somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যাঞ্জেল ড্রপ

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ্যাঞ্জেল ড্রপ

অফিসে ঢুকতেই দেখি সবাই দুই দলে ভাগ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক দল হ্যাঁ, অন্যদল না! আমি গিয়ে দাঁড়াতেই জানতে চাওয়া হলো - আমি কোন দলে? অবশ্যই হ্যাঁ যদিও কিছু জানিনা! - আজ সোমবার, আগামী বৃহস্পতিবার আমরা ক´বাজার যাচ্ছি। সব মিলিয়ে বাইশ জন। এবার কিভাবে যাব বা অফিস কিভাবে চলবে তার পরিকল্পনা শুরু হল। বুশরা আপু সিদ্ধান্ত দিলেন দুই দলে যেতে হবে। বৃহস্পতিবার যারা যাবে তারা শনিবার ফিরে রবিবার অফিস করবে আর শুক্রবার যারা যাবে তারা রবিবার ফিরবে। ঠিক হলো সব আপুরা শুক্রবার প্লেনে করে যাবেন। দুরে দাঁড়ানো যুথী আপুর মুখ কালো হয়ে গেল। তাঁরতো পাসপোর্ট নাই, কিভাবে প্লেনে যাবেন! সবার মাঝে হাসির হুল্লোড় ছড়িয়ে পড়ল। আহ্হা আমরাতো দেশের বাইরে যাচ্ছি না! আপু মনে করেছেন এয়ারপোর্টেই পাসপোর্ট লাগে! অনেকেই জানালাম যাচ্ছিই যখন সব প্রথমে গিয়ে সব শেষে ফিরতে চাই! এসব শোনার পর কি যে হল আর কাজে মন বসে না। কোথায় যেন মন হারিয়ে যায় - তেপান্তরে!

খরচের হিসেব হতেই সবাই যেন একটু চুপসে গেল। মাসের প্রায় শেষ দিকে বের হওয়াটা একটু কঠিন বৈকি! বৃহস্পতিবারেও অনেকের মধ্যে তেমন কোন সাড়া পাওয়া গেল না। হারুন ভাই মজার মানুষ। মজার কোন কথা বলার আগে তাঁর মুখটা উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তাঁর মুখে সেরকমই একটা আভা দেখা গেল। তিনি বলছেন, আমি আগেই জানতাম যে যাওয়া হবে না! তাই আগে থেকে কখনো না বলি না! অফিসের কাজ সাথে আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে ট্যুর এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হল। সবার জন্য একই ধরনের গেঞ্জির অর্ডার দেয়া হল। কালো গেঞ্জির বাম হাতে কোম্পানির লোগো আর পেছনে ইউনিটের নাম। অফিসের পরিবেশই বদলে গেছে। কাজের মধ্যেই হা হা হি হি চলছে। বুশরা আপু, রিফাত আপু, রুমকী আপু মজা করছেন। কুতুব জোন আর মফিজ জোনও পিছিয়ে নেই! চতুর্থ রো এর বাসিন্দারা মিলে কুতুব জোন, তৃতীয় রো মফিজ জোন, দ্বিতীয় রো ফ্রড জোন! আর প্রথম রো এর নাম আমরা দেইনি.. বস'রা বসেন বলে। তবে আমরা নিরাশ নই, তাঁরা কোন নাম দিলে আমরা তা গ্রহণ করব।

