somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবী মুহাম্মাদ (সঃ) কি নূরের তৈরি?'

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসুলুল্লাহ সা. কিসের তৈরি্‌ নূরের না মাটির?
এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা মনে করেন রাসুল সা. নূরের তৈরি- এটা প্রচার করার মাধ্যমে রাসুলের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তাদের অন্যতম দলীল হচ্ছে পবিত্র কুর'আনের সূরা মায়িদার ১৫ নং আয়াত।তারা আয়াতের শেষাংশে উল্লেখিত "তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব এসে গেছে" কথাকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। আয়াতটি বুঝতে হলে সম্পূর্ণ আয়াত তো পড়তে হবেই, এই আয়াত যেহেতু আগের আয়াতগুলোর সাথে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসেছে, তাই আগের আয়াতগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রেক্ষাপট তো জানতে হবেই।
আসুন পুরো আয়াত দেখি-
"হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি (নূর) এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ"
আগের প্রসঙ্গঃ সূরার ১২ নং আয়াত থেকে আলোচ্য আয়াতের ধারাবাহিকতা শুরু। আলোচনার প্রসঙ্গ বনী ইসরাঈল ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। বলা হচ্ছে, তাদেরকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেবার পরেও তারা আল্লহর বিধান ভুলে গেছে, আইন কানুন বিকৃত করে ভুল অর্থ গ্রহণ করেছে। মোট কথা, আল্লাহর হুকুমকে গোপন করে ফেলেছে। অন্য আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি, তারা বিশেষ করে হালাল হারামের ব্যাপারে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক কিছু গোপন করে ফেলেছিল।

আমরা জানি, আল্লাহ নতুন নবী বা রাসুল প্রেরণ করতেন তখনই যখন মানুষ পূর্বের নবীর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেত যাতে তাদেরকে আবার সঠিক পথে আনা যায়। এখন, ইহুদী- খ্রিষ্টানরা যখন আল্লাহর শিক্ষাকে ভুলে গেছে, গোপন করে ফেলেছে তখন একজন নবী এসে মূল শিক্ষা আবার উন্মোচন করে দেওয়া দরকার। তাই, আগের আয়াতেগুলোয় তাদের গুণাবলী বর্নণা করে ১৫ আয়াতে এসে বলা হচ্ছে -তোমরা যা গোপন করতে আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। সেজন্য আল্লাহ পাঠিয়ে দিয়েছেন আলো ও স্পষ্ট কিতাব।
অর্থ্যাৎ, এখানে আলোর কাজ হচ্ছে গোপনকৃত শিক্ষা প্রকাশ করে দেওয়া।

এবারে আসুন কিছু ব্যাপার চিন্তা করি।
১. হযরত মুহাম্মদ সা. পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ট মানব। এর কারণ কি এটা, যে তিনি ছিলেন আলোর তৈরি? মাইকেল এইচ হার্ট তাঁকে ইতিহাসের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় প্রথমে রাখেন কি এই কারনে? না। তিনি একটি কুসংস্কারাছন্ন, অজ্ঞ, বিপথগামী সমাজকে অন্ধকারচ্ছন্নতা থেকে নিয়ে আসেন আলোর পথে। গড়ে তোলেন ন্যায় ও জ্ঞানের সমাজ। অনেকে এখন বলবেন আমরা কি তাঁকে মাইকেল এইচ হার্টের মুল্যায়ন দিয়ে বিচার করব?
আচ্ছা, মানুষের পৃথিবীতে আসার কারণ কী? মানুষ হল আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি যার কর্তব্য হচ্ছে খোদায়ী বিধান মোতাবেক পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। রাসুল সা. যথার্থভাবে সেটা করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি মহানতম মানব।
২. আচ্ছা, তিনি যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন কি আরব দেশে বা বিশ্বের অন্য কোথাও আলোর অভাব পড়েছিল। সূর্য কি কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল যে পৃথিবী আঁধারে ঢাকা পড়েছিল? না। পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, তবে সেটা সূর্যের আলোর তথা ফিজিক্যাল আলোর অভাবে নয়, ঐশী জ্ঞানের আলোর অভাবে। তাই মুহাম্মাদ সা. হলেন জ্ঞানের আলো।
৩. কুর'আনের বক্তব্যঃ
কুর'আন বলছে, তিনি ছিলেন আমাদের মতই বাশার বা মানুষ। যেমন সূরা কাহাফের সর্বশেষ অর্থাৎ ১১০ নং আয়াত বলছে- বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ।
আর মানুষ মাটির তৈরি। রেফারেন্স সূরা আন'আম (৬>২); সুরা হিজর (১৫>২৬); সূরা হাজ্জ্ব (২২>৫); সূরা মুমিনূন (২৩>১২) ইত্যাদি।
৪. নূরের মানুষ কীভাবে মাটির মানুষের মডেল হবেন?
সূরা আহযাবের ২১ নং আয়াত বলছে যে -
তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনেই রয়েছে উত্তম নমুনা বা আদর্শ (উসওয়ায়ে হাসানাহ)
এখন, যিনি আমাদের মত মাটির মানুষ না হবেন, তিনি কি করে আমাদের মডেল হবেন। তিনি যা করতে পারবেন, আমরা তা কীভাবে করব? তিনি হয়তো রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন, আমরাও কি পারবো? এ প্রশ্ন আসতেই পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি মাটির মানুষ হয়েও রাত জেগেছেন, যুদ্ধ করেছেন, তাই আমরাও তা পারবো।তাই কোন অজুহাতের সুযোগ থাকছে না।
সূরা আলে ইমরানের ৩১ নং আয়ত বলছে, "আল্লাহকে ভালবেসে থাকো যদি তবে রাসুলকে অনুসরণ কর।"
কিন্তু তিনি যদি হন ভিন্ন পদার্থে তৈরি তবে কীভাবে তা হবে?
ঘোড়ার ঘাড়িতে চেপে কি মটর গাড়িকে অনুসরণ করা যাবে? নাকি সাইকেলে বসে উড়োজাহাজকে?

শেষ কথা বলতে চাই, তিনি নূরের তৈরি বললে মোটেই তাঁর সম্মান বাড়ে না। তাঁর মূল ক্রেডিট হল কলুষিত সমাজে সংস্কার সাধন ও আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা। আমাদের এসব তর্ক থামিয়ে তাঁর আদর্শ প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়নে কাজ করা দরকার নয় কি?

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:২৩
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×