somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্সকিউজ মি শানু, আপনি কেমন আছেন ?

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কর্দমাক্ত রাজপথটাকে ফর্মুলা ওয়ানের ট্র্যাক মনে করে কেউ একজন সবেগে গাড়ি চালিয়ে গেলেন সামনে দিয়ে । রাস্তায় জমে থাকা নোংরা কাদাপানি ছিটকে এসে লাগল আমার গায়ে । রেগে গিয়ে খ-বর্গীয় গালি দেয়ার আগেই মাইকেল শুমাখার সাহেব লাপাত্তা ।

কোর্ট বিল্ডিংয়ের কোনো এক লাল দালানের বারান্দায় উঠে বসলাম । 'এখানে দলিল লেখা হয়' সাইনবোর্ডওয়ালা টেবিলের পিছনে । প্রায় সাথে সাথেই একজন তরুণী এসে কিছু কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন এখানে ঠিক কি কি লেখা আছে, বুঝিয়ে বলতে । আমি বিনয়ে বিগলিত হয়ে কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে যাই । সুন্দরী রমণীদের যেকোনো অনুরোধ রাখতে আমি বদ্ধ-পরিকর, তাই মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকি কাগজগুলো; যদিও এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞানও আমার নেই । চোরাদৃষ্টিতে তাকাই রমণীটির দিকে । মাথায় ঘোমটা, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা । নাকের ওপাশটায় একটা তিল আছে কি নেই, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি ।

কাগজগুলো ফেরত দিয়ে দেই । রমণী অবাক হন তবে খুব একটা আহত হন না । ভালো দিক । আজকালকার মেয়েরা অল্পতেই আঘাত পেয়ে যায়, শক্ত হওয়া উচিত । পেছন থেকে অচেনা কোনো নারীকণ্ঠের ডাক শুনে রমণী চলে যায় । আমার দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হয় ।

ছোটবেলায় সাঁতার কাটতে জানতাম না, একটু বড় হয়ে দেখি সাইকেলও চালাতে জানি না । এই রমণীটির দেয়া আদালতি কাগজগুলোর গূঢ় অর্থ কী ছিল তাও জানি না । তবে আমি এই তরুণীর নাম চুরি করেছি, আরেকটু কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালে খানিকটা ঘ্রাণও চুরি করা যেত । তরুণীর নাম শাহানা । সুন্দর নাম । খুব ইচ্ছে করছে শাহানাকে ডেকে জিজ্ঞেস করি, তিনি কেমন আছেন । শাহানা নামটাকে ছোট করে ডাকবো 'শানু', ঘনিষ্ঠতা দেখায় যাতে । শাহানা দ্বিধায় ভুগবেন আমি তার পূর্ব-পরিচিত কিনা তা ভেবে । আমি অমায়িক হাসি হেসে সেই দ্বিধা বাড়িয়ে দিবো আরো ।

কিন্তু শেষমেশ হারে মন । উচ্চ আদালতে রায় হয়, কৌতূহলী মন বিকারগ্রস্ত । আমি বরং কোর্ট প্রাঙ্গনে থাকা ময়লা পুকুরটাতে গিয়ে পঙ্কমুক্ত হই । চাঁদের জ্যোৎস্না আছে সুতরাং কলংক থাকতে পারে । আমার গায়ে থাকা যাবে না । আমি চাঁদ নই, আমার জ্যোৎস্না নেই । বড়জোর আমার ভাগ্যে চন্দ্রের প্রভাব থাকতে পারে । পার্কে বসা জ্যোতিষীকাকু হারানাথ এমনটাই বলেছিলেন । তবে হারানাথ কাকু অনেক ভুলভাল গণনা করেন । বলেছিলেন রিয়া আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না । তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর পরদিনই রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গেল । পাখি উড়ে গেছে । The bird has flown away.

আজ আবার হারানাথ কাকুর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হচ্ছে । টিয়া পাখিকে দিয়ে উত্তর খুঁজবো, শাহানা মেয়েটার কোনো ভালোবাসার মানুষ আছে কিনা । টিয়াপাখিটা 'না' লেখা খামটা টকটকে লাল ঠোঁট দিয়ে তুলে ধরবে । এভাবেই দিনটা বেশ ভালো লাগা শুরু হবে । মেসে একবেলার মিল না খেয়ে দামী কোনো সিগারেটের ধোঁয়ায় সেই ভালো লাগাটা উদযাপন করবো না হয় । সৌরভের কাছ থেকে ধার করা রোদচশমাটা চোখে লাগিয়ে ঘুরবো সারা বিকাল, হেঁটে বেড়াবো লেকের পাড় ধরে । রাতে রুমমেটদের সাথে বসে তাস খেলার বদলে একলা ছাদে বসে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে রোমান্টিক হিন্দী গান শুনবো । একটাদিন এতোটা সুখে থাকা কম কথা নয় । এটাই দরকার আমার । এটাই অনেক কিছু ।

পরদিন সকালে উঠেই নেমে যাব চাকরী খোঁজার অভিনয়ে । পকেট-কাটার সুনিপুণ প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস চালাবো শহরের ভীড় করে থাকা জায়গাগুলোতে । শাহানার বাম কানের দুলটা খুলে নিয়ে এসেছি । কাল এটা ফেরত দেয়ার বাহানায় যখন আবার আসবো, তখন জিজ্ঞেস করতে পারবো, "এক্সকিউজ মি শানু, কেমন আছেন আপনি ?"
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×