকার অর্থেই শুরু হয় ভাঁলজা-জাঁভার্ট ইদুর-বিড়াল খেলা! জাঁভার্ট যেখানে কঠোর ফরাসী অনুশাসনের মূর্ত প্রতীক, সেখানে ভাঁলজা মানবিকতাবোধে ঋদ্ধ এক অসমসাহসী মানুষ। পালানোর সময় ভাঁলজা সাথে নিয়ে যায় ফন্টিনের (Fantine; ভালজাঁর ফ্যাক্টরির কর্মচারী যাকে সে ভালোবাসতো) আগের প্রেমিকের সন্তান কোসেতকে (Cosette)।
প্যারিস শহরের এখানে ওখানে লুকিয়ে কাটে পরের দিন গুলো। কিন্তু, পরোপকার থেমে যায় না। জাঁভার্টও খুঁজতে থাকে। কোসেত বড় হয়। এক রাজতন্ত্রবিরোধী বিপ্লবী মরিসের (Marius) প্রেমে পড়ে। ভাঁলজার পছন্দ না হলে ও শেষ পর্যন্ত মেয়ের সুখের কথা ভেবে মেনে নেয়। এদিকে, বিদ্রোহ চলাকালে বিদ্রোহীদের হাতে আটক জাঁভার্টকে বাঁচিয়ে দেয় ভালজাঁ। পরে বিদ্রোহে আহত মরিসকেও জানবাজি রেখে বাঁচায়। কিন্তু, শেষ মূহুর্তে জাঁভার্টের হাতে ধরা পড়ে যায়। তখন, ভালজাঁ নিজের প্রানের বিনিময়ে ভিক্ষা চায় মরিসের জীবন।
আশ্চর্য হয়ে যায় জাঁভার্ট। মানসিক দোটানায় পড়ে ছেড়ে দেয় ভালজাঁকে আর অতীত জীবনের গ্লানি সইতে না পেরে সীন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। শেষ জীবনটা কোসেত আর মরিসের সান্নিধ্যে ভালই কেটে যায় ভালজাঁর।
সুদীর্ঘ ৫ ভলিউমে প্রকাশিত এই উপন্যাসের সব কথা হয়তো এত অল্প কথায় বোঝানো সম্ভব নয়, তবে কিছুটা হলে আভাস পাওয়া যায় বলে লিখে দিলাম।
প্রকাশের পরই এটি প্রচন্ড সাড়া ফেলে ফরাসী বোদ্ধা মহলে। এ নিয়ে একটা গল্প ও শুনে ছিলাম। সত্য-মিথ্যা জানি না। গল্পটা হলো- লা মিজারেবল বইটা প্রকাশের সময় হুগো ফ্রান্সের বাইরে ছিলেন। বইয়ের কাটতি কেমন জানতে তিনি প্রকাশককে চিঠি লিখেন কাগজে শুধুমাত্র একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) দিয়ে। আর প্রকাশক জবাব দেন চিঠিতে একটা বিরাট আশ্চর্য্যবোধক চিহ্ন (!) লিখে। এটাই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট চিঠি।
যাই হোক, অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এ বই। নির্মিত হয়েছে অন্ততঃ তিন ডজন চলচ্চিত্র।
তেমনি একটি চলচ্চিত্র ১৯৯৮ সালের Les_Miserables । লিয়াম নিসন, উমা থুরম্যান অভিনীত এই চলচ্চিত্রে সুবিশাল মূল কাহিনীর অনেকাংশই উঠে এসেছে।
রেপিডশেয়ার দিয়ে ডাউনলোড করুন- (WINRAR দিয়ে extract করুন)
পার্ট-১
পার্ট-২
পার্ট-৩
পার্ট-৪
পার্ট-৫
পার্ট-৬
পার্ট-৭
পার্ট-৮
যাঁরা দেখেন নি, তাঁরা দেখে ফেলুন; আর যাঁরা পড়েন নি (হতভাগ্য !) তাঁরা তাড়াতাড়ি পড়েন নিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৩২