somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপি কি আগামী নির্বাচনও বর্জন করবে?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি ঘোষণা করেছেন তাতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এ সার্চ কমিটি হয়েছে আওয়ামী লীগের কমিটি। ’ কমিটিতে দুজন কর্মরত বিচারপতি, দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং দুজন সাংবিধানিক পদাধিকারকে রাখা হয়েছে। আইন পেশা ও আমলাতন্ত্রের বিষয়-বিশেষজ্ঞ কর্মরত কাউকে রাখা হয়নি। কমিটির প্রধান এর আগে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মনোনীত সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন এবং সেই কমিটির সুপারিশে বিরোধী পক্ষের ভাষায় বর্তমান বিতর্কিত রকিব-কমিশন গঠিত হয়েছে বলে বিএনপি হয়তো ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুজন শিক্ষককে মনোনীত করা হয়েছে তারা দুজনই সরকার সমর্থক নীলদল-হলুদ দলের সমর্থক। সাংবিধানিক পদাধিকারী দুজনও সরকারের পছন্দের নিযুক্ত। খটকা বিএনপির কেন, অন্য কারও লাগতে পারে। তাই বলে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত কমিটিকে সরকারদলীয় কমিটি বলে অভিহিত করার অর্থ রাষ্ট্রপতিকে বিব্রত করা। এটা কি তারা জানতেন না যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘রাষ্ট্রপতি তার কার্য সম্পাদন’ করবেন। তো তেমন কমিটি বিএনপিকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হবে ভাবলেন কী করে? যাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে দলবিশেষের প্রতি কারও সমর্থন থাকলেও একজন ছাড়া বাকিদের কাছ থেকে ভালো ভূমিকা আশা করা যায় বলেও মনে করছেন অনেকে। বিএনপির অপেক্ষা করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত ছিল। তাদের মাথায় রাখতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে তারা যদি অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে কিছু অপছন্দের বিষয় ইগনোর করে তাদের মূল বিষয়ে দৃষ্টি ও শক্তি নিবদ্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘নিয়ত’ থাকলে নতুন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে এখনই নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে নিলে তারা কি লাভবান হবেন? আর তারা যদি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সরকারের ওপর একটা চাপ রাখতে চায় তাহলেও এগোতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। বিএনপি আগামী নির্বাচনও বর্জন করবে এমন ধারণা যাতে জনমনে সৃষ্টি না হয়। তাহলে বিএনপির ভোটাররা ‘নতুন ভোট বাক্সের’ বিষয় মাথায় ঢুকিয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যেতে পারেন। খুঁজতে পারেন নতুন পথ।

যেহেতু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে একটি সংসদ নির্বাচন (১০ম সংসদ) হয়েছিল এবং সেই নির্বাচনে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ আসনে বিজয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করেছে, তাই এ সরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার। গণতন্ত্র নেই কোথায়?
বিরোধী দল বলছে গণতন্ত্র নেই। কিন্তু এটা গত্বাঁধা একটা মুখের বুলিতে পরিণত হয়েছে বিএনপির। সন্দেহ নেই দলটি বিপুলভাবে জনসমর্থিত। কিন্তু ভীতু, দুর্বল নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক ভঙ্গুর দশার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। গণতন্ত্র নেই বলছেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষ পোরান ছাড়া কী করছেন?

এক সময় জেলের ঝুঁকি যেমন নিয়েছেন, গুলির মুখেও দাঁড়িয়েছেন। তখন পারার আর এখন না পারার কারণ খুব একটা দুর্বোধ্য নয়। এখন যারা বিএনপিতে বড় বড় পদপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের রাজনীতিতে বা দলে প্রবেশকালের অর্থবিত্তের সঙ্গে বর্তমান অর্থবিত্তের একটা হিসাব কষলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সব। আসলে সব নষ্টের গোড়া এ ‘হিসাবের খাতা’; অথবা বিএনপির বড় বড় পদ দখলদার, সাবেক মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপির ‘আমলনামা’। ওই সময় যারা কোনোমতে বাসে চড়তে পারতেন, এখন হেলিকপ্টারে উড়ে যান এলাকায় সভা করতে। সম্পদের মায়া নাকি সন্তানের মায়ার মতো। রাজনীতি ও আদর্শের মায়ায় ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব, আবার সম্পদের মায়ায় নিরাপদ দূরত্বে থাকাই এদের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ। ফলে দেশে গণতন্ত্র না থাকলে ‘উনাদের’ কী যায় আসে?

এ সরকারের আমলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, এসব দৃশ্যমান। আর্থিক খাতে নানা অনিয়মের পরও অগ্রগতি আছে। জিডিপি হার বেড়ে ৬.৮ হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নানা সামাজিক ক্ষেত্রের সূচকে ভারতসহ আশপাশের অনেক দেশকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে। এসব বাস্তবতার নিরিখে বিএনপি আরও ভালো ও উন্নত কী করবে তেমন বিশ্বাসযোগ্য কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামলেই জনগণের সমর্থন পেতে পারে। তাকি তাদের পক্ষে সম্ভব? এখানে শর্টকাট কোনো পথ নেই। ধৈর্য ধরে এগোতে হবে তাদের। সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ অনুসরণ করে এগোতে হবে। জামায়াতের লোক দিয়ে বড় জনসভাই আন্দোলনের একমাত্র পথ নয়। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২২ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৮ জনের জনসভায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন। ’ বঙ্গবন্ধু এভাবেই এগিয়েছেন ও সফল হয়েছেন। বিএনপি তো এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি কি এখন প্রস্তুত? এমন প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষকরা বলতে চান— না, সে প্রস্তুতি তাদের নেই। দল গোছানোর কথা বারবার বলার পরও অধিকাংশ জেলায়ই তাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ও কেন্দ্রের নানা তেলেসমাতিতে অধিকাংশ জেলায় সম্মেলনই করতে পারেনি। থানা কমিটিগুলোতেও একই পরিস্থিতি। যারা ঢাকায় নমিনেশন বাণিজ্যের আশায় বসে আছেন, সংগঠন না থাকলে বা দুর্বল থাকলে তাদের লাভ। বেচা-বিক্রিতে সুবিধা। বিএনপির উচিত সেদিকে মনোনিবেশ করা। যোগ্য ও সৎ প্রার্থী না থাকলে বিএনপির কোনো তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বানিয়ে দিলেও তারা সুবিধা করতে পারবে না। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো আওয়ামী লীগ শাসনামলে হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনও। সে নির্বাচনে বিএনপি জেতেনি? এখন এত ভয় কেন?
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৩০
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×