একসাথে বাসে এতগুলো টিকিট পাওয়া বড় কঠিন কাজ। সবার ইচ্ছা গ্রীন লাইন ভলভোতে যাবার কিন্তু একসাথে টিকিট হচ্ছে না। টিকিট পাবার কঠিন কাজটাকে সহজ করে ফেলল বনি। সিল্ক লাইন আমাদের আঠারো জনকে নিয়ে যাবে ৩১ জুলাই রাতের শেষ গাড়িটা। আরো দুই তিনজন যাবে পরে। বৃহস্পতিবার আমার অফিস ছিল না। সন্ধ্যাবেলাতেই শান্তিনগর চলে গেলাম। বাস ছাড়বে আরামবাগ থেকে। সাইফ সন্ধ্যায় ফোন দিল। সে তখনো রেডী হয়নি, মালিবাগ এসেছে সবার জন্য গিফট কিনতে। সমুদ্র সৈকতে আমরা কোন খেলা খেলব তার প্রাইজ হিসেবে এ গিফট আইটেমের ব্যবস্থা। সাইফ আমার কাছে গিফট বক্স দিয়ে বাসায় গেল। রাত বারটার দিকে একে একে সবাই কাউন্টারে জড়ো হলাম। রিফাত আপুকে উনার ভাই রাখতে এসেছেন। ভাইয়ার সাথে পরিচিত হলাম। কথা প্রসঙ্গে ভাইয়া সিরাজ ভাইকে বললেন, ওয়ার্কশপেতো ভালই মজা করবেন! পাশ থেকে কে যেন বলল, ভাইয়া ওয়ার্কশপ না আমরা যাচ্ছি জাষ্ট মজা করতে! রিফাত আপু সম্ভবত বাসায় ওয়ার্কশপের কথা বলেছেন! (ধরা.. হি! হি!) সিরাজ ভাইও বাসায় ওয়ার্কশপের কথা বলে এসেছেন। তাছাড়া ভাবী কোনভাবেই ছাড় দিচ্ছিলেন না। হায়দার ভাই আগেই জানিয়েছিলেন ওয়ার্কশপের কথায় চিড়ে ভিজবে না! হয় ভাবীকে সাথে নিতে হবে নইলে ট্যুর বাদ দিতে হবে! তিনি ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত যুথী আপু যাচ্ছেন না, তাঁর পাসপোর্ট রেডী হয়নি!

বাস ছাড়ল। আমরা হাসাহাসি করছি। সবার মধ্যে যেন হাসির নেশা ঢুকে গেছে। যেকোন কথাতেই মজা হচ্ছে। নারায়নগঞ্জ পার হবার সময় সাকিব লিমন ভাইকে ফোন দিয়ে জানতে চাইল নারায়নগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত! প্রশ্নের উদ্দেশ্য আসলে সেটা নয়, উদ্দেশ্য লিমন ভাইয়ের ঘুম ভাঙ্গানো! সকালের বাসে রওনা দিয়ে তিনি সন্ধ্যায় আমাদের সাথে যোগ দেবেন। লিমন ভাই কিছুণ পর বিখ্যাত’র একটা লিস্ট পাঠালেন। সাথে জানালেন, আজ (পয়লা আগষ্ট) তাঁর জন্মদিন! বুশরা আপু বলছেন, ছেলেটার আজ জন্মদিন সেটা কারো জানা নেই! সিল্কলাইন থেকে সবাইকে একটা করে ছোট কেক দেয়া হয়েছিল। হাতে কেক নিয়ে ফোনের ওপ্রান্তে লিমন ভাইকে আমরা সবাই সমস্বরে 'শুভ জন্মদিন' জানালাম। বাসের লোকজন বেশ বিরক্ত হয়ে উঠেছে। আমাদের ইচ্ছা আরো বিরক্ত করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া! বাসের সুপারভাইজার সম্মানিত যাত্রীদের উদ্দেশে স্বাগত বক্তব্য দিলেন! বক্তব্য শেষ হতেই আমরা কড়া একটা হাততালি দিয়ে বাতাস কাঁপিয়ে ফেললাম। তিনি বোধহয় লজ্জা পেয়েছেন। হাসাহাসি করতে করতে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমরা তাজমহলে চলে এসেছি! স্বপ্ন না, সত্যি সত্যি তাজমহল - মানে তাজমহল হোটেলে চলে এসেছি। খাবার ব্রেক। রনি ভাই কে কি খাবে তার লিষ্ট তৈরী করছেন। হারুন ভাই বলছেন, তাড়াতাড়ি খাবার লাগাও সেহরির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে! তাজমহলের পরোটা মাংস, জটিল টেষ্টি। এখনো জিহ্বায় স্বাদ লেগে আছে। লিখতে গিয়ে জিহ্বায় আবার জল চলে এল!

সকালের হালকা আলো ছড়িয়েছে চারিদিকে। রনি ভাইকে নাটকের কথা মনে করিয়ে দিলাম। এমন ভ্রমনে একখান নাটক না দেখলে হয় নাকি! টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ বার বার সামনের রাস্তায় চলে যাচ্ছে। রাস্তাটা সুন্দর। দুপাশের গাছের ডালপালা মধ্যেখানে এসে মিলে গেছে। অনেকন একটানা তাকিয়ে থাকলে মনে হয় আঁকাবাঁকা গুহার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি! হোটেল ইনানিতে সকালের চা খেলাম। কলাতলি সৈকতের কাছে বাসটা আসতেই সবাই মনের অজান্তে ওয়াও! সমুদ্র বলে চিৎকার করে উঠল। সিল্কলাইন আমাদের হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসে নামিয়ে দিল। হোটেলের রিসেপশানে বসে ফটোসেশন চলছে। হারুন ভাই সোফায় একা গা এলিয়ে বসে ছিলেন। আশিককে ডেকে পাশে বসিয়ে অম্লান বদনে বলছেন, এতবড় সোফায় একা বসে আরাম পাচ্ছি না! ছয় নাম্বার বাসে গাদাগাদি করে উঠে অভ্যাস তো! রুমে ব্যাগ রেখে নাস্তা সারলাম। আর তর সইছে না, সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এবার ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা।

