somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চলচ্চিত্র- “দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড্‌ পাজামাস্‌” (The Boy in the Striped Pyjamas)।

০৮ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট ছেলে ব্রুনো (Bruno)। জাতিতে জার্মান। বয়স আট বছর। বড় বোন, বাবা-মা এই নিয়ে সংসার। বার্লিন শহরে বাস। সময়টা খারাপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, বাবা র‌্যালফ (Ralf) নাৎসী বাহিনীর এসএস(SS) অফিসার। শিশুর মন কী আর যুদ্ধ বোঝে! দলে দলে যুবকেরা যাচ্ছে যুদ্ধে আর ইহুদীদের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে। সেদিকে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। বন্ধুদের নিয়ে বার্লিনের রাস্তায় দৌড়ে হেসে খেলে বেড়ানোই তার আনন্দ। স্বপ্ন তার অভিযাত্রী (Explorer)হবে।

কিন্তু সে আনন্দের দিন শেষ হয়ে আসে। বাবার বদলীর আদেশ আসে। যেতে হবে বহুদুর..... নাৎসী অধিকৃত পোল্যান্ড! নিতান্ত অনিচ্ছায় বন্ধুদের পেছনে ফেলে ব্রুনো পরিবারের সাথে চলে আসে এখানে। গাছগাছালি ঘেরা সুন্দর তাদের নতুন বাড়িটি।

বন্ধু-বান্ধবহীন ব্রুনো বড় একা হয়ে পড়ে। নিজেদের বাড়ি হতে অনেক দূরে কয়েকটা বাড়ি চোখে পড়ে, কিন্তু তার যে বাড়ির ত্রিসীমানার বাইরে পা দেয়া নিষেধ! কী করবে ব্রুনো?

এমনসময় দুই ভাই-বোনকে পড়াবার জন্য শিক্ষক রাখা হয়। ব্রুনোর পছন্দ অ্যাডভেঞ্চারের বই, কিন্তু শিক্ষক পড়ান বিজ্ঞান! ব্রুনো যেন আরো একা হয়ে যায়।

একদিন, কিভাবে যেন খিড়কী দুয়ার খোলা পেয়ে সেখান দিয়ে সে বাইরে চলে আসে। দৌড়ে যেতে চায় ঐ দুরের বাড়িগুলোর দিকে। কিন্তু মাঝপথে বিশাল কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে যেতে হয় তাকে! অবুঝ বালক তো জানে না ঐ বাড়িগুলো আর কিছুই নয়, নাৎসী কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প আর তার নিজের বাবাই এর পরিচালক!

যাই হোক, বেড়ার ওপারে আনমনে বসে থাকা আরেক ছোট্ট ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়, নাম শ্যামুয়েল (Shmuel)। পরনে স্ট্রাইপড্‌ পায়জামা। ব্রুনো এমন অদ্ভুত নামও কখনো শোনেনি, এমন অদ্ভুত ইউনিফর্ম তো দেখেই নি। তবু, তারা দুজনে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলে, কাঁটাতারের বেড়ার এপার-ওপার! দিনে দিনে গাঢ় হয়ে ওঠে সে বন্ধুত্ব। ব্রুনো বেড়ার বাধা পেরিয়ে শ্যামুয়েলের সাথে একসাথে খেলতে চায়। কিন্তু, শ্যামুয়েল বেড়া পেরিয়ে এ পাশে আসতে পারে না। কারন, শ্যামুয়েল ইহুদী!

ব্রুনো অবাক হয়ে যায়! বাড়িতে তার শিক্ষক তাঁকে পড়ান ইহুদী খারাপ, এ মহাযুদ্ধে ওরা জার্মানির শত্রুপক্ষ। কিন্তু, শ্যামুয়েলকে তো তার শত্রু মনে হয় না। বাড়িতে রান্না ঘরে যে ইহুদী বৃদ্ধ পাভেল (Pavel) বসে বসে আলুরকখোসা ছাড়ায় সেও তো শত্রু নয়; বরং ব্রুনো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে পাভেল কী আদর করে সুন্দর ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়! হায় রে ছোট্ট শিশু! বোঝে না, যুগে যুগে যুদ্ধবাজেরা নিজেদের প্রয়োজনেই নিরীহদের শত্রু বানিয়েছে আর যুদ্ধের নেশায় হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছে।

