তোমরা এমন কোন বিষয়ের আকাংখা করো না যাতে আল্লাহ তোমাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
(সুরা আন-নিসা, আয়াত ৩২)
এ আয়াতে অন্যের এমনসব বৈশিষ্ট্যের প্রতি আকাংখা পোষণ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা মানুষের সাধ্যায়ত্ব নয়। কারণ মানূষ যখন অন্যের চাইতে ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ, বিদ্যা-বুদ্ধি বা শারীরিক সৌন্দর্য-সৌষ্ঠবে হীন বলে মনে করে, তখন স্বভাবগতভাবেই তার অন্তরে হিংসার বীজ উপ্ত হতে শুরু করে। এতে কম করে হলেও তার মনে সেসব বৈশিষ্টমন্ডিত লোকের সমপর্যায়ে উন্নীত হওয়া কিংবা তার চাইতেও কিছুটা উপরে উঠবার বাসনা সৃষ্টি হতে থাকে। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার সে আকাংখা পূরণ হওয়ার মত নয়। কেননা, তা অর্জন করা মানুষের সাধ্যায়ত্ব নয়। যেমন কোন সাধারণ ঘরের সন্তানের পক্ষে দেশের সেরা কোন পরিবারের সন্তান হওয়ার আকাংখা কিংবা কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার আকাংখা কিংবা কারো পক্ষে অত্যন্ত সুশ্রী হওয়ার বাসনা ইত্যাদি। যদি কেউ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে জন্মগতভাবে এসব বৈশিষ্ট্য লাভ করতে না পারে তবে সারাজীবন সাধ্য-সাধনা করেও তার পক্ষে সেটা লাভ করা সম্ভব হবে না। উদাহরণত কোন বেঁটে কদাকার লোক সুন্দর-সুঠাম হওয়ার জন্য কিংবা কোন সাধারণ ঘরের সন্তান মহান সৈয়দ বংশের সন্তান হওয়ার জন্য যদি আজীবন সাধনা করে, তবে তার সে সাধনা সফল হওয়ার নয়। এমতাবস্থায় তার মনে যদি এরূপ ভাবনার উদয় হয় যে, আমার পক্ষে যখন এরূপ হওয়া সম্ভব নয়, তখন অন্য আর একজন কেন এরূপ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হবে ? এরূপ মনোভাবকে হিংসা বা হাসাদ বলা হয়। এটে মানবচরিত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও লজ্জাজনক রোগবিশেষ। পৃথিবীর অধিকাংশ ঝগড়া-ফ্যাসাদ এবং হত্যা-লুন্ঠনের উদগাতাই হচ্ছে মানব-চরিত্রের এ কুৎসিত ব্যাধি।
কোরআন-কারীম সে অশান্তি-অনাচারের পথ রুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই ইরশাদ করেছে: আল্লাহতাআলা বিশেষ কোন হিকমতের কারণেই মানুষের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্নজনের মধ্যে বন্টন করেছেন। তাঁর কল্যাণ হস্তই একেকজনের মধ্যে এক-এক ধরনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য বিতরণ করেছে। সুতরাং প্রত্যেকেরই তার আপন ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যতটুকু সে লাভ করেছে এর বেশী আকাংখা করা এ ক্ষেত্রে শুধু অর্থহীনই নয়, সীমাহীন মানসিক যাতনা ডেকে আনার নামান্তর মাত্র। চেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করা যায় না এমন গুণ-বৈশিষ্ট্যের আকাংখায় অনেকেই জীবনের শান্তি-স্বস্তি বিসর্জন দিয়ে বসেন, এমনকি এটা তাদেরকে হিংসা পর্যন্ত নিয়ে যায়, যা মানুষের ইহকাল-পরকাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় । তাই অন্যের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আকাংখায় অন্তর বিষিয়ে তোলা কোন অবস্থাতেই সমীচীন নয়। কেননা এতে নিজেকে অর্থহীন মানসিক পীড়া, হীনমন্যতাবোধ এবং হিংসারূপী কঠিন গোনাহে লিপ্ত করা ছাড়া আর কোন ফল লাভ হয় না। তাই বংশমর্যাদা লাভ কিংবা সুন্দর হওয়ার দুরাশার চাইতে নেক আমল ও সদগুণের মাধ্যমে যদি কেউ প্রাধান্য অর্জন করতে সচেষ্ট হয়, তবে তার সে চেষ্টা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে। এটা মানুষের সাধ্যায়ত্ব। এ চেষ্টার মাধ্যমে মানুষ শুধু সাফল্যই লাভ করে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার স্তরকে ছাড়িয়ে আরো অনেক উর্ধ্ব উঠতে পারে।
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলও [স:] শুধু ঐ সমস্ত গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাওয়ার উতসাহ প্রদান করেছেন, যেগুলো মানুষের সাধ্যায়ত্ব, যেগুলো মানুষ চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে পারে। যেমন কারো গভীর জ্ঞান কিংবা চারিত্রিক মহত্ব দেখে সেরূপ হওয়ার আকাংখা করা এবং সে আকাংখা পূরণ করার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা বাঞ্ছনীয় এবং প্রশংসনীয় কাজ। আর মহান আল্লাহতাআলা তো পবিত্র কোরআনে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ঘোষণাই করে দিয়েছেন--
"তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তিই আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ যে সবচেয়ে বেশি পরহেযগার বা তাকওয়ার অধিকারী।" (সুরা আল-হুজুরাত)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:০৯