ঢেউ এর তালে তালে সবাই হারিয়ে গেলাম, দাপাদাপি করতে করতে। একটা করে ঢেউ আসে আর আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি। হাত ধরে গোল হয়ে লাফালাফি। পানি ছিটিয়ে যে যাকে পারো ভেজাও আর ঢেউয়ের তালে তালে ডিগবাজি! বেশী একটু দুরে গেলেই বুশরা আপু তাগাদা দিচ্ছেন তাঁর বাচ্চাদের ফিরে আসার জন্য! যেন কেউ হারিয়ে না যাই। সৈকতে আরো অনেকে এসেছে। আমরা মাঝে মধ্যে ঢেউয়ে ভেসে যাবার ভাব ধরে এদিক সেদিক চলে যাচ্ছিলাম সাইমন ভায়ের নেতৃত্ব! সাইমন ভায়ের একজনকে ভাল লেগেছে! আমরা সবাই তাল দিচ্ছি। সাইমন ভাই প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। স্রষ্টার কোন সুন্দর সৃষ্টিকে তাঁর খারাপ লাগে না। শুধু সাইমন ভাইয়ের নাম বলছি বলে অন্যদের এতটা নীরস ভাবার কারন নেই যেখানে দুষ্ট বনি, আশিক,সাকিব, রাকিব ভাই, রায়হান ভাই সবাই আছে! আছেন আমাদের গুরু হারুন ভাই আর রনি ভাই। আমি কিছু করি নাই এমন কোন কথা কিন্তু বলি নাই! সাইফের জন্য খারাপ লাগছে, চশমা ছাড়া সে বেশী দুর দেখতে পারে না - বেচারা! হায়দার ভাই পানি ছিটিয়ে ভাবিকে ভিজিয়ে দিচ্ছেন। উহহু, আমরা না হয় সেদিকে চোখ না দিই। ঘন্টাদুয়েক ঝাপাঝাপির পর উঠে এলাম। সাইমন ভাই ভেজা বালিতে একটি মেয়ের নাম লিখছেন (একটু আগে যাকে পছন্দ হয়েছে সে না!)। সমুদ্রের ঢেউ এ নাম মুছে দিয়ে গেলে হয়ত তিনি অন্য নাম লিখবেন। বুশরা আপু আনমনে একা একা বসে বালি দিয়ে ঘর বানাচ্ছেন। ছোটবেলায় আমরা নদীর তীরে বালি দিয়ে ঘর বানাতাম। যেখান থেকে গোল করে বালি তুলতাম সেটা পানিতে ভরে যেত এটা ছিল অন্যতম মজার খেলা। আপু যেখান থেকে বালি তুলছেন সেটাও পানিতে ভরে যাচ্ছে! আমরা সবাই এসে বালির বাড়িটা কিভাবে আরও সুন্দর বানানো যাই তাতে উঠেপড়ে লাগলাম। একসময় বাড়িটা প্রাসাদ হয়ে উঠল! রনি ভাই প্রাসাদের নীচে সুড়ঙ্গ তৈরীতে ব্যাস্ত হলেন। হারুন ভাই প্রাসাদের পেছনে মহিলা কর্মচারীদের বাসস্থান তৈরী করছেন! আমরা প্রাসাদের গায়ে হালকা করে পানি দিয়ে মসৃণ করছি। প্রাসাদ ততনে সুউচ্চ টাওয়ারে পরিনত হয়েছে! বনি বলছে, এখানে এসে নতুন নতুন পাগলের সন্ধান পাচ্ছি! সমুদ্রে এসে পাগল হলে হয়েছি। রিফাত আপু আর রুমকী আপু সৈকত ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছেন। আমরা চিৎকার করে হাতের ইশারায় ডাকছি। রিফাত-রুমকী ফিরে এসো চলে যেও না!

