somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম লেখার চেষ্টা। গতানুগতিক গল্পঃ অশরীরীর দ্বিধা

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


- সুন্দরপুর যাবেন?

- হ যামু, চলেন।

দরদাম না করে রিক্সায় উঠে পড়ে রাকিব। কারন এত রাতে একটি নির্জন বাজারে রিক্সা পেয়েছে তাও বেশি।

রাত প্রায় ১২টা। শরতের রাত। পূর্নচন্দ্র আকাশে। নিরব রাতে নিজেকে এতক্ষন অশরীরী মনে হচ্ছিল রাকিবের। রিক্সাওয়ালা কে দেখে বুকে বল পেল সে।

রাকিব রিক্সাটি পেল ভাগ্যক্রমে। সারা বাজার ঘুরেও রিক্সা বা টেম্পু না পেয়ে প্রায় হতাশই হয়েছিল সে। বাজারের এককোনায় রিক্সাটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে। রিক্সাওয়ালা ঘুমুচ্ছিল। চাদর গায়ে দিয়ে। বেশি ঘুম পাওয়ার কারনে হয়ত বাড়ি যেতে ভুলে গিয়েছিল রিক্সাওয়ালা।

- সুন্দরপুর কোন বাড়ি?, রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে।

- রফিক ডিলারের বাড়ি।

রফিক ডিলার রাকিবের বাবা। এখন নাকি বেশ অসুস্থ্য। বিকালে মোবাইলে কল দিয়ে রাকিবের মা রাকিবকে জানিয়েছিল। বাবার অসুখের খবর শুনে বিকালেই ঢাকা হতে রওনা দেয় রাকিব। রাত ৮টার ভিতরই পৌছিয়ে যাবার কথা ছিল রাকিবের।

কিন্ত পরদিন বিরোধি দলের ডাকা হরতালের কারনে রাস্তায় জ্যামে পড়ে রাকিবের গাড়ি। রাকিবেদের নিকটস্থ বাজারে নামিয়ে দেয় রাকিবকে।

রিক্সাওয়ালা প্রায় নিরবে রিক্সা চালাতে থাকে। শরীরের গঠন দেখে বুঝা যায় প্রায় বৃদ্ধ। এ এলাকার রিক্সাওয়ালা সবই প্রায় রাকিবের চেনা। কিন্ত এ রিক্সাওয়ালা কে ঠিক সেভাবে চিনতে পারে নি রাকিব।

হয়ত পাশের জেলা থেকে এসেছে। দু-এক মাস আগে নদী ভাঙ্গনে হাজারখানেক মানুষ গৃহ হারা হয়েছিল। অধিকাংশই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কামলা খাটে , রিক্সা চালায় , দিনমজুরি করে।

কয়টা বাজে? সময় দেখার জন্য রাকিব পকেটে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মোবাইল বন্ধ। তার মনে পরলো, গান শুনতে শুনতে চার্জ শেষ মোবাইল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাস থেকে নামার আধা ঘন্টা আগে। এখন তার লাইটারের মিনি বাল্ব টাই ভরসা।



- মামা, কতক্ষন লাগবে যেতে?

একঘেয়েমি কাটাতে প্রশ্ন করে রাকিব। বেশিক্ষন লাগার কথাও না। ২-৩ কিলোমিটারের পথ। তাছাড়া পথ তারার পরিচিত।

- প্রায় চইলা আইছি।

- কতদিন ধরে রিক্সা চালান?

- ২ মাস হইব।

রিক্সাওয়ালার ভাবসাবে কথা বলার মুড নাই দেখে রাকিব আর কথা বাড়ানোর চেষ্টা করলো না।
********************************************************************

উফ! এই শরতের বাতাসের মধ্যেও রিক্সা চালিয়ে ঘামিয়ে গেল রিক্সাওয়ালা করিম। বুঝতে পারলো না কেন ঘামাচ্ছে। ছেলেটিকে দেখে যতটা ওজন হবে ধারনে করেছিল, কিন্ত রিক্সা চালানোর সময় সে কোন ভার অনুভব করলো না।

হয়ত বাতাসের অনুকূলে থাকার কারনে। কিন্ত ঘামাবে কেন সে?
করিম কি ভয় পাচ্ছে?

