somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরও একটি লিখিত পরীক্ষার প্রাক্কালে আমার সার্বিক বিসিএস দর্শন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ হতে প্রায় দুই বছর আগে বন্ধুবর সৌমিত্র আমায় একটা উপদেশ দিয়েছিল।

“ এদেশে বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে একটা সুদীর্ঘ সময়ের ধ্যান। অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষাই এর সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আবেদন করে অপেক্ষা কর, কখন প্রিলি হয়! প্রিলির ফল এলে অপেক্ষা কর, কখন লিখিত পরীক্ষা হয়! লিখিত পরীক্ষার ফল বেরুলে অপেক্ষা কর, কখন ভাইভা হয়! ভাইভা হলে অপেক্ষা কর, কখন চাকরি হয়! প্রার্থনা কর, এর মাঝে যেন সরকার বদলে না যায়, ফলাফলও উলটে যেতে পারে!”

২৮ তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনপত্র জমাদানকালে বন্ধু এই কথাগুলো বলেছিল আমায়। সে সময় মাথা নেড়ে সায় দিলেও বুঝতে পারি নি, কত্টা নিদারুন সত্য কথা ছিল সেগুলো। আজ দুই বছর পরে এসে যখন দেখি আরেকটি বিসিএস লিখিত পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে আছি, তখন বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। বন্ধু এখন সুইডেনে এমএস-পিএইচডি নিয়ে ব্যস্ত আর আমি এখনো তার কথার উপর প্রবল বিশ্বাসে অপেক্ষমান এক ধ্যানী পুরুষ!

রাত পোহালেই কাল সকাল হতে ২৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। বুকে অনেক বল সঞ্চয় করে বিকেলে ম্যানেজারের কাছে ছুটির আবেদন জানাতেই আঁতকে উঠলেন তিনি। ‘এতদিন ছুটি দিলে অফিস চলবে কী করে?!’ (অফিসের কাছে আমি এত গুরুত্বপূর্ণ জানলে তো মাসে মাসে বেতন বাড়ানোর জন্য চাপ দিতাম!) যাই হোক, এদিক-ওদিক করে কোন রকমে আফসরফা হলো। বিকাল ২টা থেকে অফিস করতে হবে। আমি বলি, ‘তাই সই।’ পরীক্ষা দিয়ে বাসায় গিয়ে যখন তেমন কোন হাতি-ঘোড়া হবে না, তখন অফিসে বসে এসির বাতাস খাওয়াই ভাল। গতবারেও একই কাজ করেছিলাম।

হ্যাঁ ২৮তম বিসিএস এর কথাই বলছি।
যাঁরা সে গল্প পড়েন নি তাঁদের জন্য এই লিংকগুলো দিলাম।
বৌদি সকাশে ২৮তম বিসিএস প্রিলি!

সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেলো রে! বিসিএস পরীক্ষা ও বাদ গেলো না!

~/দুইখান খুশখবর শেয়ার করতে আসলাম।/~

যাই হোক, এক রকম পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হলাম। আজ সেই গল্প।

গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। সুন্দর সকাল। তেজগাঁওস্থ সরকারী কর্মকমিশন অফিসে যথাসময়ে উপস্থিত হলাম। প্রবেশের পথেই বাধা। যারা যারা মোবাইল সাথে করে এনেছি তাদের পার্শ্ববর্তী এক রুমে সেগুলো জমা দিয়ে টোকেন নিতে বলা হল। টোকেন সংগ্রহ করতে গিয়েই সরকারী ঝাঁঝ টের পেলাম। মোবাইল সংগ্রহকারী পিওনের কী ঝাড়ি! ‘মোবাইল আনতে নিষেধ করার পরেও মোবাইল এনেছি কেন?’ মেজাজ খিঁচড়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে সামলে নিলাম। মনে মনে বললাম, “রাইতের গাড়িতে চট্টগ্রাম থেইকা ঢাকা আইছি। মোবাইল কৈ রাইখ্যা আসুম! শ্বশুরবাড়ি? আর মোবাইল না আনলে তোর এইখানে বইসা বইসা পান চিবানির ডিউটিটা কেডায় দিতো, হুনি?”X((

যাই হোক। মোবাইল জমা দিয়েই হল রুমে চলে গেলাম। সেখান হতে রোল নাম্বার অনুসারে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে চলে গেলাম এক একটা বোর্ডের ওয়েটিং রুমে। সেখানে গিয়ে আবার মহা বিরক্ত! একটু পরেই ভাইভা, তারপরেও মানুষের জ্ঞান আহরনের আগ্রহে কোন কমতি নেই। একজনের সাথে আরেকজনের শুধু জ্ঞানগর্ভ আলোচনা! অমুক দেশের রাজধানী, তমুক দেশের প্রেসিডেন্ট! এদিকে, আমি ঘুমে মারা যাচ্ছি; রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ১২টায় গাড়িতে চড়েছি, ঘুম হয়েছে অপরিমিত। এ অবস্থায়, বসে বসে অপেক্ষা করা কতটা বিরক্তিকর, ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। তার উপর, এই জ্ঞানালোচনা কাঁহাতক সহ্য হয়!