প্রাসাদ প্যারাডাইসে এসে আবার নীল পুলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সেখানে ঘন্টা দুয়েক চলল লাফালাফি। বল নিয়ে খেলা। চশমা পানির নীচে ফেলে দিয়ে উদ্ধার করার পুরস্কার। আমার ব্যর্থ সাঁতার শেখার চেষ্টা। রাকিব ভাইকে সবাই মিলে ধরে ডুবানোর ব্যর্থ ষড়যন্ত্র। হারুন ভাইয়ের নাচ। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েছে। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, চাঁদ যেন পেট্রোলে ভাজা পরোটা! ক্ষুধায় মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আরকি! পুল থেকে উঠে একটু ফ্রেস হলাম। তারপর রেষ্টুরেন্টে দৌড়। এমনিতে ক্ষুধার্ত তার উপর সামুদ্রিক সুস্বাদু মাছ। রূপচাঁদা, শুটকি... দিয়ে পুরো রেষ্টুরেন্ট খেয়ে ফেলার যোগাড়! খাবার পর কান্ত হয়ে অনেকে হোটেলে ফিরতে চাচ্ছিল কিন্তু সবাই মিলে গেলাম বার্মিজ মার্কেটে। হালকা কেনাকাটা হল। মজার ব্যাপার তিন/চার বছর আগে এসে হারুন ভাই এক দোকানে এক মহিলাকে দেখে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি তাকে চিনতে পেরেছেন এবং ভাইয়ার দৃষ্টি বলে মহিলা আরও সুন্দরী হয়েছে!

বার্মিজ মার্কেট থেকে কলাতলি সৈকত, এ্যাঞ্জেল ড্রপ এ গেলাম। 'এ্যাঞ্জেল ড্রপ' নামটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে। জানিনা কি অর্থে এ নাম দেয়া হয়েছে। তবে নামটা দেখেই আমার মনে হয়েছে সন্ধ্যার বিশাল সমুদ্রের বুকে লাল টকটকে বড় থালার মত সুর্যটা যে হারিয়ে যাই সেটাই এ্যাঞ্জেল ড্রপ! এ দৃশ্য বারবার কল্পনা করতে ভাল লাগে। কাঠের তৈরী এ্যাঞ্জেল ড্রপ এর খোলা জায়গায় বসে আছি। সমুদ্রের ফসফরাস ফেনিল ঢেউ এ্যাঞ্জেল ড্রপের পা ধুয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তালে তালে প্রতিটা ঢেউ অদ্ভুত সুন্দর সামদ্রিক গর্জনের সৃষ্টি করছে। চেয়ার নিয়ে এ্যাঞ্জেল ড্রপ এর নীচে গিয়ে বসলাম। সমুদ্রের সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বড় অসহায় লাগছে। অজান্তে চোখটা নোনা হয়ে উঠল। লেমন ভাই এইমাত্র এসে আমাদর সাথে যোগ দিলেন।

রাতে প্রথমবারের মত ক্র্যাব খেলাম। ভালই লাগল। তারপর আবার গেলাম সী গাল বীচে। রাতের সমুদ্র অন্যরকম। অনেক দুরে সমুদ্রের মধ্যে টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সেগুলো জাহাজ অথবা ট্রলার। সফেদ ঢেউ একই নিয়মে বার বার আছড়ে পড়ছে। ঢেউগুলো যে কোন প্রোগ্রামিং এর কোন লুপ এ আটকে গেছে কে জানে! বুশরা আপু আর রিফাত আপু সবাইকে গান গাইতে বলছেন। বালির উপর সবাই গোল হয়ে বসে পড়লাম। বাংলা সিনেমার ভক্ত একজন গায়ককে পাওয়া গেল। সে আশিক। বাংলা সিনেমার বেশীর ভাগ গানই তার মুখস্থ! প্রথম গান - বন্ধুর দুটি চোখ যেন এক নলা বন্ধুক! দিয়ে শুরু করে আশিক একটার পর একটা গান গাইতে থাকল। আমরা সাথে তাল মিলিয়ে গেলাম। রুমকী আপু সাগরের পানিতে একমনে দাঁড়িয়ে আছেন। ডাক দিয়েও ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। রিফাত আপু আনতে গিয়ে তিনিও থেকে গেলেন। শেষ পর্যন্ত বুশরা আপু দু’জনক আনতে গেলেন। কি আশ্চর্য রুমকী আপু, রিফাত আপু, বুশরা আপু তিনজনই সাগরের পানিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ফিরে আসছেন না!

