somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাটার কাছে কত চেয়েছিল তারেক?

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৫ সাল, ৮ মে। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায়। জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান প্রচণ্ড ব্যস্ত। মিডিয়ার সব ক্যামেরা তাঁর দিকে। মাহমুদুর রহমান ঘোষণা দিলেন, টাটা বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটা হবে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগ। টাটা এখানে সার কারখানা করবে, ইস্পাত কারখানা করবে। বাংলাদেশ নির্ধারিত মূল্যে ২৫ বছরের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করবে। টাটা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত জ্বালানি উপদেষ্টা। টাটার প্রতিনিধিরাও উচ্ছ্বসিত। প্রাথমিক এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলল। গ্যাসের মূল্য নিয়ে চলল দরকষাকষি। টাটা বিকল্প প্রস্তাব দিল। ৩ দশমিক ১০ মার্কিন ডলার প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম নির্ধারিত হলো সার কারখানা প্রকল্পের জন্য। আর ২ দশমিক ৬০ ডলার স্টিল কারখানার জন্য। সংশোধিত প্রস্তাবে টাটা বাংলাদেশ সরকারকে ১০ শতাংশ মালিকানা দেবারও প্রস্তাব করল। আলোচনা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাল। জ্বালানি উপদেষ্টা ঘোষণা করলেন অক্টোবরের মধ্যে তারা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করবেন।

এর মধ্যে খবর এলো, তারেক রহমান টাটার উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করতে চান। টাটা খুশিই হলো। তারেকের ইচ্ছা বৈঠক করবেন ভারতে। টাটার তখন সর্বোচ্চ কর্তা রতন টাটা। রতন টাটা আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন্ত্রণ জানালেন তারেক রহমানকে। তারেক রহমান আমন্ত্রণ পত্র ছুড়ে দিলেন। তিনি জানালেন তিনি একা যাবেন না, তাঁর সঙ্গে যাবেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং সিলভার সেলিম। টাটার মধ্যস্থতাকারীদের চোখ চড়কগাছ। এরা কারা? ঢাকায় ভারতীয় দুতাবাসের দ্বারস্থ হলেন টাটা। ভারতীয় দূতাবাস জানাল, এরা তারেকের ব্যবসায়িক পার্টনার।

টাটা তিনজনকে নিমন্ত্রণ পাঠালেন। তিনজন গেলেন। টাটার সদর দপ্তরে। রতন টাটা তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন। টাটার সর্বশেষ প্রস্তাবের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন হলো। কথাবার্তা চলল কিছুক্ষণ। তারেক একপর্যায়ে জানালেন, তিনি একান্তে রতন টাটার সঙ্গে কথা বলতে চান। একান্তে কথা বলার সময় তারেকের পাশ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সরাসরি প্রশ্ন করলেন আমাদের কমিশন কত? রতন টাটা প্রথমে বুঝতে পারলেন না। তাঁকে এবার আরও স্পষ্ট করা হলো। রতন টাটা মনে করলেন তরুণরা বোধহয় তাঁর সঙ্গে রসিকতা করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁর ভুল ভাঙল।

রতন টাটা বললেন, এ ধরনের কমিশন দেওয়ার কোনো সিস্টেম টাটার নেই। তিনি বললেন, টাটার বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপী। সর্বত্রই টাটা তার সুনাম নিয়ে কাজ করে। ঘুষ বা কমিশন টাটার রীতিবিরুদ্ধ।

তারেক নাছোড়বান্দা। বললেন, বাংলাদেশ সরকারকে ১০ শতাংশ মালিকানা দেওয়া হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? রতন টাটা জানালেন এটি ইকুইটি পারটিসিপেশন। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এটা অপরিহার্য শর্ত। তারেক দাবি করলেন ওই ১০ শতাংশ গিয়াসউদ্দিন মামুনের ওয়ান লিমিটেডের নামে দিতে হবে।

রতন টাটা ঝানু ব্যবসায়ী, বুঝলেন এরা বাংলাদেশের ক্যানসার। বুঝতে চাইলেন এদের দুর্নীতির গভীরতা কতটুকু। চেয়ার থেকে উঠে কফি নিলেন। কফিতে চুমুক দিয়েই অন্য খেলায় মেতে উঠলেন রতন টাটা। জানতে চাইলেন, তোমাদের ডিমান্ড কী, অ্যাট এ গো তোমরা কত চাও? মামুন বললেন ২০০ কোটি ডলার এখন আর নির্বাচনের সময় ১০০ কোটি ডলার। রতন টাটা জানতে চাইলেন কীভাবে নেবে? মামুন জানাল, আমাদের বিদেশে অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে। রতন টাটার মাথায় তখন খুন চেপেছে, তিনি জানতে চাইলেন কোন দেশে? মামুন বললেন ‘ দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া’। রতন টাটা সবগুলো ব্যাংক ডিটেইলস চাইলেন। মামুন, তার ব্রিফকেস থেকে কাগজ বের করলেন। রতন টাটা কাগজটা নিয়ে জানালেন, সি ইউ সুন’। বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তারেক বলল প্রথম টুকু ক্লিয়ার হবার পরই এমওইউ সাইন হবে। রতন টাটা করমর্দনের হাত বাড়িয়ে বললেন ‘অফ কোর্স’।

তিনজনকে বিদায় দিয়ে, বৈঠকের কনফিডেনসিয়াল রিপোর্ট তৈরি করলেন রতন টাটা। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঠানো হলো গোপন নোট। আর এই নোট যেদিন দিল্লিতে পাঠানো হলো, সেদিনই টাটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করল। রতন টাটার এই নোট শেষ পর্যন্ত ড. মনমোহন সিং পর্যন্ত গিয়েছিল।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ২:০০
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×