ভাগ্য ভালো, প্রথম দিকেই ডাক পেয়ে গেলাম। ঢুকেই দেখি তিন ভদ্রলোক আমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে নিরীহ ছাগল ছেড়ে দিলে ছাগলের অনুভূতি কেমন হয় সেটা সেদিনই প্রথমবারের মত উপলব্ধি করলাম! বসতে বলা হল। বসলাম। এঁদের মধ্যে যিনি কমিশনের সচিব তিনি টুকটাক অনেকগুলো কথা জিজ্ঞেস করলেন, হাসিঠাট্টা হলো। ভয় ডর কেটে গেল। হুট করেই তিনি ১৪ই ডিসেম্বর (শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস)নিয়ে প্রশ্ন করে বসলেন। ‘কেন পালন করি?’ ‘কারা এসব করেছে?’
আমি সাবধানে উত্তর দিলাম।
: Pakistani Army with their local collaborators.
: Local collaborators? Who are they? (একটু অবাক যেন!)
: Rajakar, Al-badar, Al-Shams.
(তাঁকে সন্তুষ্ট মনে হলো না, পুনরায় প্রশ্ন করলেন।)
: Any specific political parties involved there?
(হায় হায় কয় কী! বললাম)
: Jamayat-e-Islami, Muslim League etc. (মনে মনে কই আর আগে বাড়তে দেওন যায় না, সাথে পালটা প্রশ্ন করি) Would I go to specific names?
বুঝলাম তিনি এ রকম আশা করেন নি। পাশের জনের (সম্ভবতঃ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) হাতে আমাকে ছেড়ে দিলেন।
এরপরেই শুরু আবার মেজাজ খারাপ হওয়া!

এই ভদ্রলোক প্রথমেই প্রশ্ন করে জেনে নিলেন আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র কীনা!
তারপরেই একের পর এক মোক্ষম তীর (টর্পেডো বলাই উত্তম) ছুঁড়তে লাগলেন। নমুনা দিচ্ছি।
: কম্পিউটারের আবিষ্কর্তা কে?
: ফেইসবুক কী? এর আবিষ্কর্তা কে?
: ইয়াহু আর জিমেইল এর মধ্যে পার্থক্য কী?
: ফেইসবুক আর ডব্লিউডব্লিউডব্লিউডট –এর মধ্যে পার্থক্য কী?
: টাচস্ক্রীন মোবাইল আর নর্মাল মোবাইলের মধ্যে পার্থক্য কী?


(অফটপিকঃ আপনারা কেউ এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর জানলে জানিয়ে যাবেন)
এই সব প্রশ্নের সাথে আমার সারাজীবনের পঠিত বিষয়ের দুরতম সম্পর্কও খুঁজে না পেয়ে যখন আমি কোনরকমে হাসিমুখে জবাব দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, তখন তাঁর শেষকথা-
: তুমি তো হাতুড়ের মত কথা বলছ! নিজের পড়া বিষয়ের উপর তোমার তো এক্সপার্টের মত জবাব দেয়া উচিৎ!

খানিক ক্ষনের জন্য মনে হচ্ছিল, আঙ্কেলকে কম্পিউটার বিজ্ঞান কী জিনিস, কত প্রকার ও কি কি- সেটা হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়ে আসি। জীবন-জীবিকা এবং ভদ্রতার প্রশ্ন সামনে চলে আসায় নিরস্ত হলাম।

এবার, আমাকে তুলে দেয়া হল, তৃতীয় তথা শেষ জনের (বিসিএস ক্যাডার বলেই মনে হলো) হাতে। মনে মনে আয়াতুল কুরসী পড়ে ভাবছি, এবার ইনি কোন দিক হতে ঘুঁষিটা লাগান!

অপেক্ষা করতে হল না!

প্রথম প্রশ্নঃ "ধরুন, আপনি আপনাদের এলাকায় একটা ‘চপ’ ফ্যাক্টরী করতে চান।"
ভাগ্যিস, চিটাগাঙের বাসিন্দা আমি। পলকেই বুঝে ফেললাম তিনি কিসের (আলুর না ডিমের) চপ বানাতে চাইছেন।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘সোপ ফ্যাক্ট্রী?!’
তাঁর সহাস্য উত্তর, “ঠিক ধরেছেন, চপ ফ্যাক্টরী.....”

পরবর্তী দুই মিনিট কী ফোনটিক(phonetic) টর্নেডো গিয়েছে আমার উপর সে দিকে আর না যাই। দ্রুতই ছাড়া পেয়েছিলাম। রুম হতে বেরুবার সময় ভাবছিলাম, এঁরাই আমাদের শিক্ষা, আমাদের প্রশাসন চালাচ্ছেন.......সত্যি সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ।



ছাত্রজীবন শেষ করে প্রথম বছরের বেকার জীবন আর বিগত দুই বছরের বেসরকারী চাকরি জীবন পার করে এখন একটু ভিন্ন স্বাদ নিতে মন চাইছে। সরকারী চাকরি নামের সেই সোনার হরিণটার পিছু পিছু আমাদের মত কত শত যুবক জীবন নিজেদের ধ্যানী পুরুষে পরিণত করে চলছে তা যদি ঐ উঁচু উঁচু গদিতে বসে থাকা বড় মানুষগুলো বুঝতেন, তাহলে কতই না ভাল হোত।

আমরা এখনি ধ্যানী হতে চাই না। বিয়ে-শাদী করার আগে চোখ খুলে প্রান ভরে দুনিয়া দেখতে চাই। উড়ে উড়ে বেড়াবার এইতো শেষ সময়! এটাও কেড়ে নেবেন তাঁরা!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১৮
৪৭টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×