দেলওয়ার হোসেন সেলিম, কানাইঘাট (সিলেট) থেকে
কানাইঘাটের গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটি বাস্তবায়িত হলে কানাইঘাট থেকে সিলেট মহানগরীর সাথে যোগোযোগ খুবই সহজ হবে। সড়ক পথে দূরত্ব কমবে অন্ততঃ ২০-২৫ কিলোমিটার। কয়েকটি ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক অধিবাসী যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। অর্ধসমাপ্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সময় ও অর্থ দুটির’ই সাশ্রয় ঘটবে। মাত্র ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটি নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন হলে কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক/ দেড় ঘন্টার মধ্যে সিলেট শহরে পৌঁছা যাবে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সর্বদাই পিছিয়ে পড়া কানাইঘাটের সার্বিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কের গাছবাড়ী হতে কুশি নদীর পূর্ব অংশে প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ আরসিসি পাকা করা হয়েছে। প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩টি কালভার্ট নির্মাণ ও ৪৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরো পৌনে ১ কিলোমিটার সড়ক আরসিসি পাকা করার কাজ দু’বছর আগে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কুশি নদীর পশ্চিম অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলা অংশে এ সড়কের মাটির কাজ ও ছোট-বড় কালবার্ট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে এ অংশে পাকার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
৫ বছর আগে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে কানাইঘাট উপজেলা ও জৈন্তাপুর উপজেলার মধ্যবর্তী কুশি নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের নিজস্ব অর্থায়নে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কের সম্পূর্ণ মাটি ভরাটের কাজ কয়েক বছর আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি কানাইঘাটের গাছবাড়ী এলাকার ১৪টি গ্রামের অধিবাসীদের (কথিতঃ ঢাকনাইল রাজের) প্রশংসনীয় উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে মাটির কাজ সমাপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা এই সড়কের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনের পর যথারীতি ভুলে যান সেই প্রতিশ্রুতির কথা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ নির্বাচনী আসনের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার এবং জৈন্তাপুর - গোয়াইনঘাটের এমপি ইমরান আহমদ যৌথভাবে কানাইঘাটের গাছবাড়ী অংশে সড়কটির কাজের শুভ সূচনা করেন। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির দাবীর প্রেক্ষিতে সড়কটির কাজের আংশিক উন্নতি হয়। পরে, বিএনপি ও চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের আমলে সড়কটি এলজিইডি’র অন্তর্ভুক্ত হয়ে আরসিসি পাকার কাজ ও গাড়ী চলাচলের উপযোগী ছোট-বড় ক’টি কালভার্টের কাজ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের গাফলতির কারণে সড়কের কাজ থমকে যায়। এরপর ঢাকনাইল এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়কের কাজ ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। তারপর সড়কের থেমে থাকা কাজ পুনরায় শুরু হয়। কানাইঘাটের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির প্রাণের দাবীর মুখে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটির কাজ শুরু হওয়ায় জনসাধারণের মনে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। এ সড়কের কাজ বছরের পর বছর আলোচিত হলেও বর্তমানে নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ায় জনমনে চরম ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই কানাইঘাট-গাছবাড়ী-সিলেট গাজী বুরহান উদ্দিন সড়কের গাছবাড়ী-সিলেট অংশে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এইচবিবি (ইটসলিং) নির্মাণ করে প্রায় ৮ বছর আগে গাড়ী চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ সড়কটি পিচ করার জন্য প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার কাজ ধীর গতিতে চললেও এখন শেষ পর্যায়ে।
কানাইঘাট বাজার সংলগ্ন স্থানে সুরমা নদীর উপর নির্মাণাধীন জিয়াউর রহমান সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে এবং গাছবাড়ী সড়কটি চালু হলে কানাইঘাট তথা সিলেটের উত্তর পূর্বাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা লাঘব হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। বিশেষ করে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটি বাস্তবায়িত হলে কানাইঘাটের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নবদিগন্তের সূচনা হবে। কেননা কানাইঘাট থেকে সিলেট মহানগরীতে যাতায়াত করতে হলে অন্য ৩/৪টি উপজেলা ঘুরে যেতে হয়। নির্মাণাধীন গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটি সরাসরি সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে মিলিত হবে। এক্ষেত্রে সড়কটির গুরুত্ব আরো বাড়বে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কের গোয়ালজুর গ্রামের পশ্চিমের গ্রাম সমূহ পর্যন্ত আরসিসি পাকা করার কাজ ও ৩টি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে। জনস্বার্থে এ সড়কের কাজ সুুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত অর্থ বছরে কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় রাস্তার অবশিষ্ট পাকাকরণ কাজ ও প্রয়োজনীয় ৪টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। অর্ধ সমাপ্ত গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সরকারের পাশাপাশি ২টি দাতা সংস্থা এ সড়ক পরিদর্শন করে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বর্তমান সরকারের কাছে কানাইঘাটের গাছবাড়ী-হরিপুর সড়কটির অসমাপ্ত কাজ শিগগিরই সুসম্পন্ন করার জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার জনগণ। #
বার্তা প্রেরক,
দেলওয়ার হোসেন সেলিম
কানাইঘাট, সিলেট।
০১৭১০ ২৬৩৭৯৯