যাই হোক, সেখানেও ব্রুনোর বাবার দায়িত্বের পাট চুকে যায়। চলে যাবার দিন ব্রুনো শেষ বারের মত বন্ধু শ্যামুয়েলের সাথে দেখা করতে যায়। এবার সে ঠিক কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভেতরে চলে যায়। স্বাচ্ছন্দে চলার জন্য নিজের পোশাক ছেড়ে শ্যামুয়েলের কাছ হতে ধার করে পরে ফেলে স্ট্রাইপড্‌ পায়জামা! এমন সময় ক্যাম্পের সবাইকে টেনে নিয়ে জড়ো করা হয় একটি ঘরে। ব্রুনো ভাবে, বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির হাত হতে বাঁচাতেই বুঝি সবাইকে এভাবে জড়ো করা হয়েছে! বোকা শিশু! কেমন করে বুঝবে, বাবার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়া মানে হলো, ক্যাম্পের বাসিন্দাদেরও জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া! কেমন করে সে বুঝবে, এ ঘরের নাম "গ্যাস চেম্বার" (Gas Chamber)! যখন বুঝলো, তখন সবার গা হতে স্ট্রাইপড্‌ পায়জামা খুলে নিয়ে চেম্বারের দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, বাড়িতে ব্রুনোর খোঁজ পড়ে গিয়েছে। খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত যখন বাবা চেম্বারের দরজায় পৌঁছেছে, ততক্ষনে সব শেষ। দরজার কাছে পড়ে আছে শুধু শত শত স্ট্রাইপড্‌ পাজামাস্‌! বেড়ার ওপাশে পরে থাকা ব্রুনোর ছেড়ে যাওয়া পোশাক হাতে নিয়ে মা এলসার (Elsa) আর্তনাদের মধ্য দিয়েই ছায়াছবির যবনিকা পড়ে।

সংক্ষেপে এই হলো The Boy in the Striped Pyjamas চলচ্চিত্রটির কাহিনী। হলোকাষ্টের (The Holocaust) উপর ২০০৮ সালে নির্মিত এ ছবি সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। মূল কাহিনীটি অবশ্য ২০০৬ সালে প্রকাশিত আইরিশ ঔপন্যাসিক জন বোয়েনের The Boy in the Striped Pyjamas নামের উপন্যাস হতে নেয়া হয়েছে। Rapidshare দিয়ে ছবিটি নামাতে পারবেন এখান হতে-

পার্ট-১
পার্ট-২
পার্ট-৩
পার্ট-৪
(Extract করতে WINRAR ব্যবহার করুন)


অফ টপিকঃ এখন যে বিষয়ে কথা বলবো তা চলচ্চিত্রটির রিভিউয়ের অংশ নয়; বরং চলচ্চিত্রটি দেখার সময় আমার মনে জেগে ওঠা একটি খটকা বলতে পারেন। শেয়ার করছি। সেই চল্লিশের দশক হতে হলোকাষ্টের উপর পৃথিবীর নানা ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে আসছে। চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত "The Great Dictator" হতে শুরু করে আজ পর্যন্ত কম করে হলেও হাজার খানেক চলচ্চিত্রের মূল প্রতিপাদ্য ছিল হলোকাষ্ট! কিছুটা ধারনা পেতে পারেন এই লিষ্ট থেকে। গ্যাস চেম্বার দিয়ে লাখো ইহুদী মেরে ফেলা হয়েছে। অনেক ইউরোপীয় দেশেই ইহুদীরা ছিলো অচ্ছুৎ। বারের দরজায় লেখা থাকত- 'Dogs and Jews are not allowed'। কিন্তু, এশিয়া বিশেষ করে আরবে ব্যাপারটা এমন ছিল না। যথেষ্ট সম্মানের সাথেই সেখানে ইহুদীদের শান্তিপুর্ণ সহাবস্থান ছিল। যে ইউরোপ লাখো ইহুদী হত্যা করেছে নৃশংসভাবে, মহাযুদ্ধ শেষে সেই ইউরোপেরই ইহুদী দরদী উথলে উঠলো, কয়েক লাকগ ইহুদীর জন্য বিশাল ইউরোপে কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো না; ঠাঁই মিললো আরব ভূমিতে! আর ইহুদীরা ও ভোজবাজির মত ভুলে গেলো অতীত! কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা ছোট ছোট কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প হতে বেঁচে ফেরা ইহুদীরাই নিরপরাধ গোটা ফিলিস্তীনকেই কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে পরিণত করল মানব ইতিহাসের সর্ববৃহৎ কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে!



এ নিয়ে কিন্তু খুব বেশী চলচ্চিত্র ও নির্মিত হয় নি! খুঁজে পেতে এই তিনটিই পেলাম! কেমন করে মানুষ এত সহজে অতীত ভুলে যায়!

ফিলিস্তীন-ইসরাইল সংকট নিয়ে আজ আমার দুটি কথাই বারে বারে মনে হয়-

১. "ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে, মানুষ ইতিহাস হতে সিক্ষা নেয় না।"
২. "ইতিহাসের মার বড় বড়ো নির্মম, সে কাউকেই ছেড়ে কথা কয় না!"


আমি আজ ইতিহাসের সেই মার দেখবার আশায় আছি। যদি এ জীবনে দেখে যেতে পারি!
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:২৭
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×