somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুতরাং হে শিক্ষক, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হতে শেখো

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সরকারের চেয়েও একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। এবং আমার মনে হয় একটি গণতান্রিক দেশের সাথে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। স্বৈরতান্ত্রিক-সরকার বিরোধী-দলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।

আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশে গণতন্রের অস্তিত্বহীনতাকে প্রমান করল। তাঁর আজকের আচরণ দেখে মনে হল--একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে তিনি স্বৈরশাষক হয়ে উঠছেন। তিনি এখন আর কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাব যে ভাষায় দিয়েছেন তা কোন সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব না, গণতান্ত্রিকতো পরের কথা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দুটি ফ্রেজ ইউজ করেন—“…আমদের আমলা…” আর “…ঐ শিক্ষকরা…”। আজকের এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি শিক্ষকদের সাথে আমলাদের একটা লাইন টেনে দিলেন। এই লাইনের এক দিকে আছেন তাঁর দলের-লোক আমলারা আর অন্য পাশে আছে গোবেচারা-শিক্ষকরা।

প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমলারা গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষকরা নয়। আর তাই, তিনি তাঁর বক্তব্যে স্পস্টভাবে আমলাদের সাপোর্ট করে গেলেন। তিনি বলেন শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। ২-৫% শিক্ষকের কর্মের দায়ে তিনি পুরো শিক্ষক সমাজকে দোষি করলেন, কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আমলারাও ক্লাস নেন সেটা তিনি চেপে গেলেন।

প্রধানমন্রীর বলেন সচিবদের সমান হতে হলে শিক্ষকরা যে বাড়তি ৫ বছর চাকরি করেন সেটা বাদ দিতে হবে। শিক্ষকরা ৫ বছর বেশি চাকরি করেন সেটা তিনি বড় করে দেখলেন কিন্তু একজন সচীব বা আমলা যে পরিমাণে সুযোগ সুবিধা পান তার কিছুই কি শিক্ষরা পান? গাড়ি, বাড়ি, তেলের খরচ, ড্রাইভার, সরকারী টাকায় বিদেশে প্রমোদ ভ্রমন, সরিকারী সকল স্কলারশিপ কুক্ষিগত করা, কি পাননা আমলারা। ঘুষের কথা বাদই দিলাম।

শিক্ষকরা ৫/৬ বছর বেশি চাকরি করুক, আমি তার পক্ষে নই। কিন্তু এই ৫/৬ বছরতো তাঁরা বসে বসে বেতন নেন না--শ্রম দেন, নিজের দায়িত্ব পালন করেন, সে জন্য বেতন পান। এই ছাড়া শিক্ষদেরকে বড় একটা সময় উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যায় করতে হয়। মাস্টার্স, একফিল, পিএইচডি, পোস্টডক্টরাল, এসব করতে করতে তাঁদের প্রায় ৭/৮ বছর লেগে যায়। এসব না করলে সময় মত প্রোমোশন হবে না। কিন্তু আমলারা যে বাড়তি সুবিধাগুলা পান তার জন্য কি তাঁরা কিছু করেন?

গণতন্ত্র আর আইনের শাষন বিহীন এই দেশে যেসব শিক্ষক এতোদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি--

হে শিক্ষক, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হতে শেখো,
তোমার উদ্ধত আচরনে চেয়ে দ্যাখো, কী যে দু:খ
পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ,

অতএব, নত হও, বিনীত ভঙিতে করজোড়ে
ক্ষমা চাও, পায়ে পড়ো, বলো: কদ্যপি এমনটি হবে না, স্যার,
বলো: মন্রী, প্রধানমন্রী আর আমলাগণ,
এবারকার মতো ক্ষমা করে দিন…

বলো হে শিক্ষক, হে গোবেচারা, হে তোমার বর্বর প্রকাশ-ভঙিমা-
এই নাকে খত দিচ্ছি আর কখনো গালমন্দ পারবো না,
আপনাদের ভন্ডামিকে শ্রদ্ধা করতে শিখবো,
আপনাদের অপমান হজম করার অপরিসীম ক্ষমতাকে সম্মান করবো,
আর কোনদিন এমনটি হবে না, হে মহামান্য মধ্যবিত্ত রুচিবোধ,
আপনাদের মতো সব অপমান হ’জম করে, এখন থেকে,
নাইট সয়েল বানিয়ে ফেলে দেবো শরীরের বাইরে-
হে প্রতিবাদী, হে জাতীর বিবেক, হে উন্নত শীর,
নত হও, নত হতে শেখ..
শান্ত হও, ভদ্র হও ভদ্রলোকের মতো
আড়াল করতে শেখো অপ্রিয় সত্যকে,
প্রিয় মিথ্যা বলা শিখে নাও, বিক্রি করে দাও তোমার বিবেক-
উচ্চারন কোরো না এমন শব্দ, যা শুনে আহত হবেন তাঁরা-
নত হও, নত হ’তে শেখ;
তোমার পেছনে রয়েছে যে পবিত্র বর্বর মন ও মস্তিস্ক
তাকে অনুগত দাসে পরিণত হ’তে বলো,
হে আমার অবাধ্য শিক্ষক, ক্রোধ সংবরণ করো,
ভদ্রলোকের মতো হও, ভদ্রলোকদের দ্বারে ধর্না দিও-
শিখে নাও সাজানো-গোছানো প্রভুপ্রিয় বাক্যাবলি…

হে শিক্কক, এইবার নত হও, নতজানু হও,
শিখে নাও শিক্ষিত শিম্পানজিদের আচরন-বিধি,
অতএব, নত হও, নত হ’তে শেখো, নতজানু হও।।

(রফিক আজাদের “নত হও, কুর্নিশ করো” কবিতার প্যারোডি)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×