প্রতিবছর’ই আখেরী মোনাজাত হয়, উম্মাহ’র জন্য দোয়া করা হয়, দেশ বাসির জন্য দোয়া করা হয়; কিন্তু না হয় মুসলিম উম্মাহ’র কোন উন্নতি, না হয় দেশ বাসির উন্নতি।
.
মানুষ আজকে কেবল চাইতে শিখেছে, গ্যারান্টি সহকারে চায়। দু হাত প্রসারিত করে চাই। প্রবলেমটা সম্ভবত এখানেই। মানুষ এখন আর দিতে চায় না, মানুষের জন্য জীবন দিতে চায় না, ন্যায়ের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করতে চায় না। মুসল্লীদের মত হাত তুলে দোয়া করে কিন্তু দুই হাত কাজে লাগিয়ে প্রচেষ্টা করে না। তসবিহ’র দানার মাঝে জান্নাতের শান্তি খুজে কিন্তু অস্ত্র হাতে কখনও বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না। তাই সৃষ্টিকর্তাও দেয় না।
.
ইরাক যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মসজিদে বা ওয়াজ মাহফিলে গেলেই শোনা যেত প্রেসিডেন্ট বুশের নামে হাজারটা অভিশাপ।
প্রতিদিন, প্রতিসপ্তাহে অভিশাপ বর্ষণ জারি থাকতো। ১% অভিশাপ বা বদদোয়া যদি কবুল হইতো উপরওয়ালার কাছে, তাহলে এতোদিনে আমেরিকা মাটির ১০০ হাত নিচে থাকতো।
ইরাক যুদ্ধের সময় আখেরী মোনাজাতের বিশাল এক বয়ান শেষ করলো নানান ধরনের ফরিয়াদ জানিয়ে। হে খোদা, আবাবিল পাখি নামাও... আমেরিকারে শেষ করে দাও। নুহ নবীর প্ল্যাবন বানাও। আমেরিকারে পানির তলে ডুবাই দাও। ইহুদি নাসারা'দের শেষ কইরা দাও। ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ... হ্যানত্যান ... নানান বদদোয়া।
সেসময় অনেকে বুশের ক্ষতি করার জন্য বান মারা, বাটি চালান, গাছ পড়া, তাবিজ করা, জিন চালান দেয়া সহ আরো অনেককিছুই করেছিলো
একটাও কবুল হয় নি
বুশের বোমাবাজি চলেছে সমানে।
ইরাক দখল হয়ে গেলো। তার পরবর্তী প্রজন্ম ওবামা এসেও বোমাবাজি করল। লিবিয়া, সোমালিয়া দখল হয়ে গেল, সিরিয়ার হাল অবস্থা হলো। এদিকে মোনাজাত অব্যহত রইলো।
বাস্তবতা হইলো, সারাদুনিয়ার সব মানুষ মিলাও যদি বুশ/ওবামার নামে দু হাত প্রসারিত করেও প্রার্থনা করে/অভিশাপ করে তাতেও কিছু হবে না। যতক্ষণ না আমরা আল্লাহর নাম নিয়ে দুহাত কাজে লাগিয়ে শুরু করছি।
প্রার্থনাকে প্রসারিত না করে, আমাদের কাজকর্ম এবং প্রচেষ্টাকে প্রসারিত করা উচিত। কিন্তু আফসোস! আমরা শুধু প্রার্থনা করাই শিখেছি, কিন্তু আল্লাহর রাহে লড়াই করা শিখি নি।
যার উদাহরণ :
(১) নবী অবমাননা
(২) পবিত্র কুরআন পোড়ানো
(৩) হজ্ব নিয়ে কটুউক্তি
(৪) স্বয়ং আল্লাহকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা (নাউযুবিল্লাহ!)
(৫) বোরকা, দাড়ি, টুপিকে অবমাননা
ইত্যাদি! ইত্যাদি। তারপরেও আমরা লড়াই করতে শিখি নি, শুধু ফরিয়াদ জানাতে শিখেছি।
আপনিই বলুন! এতো বড় একটা মুসলিম প্রাঙ্গন যেখানে আছে, সেখানেই কি না ইসলাম অবহেলিত !!
আজ যেখান থেকে জিহাদের ডাক দেওয়ার কথা, সেখানে কি না দুহাত প্রসারিত করে ফরিয়াদ জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন ইমাম’রা। আমাদের ধমনীতে কি হযরত আলী, উমাইয়া, সালাউদ্দিন আউয়ুবীর, তারিখ বিন যিয়াদের রক্ত প্রবাহিত হয় নি? তাহলে আমরা কেন মুখ লুকিয়ে প্রার্থনাতে দায়িত্ব শেষ করবো?
“তোমরা কি মনে কর- এমনি তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক করবেন তোমাদের মধ্যে কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তার রাসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে! তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” -আত তাওবা (আয়াত-১৬)।