একটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সরকারের চেয়েও একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। এবং আমার মনে হয় একটি গণতান্রিক দেশের সাথে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। স্বৈরতান্ত্রিক-সরকার বিরোধী-দলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশে গণতন্রের অস্তিত্বহীনতাকে প্রমান করল। তাঁর আজকের আচরণ দেখে মনে হল--একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে তিনি স্বৈরশাষক হয়ে উঠছেন। তিনি এখন আর কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাব যে ভাষায় দিয়েছেন তা কোন সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব না, গণতান্ত্রিকতো পরের কথা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দুটি ফ্রেজ ইউজ করেন—“…আমদের আমলা…” আর “…ঐ শিক্ষকরা…”। আজকের এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি শিক্ষকদের সাথে আমলাদের একটা লাইন টেনে দিলেন। এই লাইনের এক দিকে আছেন তাঁর দলের-লোক আমলারা আর অন্য পাশে আছে গোবেচারা-শিক্ষকরা।
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমলারা গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষকরা নয়। আর তাই, তিনি তাঁর বক্তব্যে স্পস্টভাবে আমলাদের সাপোর্ট করে গেলেন। তিনি বলেন শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। ২-৫% শিক্ষকের কর্মের দায়ে তিনি পুরো শিক্ষক সমাজকে দোষি করলেন, কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আমলারাও ক্লাস নেন সেটা তিনি চেপে গেলেন।
প্রধানমন্রীর বলেন সচিবদের সমান হতে হলে শিক্ষকরা যে বাড়তি ৫ বছর চাকরি করেন সেটা বাদ দিতে হবে। শিক্ষকরা ৫ বছর বেশি চাকরি করেন সেটা তিনি বড় করে দেখলেন কিন্তু একজন সচীব বা আমলা যে পরিমাণে সুযোগ সুবিধা পান তার কিছুই কি শিক্ষরা পান? গাড়ি, বাড়ি, তেলের খরচ, ড্রাইভার, সরকারী টাকায় বিদেশে প্রমোদ ভ্রমন, সরিকারী সকল স্কলারশিপ কুক্ষিগত করা, কি পাননা আমলারা। ঘুষের কথা বাদই দিলাম।
শিক্ষকরা ৫/৬ বছর বেশি চাকরি করুক, আমি তার পক্ষে নই। কিন্তু এই ৫/৬ বছরতো তাঁরা বসে বসে বেতন নেন না--শ্রম দেন, নিজের দায়িত্ব পালন করেন, সে জন্য বেতন পান। এই ছাড়া শিক্ষদেরকে বড় একটা সময় উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যায় করতে হয়। মাস্টার্স, একফিল, পিএইচডি, পোস্টডক্টরাল, এসব করতে করতে তাঁদের প্রায় ৭/৮ বছর লেগে যায়। এসব না করলে সময় মত প্রোমোশন হবে না। কিন্তু আমলারা যে বাড়তি সুবিধাগুলা পান তার জন্য কি তাঁরা কিছু করেন?
গণতন্ত্র আর আইনের শাষন বিহীন এই দেশে যেসব শিক্ষক এতোদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি--
হে শিক্ষক, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হতে শেখো,
তোমার উদ্ধত আচরনে চেয়ে দ্যাখো, কী যে দু:খ
পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ,
অতএব, নত হও, বিনীত ভঙিতে করজোড়ে
ক্ষমা চাও, পায়ে পড়ো, বলো: কদ্যপি এমনটি হবে না, স্যার,
বলো: মন্রী, প্রধানমন্রী আর আমলাগণ,
এবারকার মতো ক্ষমা করে দিন…
বলো হে শিক্ষক, হে গোবেচারা, হে তোমার বর্বর প্রকাশ-ভঙিমা-
এই নাকে খত দিচ্ছি আর কখনো গালমন্দ পারবো না,
আপনাদের ভন্ডামিকে শ্রদ্ধা করতে শিখবো,
আপনাদের অপমান হজম করার অপরিসীম ক্ষমতাকে সম্মান করবো,
আর কোনদিন এমনটি হবে না, হে মহামান্য মধ্যবিত্ত রুচিবোধ,
আপনাদের মতো সব অপমান হ’জম করে, এখন থেকে,
নাইট সয়েল বানিয়ে ফেলে দেবো শরীরের বাইরে-
হে প্রতিবাদী, হে জাতীর বিবেক, হে উন্নত শীর,
নত হও, নত হতে শেখ..
শান্ত হও, ভদ্র হও ভদ্রলোকের মতো
আড়াল করতে শেখো অপ্রিয় সত্যকে,
প্রিয় মিথ্যা বলা শিখে নাও, বিক্রি করে দাও তোমার বিবেক-
উচ্চারন কোরো না এমন শব্দ, যা শুনে আহত হবেন তাঁরা-
নত হও, নত হ’তে শেখ;
তোমার পেছনে রয়েছে যে পবিত্র বর্বর মন ও মস্তিস্ক
তাকে অনুগত দাসে পরিণত হ’তে বলো,
হে আমার অবাধ্য শিক্ষক, ক্রোধ সংবরণ করো,
ভদ্রলোকের মতো হও, ভদ্রলোকদের দ্বারে ধর্না দিও-
শিখে নাও সাজানো-গোছানো প্রভুপ্রিয় বাক্যাবলি…
হে শিক্কক, এইবার নত হও, নতজানু হও,
শিখে নাও শিক্ষিত শিম্পানজিদের আচরন-বিধি,
অতএব, নত হও, নত হ’তে শেখো, নতজানু হও।।
(রফিক আজাদের “নত হও, কুর্নিশ করো” কবিতার প্যারোডি)