এককালের পালোয়ান করিম কি ভয় পায় কিছুকে? এখন হয়ত সে বন্যায় তার বাড়িঘর , পরিবার হারিয়ে পথে। কিন্ত কখনো কি সে কারো কাছে মাথা নত করেছিল?

নানা চিন্তা ভাবনা করতে করতে করিম পৌছে গেল রফিক ডিলারের বাড়ি। এলাকার বিখ্যাত লোক। সবাই একনামে চিনে।
বাড়ির গেটে রিক্সা থামিয়ে পেছন ফিরে তাকায় করিম।

আরে! একি! রিক্সায় কেউ নেই। একদম খালি। এমনকি ছেলেটির হাতে থাকা ব্যাগ টাও নেই।

রিক্সা থেকে নেমে গেলে টের পাওয়া যেত। রিক্সা হালকা হয়ে যেত। আশে পাশে কাউকে দেখতে পেল না করিম।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলতে বলতে জোরে প্যাডেল চাপে করিম। এ মাঝরাতে খুপড়িতে না গিয়ে রিক্সায় ঘুমানো ভুলই হয়েছে করিমের।

********************************************************************

জায়নামাজে বসে আছেন রফিক সাহেবের স্ত্রী, রাকিবের মা সাহেলা বেগম। জিকির করছেন তিনি। রফিক সাহেব অসুস্থ্য। ঘুমুনোর জো নেই।

হঠাত, দরজায় আঘাত।

- মা মা, দরজা খুলো জলদি।

আরে! এ যে আমাদের রাকিব। জায়নামাজ থেকে উঠে দৌড় দিয়ে যান সাহেলা।

দরজা খুলেন।

রাকিব। কিন্ত একি চেহারা তার।

- এই, কি হয়েছে তোর? পথে কোন সমস্যা হয় নি তো? এতদূর আসলি কিভাবে? চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন?

ছেলেকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেন সাহেলা বেগম।

- রিক্সায় আসছিলাম। বাড়ির সামনে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি
রিক্সা এবং রিক্সাওয়ালা কেউ নেই।

এ কথা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রাকিব।
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব: ইসরায়েল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:২০




ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব। এটি করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই এটি করা সম্ভব- এমনটা জানালেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার।

সোমবার ( ১৬ জুন) মেরিট... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্যাবলেট খেলেই নির্মূল হবে রক্তের ক্যানসার? নতুন ওষুধ আসছে দেশে, দাম কত?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬





ট্যাবলেট খেলেই আর ক্যানসার ছড়াবে না? রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন ওষুধ আসতে চলেছে দেশে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধটি বানিয়েছে। আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার ওয়ার্কশপ রয়েছে ভারতেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

খোমেনীর স্বৈরশাসনের সূচনা: ধর্মীয় বিপ্লব থেকে রক্তাক্ত দমন

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮

খোমেনীর স্বৈরসাশন ও ইরানের কালো ইতিহাস:
============================

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে যে 'ধর্মনির্ভর রাষ্ট্রশাসন' প্রতিষ্ঠিত হয়, তার মূল স্থপতি ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নামে তিনি দেশটিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংরক্ষিত নারী আসন: সংস্কারের নামে চাপিয়ে দেওয়া, না কি গোপন এজেন্ডার বাস্তবায়ন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৭


বাংলাদেশে সংস্কারের নামে আজ যে কাণ্ড চলছে, তা দেখে পুরনো প্রবাদটি মনে পড়ে—"অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।" একটি ইন্টেরিম সরকার, যাদের চেয়ারে বসা একটি জটিল ক্ষমতার সমীকরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×