somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সে' হয়ত কেউ, না হয় কেউ না..

১৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'সে' একজন মানুষ। আজ তার কোন নাম নেই, কোন সম্বোধনও নেই। সে শুধুই একজন মানুষ, যাকে সবাই রোবট ভাবে অথবা বানাতে চায়। সেও আজ ভেবেছে সে রোবট হবে, জানবে শুধু যান্ত্রিকতা, মানবিকতা নয়। সে জানবে কোথায় কতটুকু হাসি দিলে কিংবা বিষন্ন মুখ করলে অনুভূতির সঠিক বহিঃপ্রকাশ দিয়ে চারপাশের মানুষগুলোর তৃপ্তি মাখা মুখ দেখা যায়। তবে সে কাঁদতে জানবে না, কারন যন্ত্রমানবেরা কাঁদতে জানে না।

সাইন্স ফিকশনগুলোতে যে তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রার যন্ত্রমানব দেখা যায়, যারা জানে মানুষের হাসি-কান্না, কষ্ট-আনন্দ নামক কতগুলো মানবিক অনুভূতি আছে। তাদের মাঝে প্রোগ্রাম করা থাকে কোনগুলো মানুষের আনন্দ আর কোনগুলো বেদনা, কিন্তু তারা জানে না সে অনুভূতিগুলো কেমন। অনুভূতি প্রকাশের সময় মনে যান্ত্রিকতা আর মুখে মানবিকতা ফুটিয়ে মনুষ্য স্বরে বলবে আপনার, তোমার বা তোর আনন্দে আনন্দিত হলাম, আর দুঃখে দুঃখ দুঃখ ভাব করে বলবে আমি দুঃখিত। মানুষগুলো নিশ্চয়ই এই সূক্ষ্ম অভিনয়টুকু ধরতে পারবে না, কারন তারা যে ঠিক এমনই চায়। তার সমস্ত মানবিক অনুভূতিগলো সে হত্যা করবে নির্মমভাবে।

সে একদিন একটা রক্ত মাংসের অনুভূতিশীল একজন মানুষ ছিল। সে কাঁদতে জানত, হাসতে জানত। সেগুলো যান্ত্রিক ছিল না। সেগুলো ছিল তার অনুভূতিতে। মানুষের মন নামে যে অদৃশ্য কি একটা আছে না? সেখানে....

তার অনেক অভিমান ছিল, অনেক স্বপ্ন ছিল। ছোট্ট ছোট্ট চাওয়া পাওয়ার মাঝে অনেক সুখ ছিল। আজ থেকে তার এগুলোর কিচ্ছু নেই। তার যান্ত্রিকতা আছে। সে সবাইকে চাবি দেয়া পুতুলের মত খুশি করবে। সবাই যেমন শুনতে চায়, যেমন রূপ দেখতে চায় সবাই সেগুলোই দেখবে!

তার ছিল রাতের তারা ভরা, জোছনা প্লাবিত কিংবা মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি ছিল, হিমেল হাওয়া ছিল। এর প্রত্যেকটায় সে আলাদা আলাদা অনুভবে হারিয়ে যেত। আপন অনুভূতিতে উদাস হয়ে যেত, মনটা কত জায়গায় ঘুরে বেড়াত। মন খারাপ হলে কেঁদে বালিশ ভেজাত। আরো বেশী মন খারাপ হলে মেঝে বসে থাকত, মাঝে মাঝে কুঁকড়ে শুয়ে মেঝেতে জমে থাকা চোখের জ্বলে ছবি আঁকত। মাঝে মাঝে বন্ধ দরজার আড়ালে চিৎকার করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করত, কিন্তু সে কখনও পারে নি। সে কাঁদত সবার চোখের আড়ালে।

মাঝে মাঝে কাউকে তার কষ্টের কথাগুলো বলতে খুব ইচ্ছা হত। সে তার কষ্টগুলো বুঝবে, অনুভব করবে, ভাগ করে নেবে। অন্তত অনুভব করতে না পারলেও বলবে, "শোন তুমি একদম কাঁদবে না, তুমি তো একা নও, তোমার জন্য আমি আছি। তোমার কষ্টগুলো শুধু তোমার না, আমারও।" কেউ না বুঝে এই কথা গুলো বললেও এই অর্থহীন কথাগুলো শোনার জন্য সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। কেউ তার আকুলতাটা বোঝে নি, সে আর অপেক্ষা করবে না। সে বুঝে গেছে তার কষ্টগুলো কারো নয়, তার একার, শুধু একার....

সে নিরর্থক অনেক কেঁদেছে, কিন্তু আর না। আজকে সে চিৎকার করে নয় ফুঁপিয়ে ষুঁপিয়ে অনেক কেঁদেছে। শীতল মেঝের সাথে মিশে শীতল হতে শিখেছে, চোখার জলের সাথে শেষ বারের মত অনেক কথা বলেছে। শেষ পর্যন্ত নিজের উপরে প্রচন্ড আক্রোশে মুষ্টিবদ্ধ একটা আঘাত হানল দেয়ালে, আশ্চর্য একটুও ব্যাথা পেল না। সে যে মানুষ এটা প্রমান করতেই হাতের কিছু অংশ একটু ফুলে উঠল। তাতে কি! সে তার শরীরটাকে হত্যা করতে না পারলেও মনটাকে তো হত্যা করতে পারবে, অনুভূতিগুলোকে তো হত্যা করতে পারবে। পারবে মানুষে মুখোশের আড়ালে যন্ত্রমানব হয়ে থাকতে........
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১১ রাত ২:৩১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×