অনেকটা হেঁটে আসতে হয়েছে ওদের। পিঠের বোঝাটাও বেশ ভারী লাগছে। দুপুরের তপ্ত সূর্য যেন শরীর থেকে সব শক্তি নিংড়ে নেওয়ার চিন্তা করেছিল। এখন বনের মাঝে ঢুকে একটু ছায়া পেয়ে যেন ক্লান্তি আরো বেড়ে গেল দু'জনের। তাই গাছের নিচে থামল দু'ভাই, স্টিভেন্স আর রোনাল্ড।
দুই ভাই-ই খুব ভ্রমন প্রিয়। তাই ছুটি পেলেই বেড়িয়ে পড়ে নতুন জায়গার খোঁজে। মনের ক্লান্তিও দূর হয়, ছুটিও উপভোগ করা হয়। এবার এসেছে আলাস্কার উত্তরে একটি বনে। সমতল ভূমি থেকে কিছুটা উপরে এ বনটা। বনটি খুব বেশী বড়ও নয় আবার একদম ছোটও নয়। চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি, পাখির কিচির মিচির সব মিলিয়ে অসাধারন পরিবেশ। ভেতরে কিছুদূর গিয়ে একটি নদীর ধারে তাঁবু ফেলবে ওরা।
কিছুক্ষন বিশ্রামের পর রোনাল্ড-ই প্রথম মৌনতা ভঙ্গ করল। ভাইয়া শুনতে পাচ্ছ পানির শব্দ শোনা যাচ্ছে? একমুহূর্তের একটু বেশী সময় কান খাড়া করে মৃদু শব্দটা শোনার চেষ্টা করল স্টিভেন্স, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিল ভাইয়ের কথার সাথে। আবার বলে উঠল রোনাল্ড, "আমরা মনে হয় আমদের গন্তব্যের কাছাকাছি পৌছে গেছি। ম্যাপটা খুলে একটু দেখতো।"
ম্যাপটা চোখের সামনে মেলে ধরল স্টিভেন্স, "আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে আধা কিলোমিটারের মত দূরেই নদীটা থাকার কথা। বিশ্রাম তো হল চল এবার চল ওঠা যাক।" বলেই উঠে দাঁড়াল স্টিভেন্স। রোনাল্ডও উঠল। হাটতে শুরু করল দু'জনে।
আধা ঘন্টার মাঝেই পৌছে গেল নদীর ধারে। কূলে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন দেখে নিল চারপাশ। বাহ! কি চমৎকার প্রকৃতি। এই জায়গাটায় জঙ্গল কিছুটা হালকা। খরস্রোতা নদী বইছে অবিরাম। স্রোতের শব্দ কানে সুরের মত বাজছে অবিরাম!
ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে তাঁবু গেড়ে ফেলল। কিছুক্ষন তাঁবুর বাইরে বসেই উপভোগ করল প্রকৃতি। "এবারের ছুটিটাতে একদম মনের মত একটা জায়গাই পেলাম। ঠিক এরকমই নির্জন, প্রকৃতির খুব কাছাকাছি একটা জায়গা আমি চাইছিলাম।" বলল স্টিভেন্স।
হ্যাঁ ভাইয়া ঠিকই বলেছ, জায়গাটা অপূর্ব।
কথা শেষ করে নিজেদের খারার তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল দু'জনে। লাঞ্চের পর তাদের ক্লান্তি যেন শেষ সীমায় পৌঁছল। তাঁবুতে গিয়ে দু'জনেই গা এলিয়ে দিল বিছানায়। কিছুক্ষনের মাঝেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।
স্টিভেন্স- এর ঘুম ভাঙল প্রথমে, বিকেলের রোদ তখন প্রায় মিলিয়ে এসেছে। কিছুক্ষন বিশ্রামের পর বেশ সতেজ লাগছিল। বাইরে বেরিয়ে এল সে, অদ্ভূত সুন্দর এক আলো খেলা করছে বনের ভেতরে। এরকম সুন্দর সময়ে বেড়িয়ে আসলে মন্দ হয় না। ভিতরে গিয়ে ভাইকে ডেকে তুলল।
বনের গভীরের দিকে হাঁটতে লাগল দু'জনে। যতই গভীরে যাচ্ছিল ততই সবুজ চোখকে আরো বেশী রাঙিয়ে তুলছিল। সাথে বিভিন্ন ব্ন্য পশু পাখির ডাক, বানরের এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে বেড়ানো। যতদূর জানে হিংস্র জন্তু তেমন নেই এ বনে, তবে সাপের ভয় আছে। সাবধানে পা ফেলে হাঁটছিল দু'ভাই। বনের বেশ গভীরে চলে এসেছিল দু'জনে। হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেল স্টিভেন্স, এখনই না ফিরলে অন্ধকার নেমে আসবে তখন বনের মাঝে পথ চিনতে অসুবিধা হবে। ফেরার পথ ধরতে বলল ভাইকে, কিন্তু মনে হল রোনাল্ড তার কথা শুনতে পেল না। আবারও ডাকল ভাইকে, এবার সাড়া দিল। ফেরার কথা শুনে বলল, আর একটু ভেতরে যাই তারপর ফিরব, কিন্তু স্টিভেন্স বাঁধা দিল। কেমন যেন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল রোনাল্ডকে, একবার ভাবল জিজ্ঞেস করবে। আবার কি ভেবে যেন চুপ করে থাকল।
ফেরার পথা কোন কথা বলল না রোনাল্ড, যেন কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। তাঁবুতে ফেরার পরও বেশ গম্ভীর হয়ে রইল সে।
ডিনার শেষ করে আগুন জ্বেলে নদীর ধারে বসে প্রকৃতির নিঃস্তব্ধতা উপভোগ করল। প্রকৃতির মৌনতা যেন তাদের আরো বেশী মৌন করে তুলেছে। কিন্তু রোনাল্ডের মনে ভেতর উঁকি দিচ্ছে কিসের যেন অজানা আশঙ্কা। ঠিক বুঝতে পারছে না সে যা দেখল তা কি সত্যি নাকি, দৃষ্টিভ্রম......
(চলবে)
** গল্পের নামটার জন্য সজীবকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫৮