somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

>> সিরিয়া তুমি কার?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি শিশু খেলার ছলে কাগজ ছিড়ে টুকরো টুকরো করার পর যেমন হয়, সিরিয়ার মানচিত্রের অবস্থা এখন তেমনই। তবে এক্ষেত্রে শিশু নয়, মানচিত্রের মাটি ভাগ ভাগ করে যে যার দখলে নিয়েছে দেশটিতে যুদ্ধরত পক্ষগুলো।

প্রধান পক্ষ সিরিয়া সরকার। সরকারপ্রধান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনী ও তার অনুগত সশস্ত্র কয়েকটি গ্রুপের দখলে রয়েছে সিরিয়ার মোট ভূভাগের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস এই অংশে। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি অঞ্চল দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বাকি অংশে দখল নিয়ে আছে সিরিয়ার সরকারবিরোধী জোট সিরিয়ান অপজিশন (সিরিয়া আরব রিপাবলিক ও ফ্রি সিরিয়ান আর্মি) এবং সিরীয় কুর্দিদের সংগঠন রোজাভা এবং তাদের সমর্থক গ্রুপগুলো। সিরিয়া সরকার, আইএস, সিরিয়ান অপজিশন ও কুর্দিদের হয়ে অন্তত ৫০-এর বেশি সশস্ত্র বাহিনী দেশটিতে যুদ্ধ করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আল নুসরা ফ্রন্ট। নুসরার সঙ্গে আল-কায়েদা সম্পৃক্ত। তা ছাড়া অন্য গোষ্ঠীগুলোর প্রত্যেকের রয়েছে ছোট বড় দখলি অঞ্চল। এসব অঞ্চলে তারাই রাজা। ফলে অখণ্ড সিরিয়ার অস্তিত্ব আর নেই, কোনোভাবেই নেই। সিরিয়ায় সাধারণ মানুষ বলতে কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রত্যেকে কারো না কারো অনুগত। নারী ও শিশুদের হাতেও অস্ত্র আছে।

গণতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, জান্তা বা একনায়ক যা-ই হোক, রাষ্ট্র তো জনগণের জন্য- এ কথার কোনো উল্টো হয় না। কিন্তু সিরিয়া কার জন্য? জনগণ? জনগণ তো সিরিয়ায় বলির পাঠা। জনগণ বলতে আমরা যে আম জনতা বুঝি, নিরস্ত্র ভদ্র লোকদের বুঝি, সিরিয়ায় তাদের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সিরীয় জনগণের পরিচয় দিতে হলে বলতে হয়, আমি সুন্নি, সে শিয়া, ক নামের ব্যক্তি আলাউইত, খ ব্যক্তি কুর্দি। এরপর আছে আইএসের খিলাফতি লোকজন। খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের লোকের সংখ্যা কম, ১০ থেকে ১২ শতাংশ। সুন্নিদের সংখ্যা বেশি, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। এরপর শিয়া, কুর্দি ও অন্যদের অবস্থান। সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা পক্ষগুলোর বেশির ভাগ সুন্নিপন্থি। মোট কথা শিয়া, সুন্নি, কুর্দি, আলাউইত, দ্রুজ, ইসমাইলি যারা যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেন, তারা সবাই এখন সশস্ত্র। যুদ্ধটা মূলত তাদের মধ্যে। মরছে তারাই। ধ্বংস হচ্ছে মুসলিম সভ্যতা- এটিই চরম সত্য।

সিরিয়ায় যখন মানুষ মরছে, তখন সৌদি আরব চুপচাপ। তারপন্থি দেশগুলোও চুপ। না সাম্প্রদায়িকতার জন্য না মানবিকতার জন্য , কোন ভাবেও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

যুদ্ধের আক্রোশে পুড়ে গেছে সিরিয়ার মাটি। বাতাসে লাশের গন্ধ। নিঃশ্বাসে মৃত্যুর জ্বালা। বাড়িতে বাড়িতে সন্ত্রাসীদের বন্দুক গর্জে ওঠে। ঘুমন্ত মানুষের ওপর বোমা হামলা হয়। শিশু-বৃদ্ধের ঝলসিত দেহ পড়ে থাকে রাজপথে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় নারীকে হতে হয় অন্যের হাতের পুতুর। বিভৎস সব কিছু। বেঁচে থাকাটাই ভয়ংকর বীরত্বের ব্যাপার। প্রতিনিয়ত পরিবার পরিজন হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ। প্রতিশোধের নেশায় বিধ্বস্ত মানুষ হয়ে উঠছে জানবাজ, যেন নিজের প্রাণের বিনিময়ে তারা প্রতিশোধ চাই।

বেঁচে থাকার জন্য উলু খাগড়ার মতো ভেসে বেড়াতে হচ্ছে সিরিয়ার সাধারণ মানুষকে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশনের হিসাব মতে, ২০১৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সিরিয়ার ৪০ লাখ লোক বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করিয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে প্রায় ৮০ লাখ লোক। তারা গন্তব্যহীন, ভাগ্যহত। আর যারা হিসাবে নেই, তাদের সংখ্যাটা কত বড়, তা কে জানে।

জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সিরিয়ার লাখো মানুষ অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই আশ্রয় নিতে যাওয়ার সময় জলে-জঙ্গলে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে হাজারো মানুষের। এই যে লোকগুলো বেঁচে থাকার প্রশ্নে মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তারা বুঝে নিয়েছে সিরিয়া আর তাদের জন্য নয়। তবে সিরিয়া তুমি কার? সিরিয়া কি তাহলে বাশার আল আসাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। হতেও পারে। কারণ তার পিতা হাফেজ আল আসাদ প্রায় ৩০ বছর একহাতে সিরিয়া শাসন করেছে। অথবা সিরিয়া সুন্নিপন্থিদের? কারণ দেশটিতে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। না কি সিরিয়া আইএসের খিলাফত?

সত্যিই সিরিয়া কার? যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়ায় বাশারের কোনো স্থান নেই। তাকে বিদায় নিতেই হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সোজা ভাষায় বলে দেওয়ার পর এবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বলে দিলেন সিরিয়ায় বাশারের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবসহ তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় কথা বলছে। তবে সিরিয়ায় কার জন্য ভবিষ্যৎ নির্মিত হচ্ছে? সিরিয়ার ভাগ্য কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা নির্ধারণ করতে চায়? কিন্তু রাশিয়া বলছে, তা হবে না। ইরানও তাই বলছে। তারা বাশারকে রেখেই সিরিয়া গৃহযুদ্ধের অবসান চায়। খেলাটা মূলত এখানেই। সিরিয়া এখন সিরিয়ার নেই। সে হয়ে গেছে অন্যদের সম্পত্তি। গায়ের জোরে, অস্ত্রের শাসানিতে, কামান-বন্দুক-বোমা ব্যবহার করে যে যতটা পারছে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। যদি তাই না হবে, তবে সিরিয়া নিয়ে বিশ্বনেতারা দর কষাকষি করবেন কেন? কি স্বার্থে ৬০টি দেশের জোট নিজেদের কামানের গোলা বারুদ খরচ করছে সিরিয়াতে?

ভৌগোলিক মানচিত্র বা মাটি অথবা তেলের জন্য, জীবনের জন্য নয়। না হলে চোখের সামনে এক বধ্যভূমির ইতিহাস রচিত হচ্ছে সহস্র প্রাণের বিনিময়ে, যার জন্য বিশ্ববিবেকই দায়ী ।

এই ইস্যুতে কোন উপসংহারে পৌছানো সম্ভব না আপাতত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×