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসে ফিরে যাবার মুহুর্তে আবার ফুটপাত আর রাস্তায় গোল হয়ে বসে আড্ডা জমে উঠল। মধ্যরাত গড়িয়ে গেছে। রাস্তায় অনেকণ গান আর নাচানাচি হল। হারুন ভাই গান গাইলেন, মন কি যে চাই বল... আমরা কোরাস করে গাইলাম... তোর মাইরে বাপ!! রুমে ফিরে ঘুমাতে যাব কিন্তু পাশের বাংলোয় ধুম ধাড়াক্কা গান, নাচানাচি চলছে। সুইমিং পুলেও লম্ফঝম্প অব্যাহত! শেষ পর্যন্ত ভোর চারটার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবার সূর্যোদয় দেখতে যাবার কথা আছে!

ভোরে ঘুম থেকে উঠে খবর পেলাম - হারুন ভাই ঘুম থেকে উঠে রুমকি আপুকে বারান্দায় হ্যাঙ্গারে ঝোলানো অবস্থায় আবিস্কার করছেন, পরিস্কার খেয়াল করার পর বুঝতে পেরেছেন আসলে আপু না তাঁর কাপড় ঝুলছে! বিশ্বাস করুন হারুন ভাইয়ের পেটে কিন্তু অন্য কিছু পড়ে নাই!

নাস্তা করার সময় সর্বশেষ তাসফিক আর মাহমুদ ভাই আমাদের সাথে যোগ দিলেন। চা নাস্তা শেষে বিচ বাইকে চড়লাম। এরমধ্যে হিমছড়ি, ইনানী বিচ যাবার জন্য দুটি চান্দের গাড়ি প্রস্তুত। যাতায়াত এবং খাবার সব আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন রনি ভাই ও বনি। তাদের দুজনের অসাধারন আয়োজনে আমরা নিশ্চিন্তে অনেক বেশী মজা করতে পেরেছি। ধন্যবাদ রনি ভাই ও বনি ফাজিল! আশিক দুজনের নাম দিয়েছে ‘ব্রনি!’
হিমছড়ির চুড়ায় উঠলাম সিঁড়ি বেয়ে। মির্জা উঠল সিঁড়ির সহযাগিতা ছাড়াই! হয়ত অদৃশ্য লুক্কায়িত কোন কিছুর সাহায্যে! উপর থেকে সমুদ্র অন্যরকম সুন্দর। পরপর দুটি চাঁদের গাড়ি ছুটে চলছে। বাংলা সিনেমায় এমনটা দেখা যায়। সামনে নায়িকাকে নিয়ে নায়ক পালাচ্ছে পেছনে ভিলেন! আমাদের গাড়িও ছুটছে তবে দৃশ্য আলাদা। চাঁদের গাড়ির পেছনে সবাই মাথা বের করে দাঁড়িয়ে আছি। গলা ফাটিয়ে গান হচ্ছে। দুপাশ দুই রকম। ডানপাশে সমুদ্র, বাম পাশে পাহাড় - মাঝে ইনানির পথে ছুটে চলা মসৃন পিচঢালা পথ। আমার মাথার মধ্যে গানটা বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে - একপায়ে নুপুর অন্য পা খালি! তবে কথাগুলো অন্যরকম, একপাশে সমুদ্র অন্যপাশে পাহাড়...!

ইনানি বীচে জন সমাগম অনেক কম। প্রথমে মিউজিক্যাল গেম খেললাম। তারপর বি¯তৃত বীচে ফুটবল খেলা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামল। প্রবাল পাথরে বসলাম। হালকা ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে। ফিরতি পথে আবার গাড়ি ছুটছে। তবে মন ফিরে যেতে চাইছে না। বুশরা আপুকে অবাক করে দিয়ে সবাই তাঁর পায়ে পড়লাম আর একটা দিন বাড়ানোর জন্য। পা ধরে আমাদের সে কি কান্না, সমুদ্রের কাছে আমরা আর একটা দিন থাকতে চাই। আপু নির্বাক চোখে কিছুণ আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন, 'ঠিক আছে!' আমরা বললাম, হুররে! তিনি এবার বাকিটুকু যোগ করলেন। ঠিক আছে তোমাদের সবার রির্পোটিং বস কে? আমরা সমস্বরে বললাম - রিফাত আপু। বুশরা আপু বললেন, রিফাত যদি তোমাদের সবাইকে অনুমোদন দেয় তাহলে আমার কোন আপত্তি নাই! মনটা খারাপ হয়ে গেলো, রাতেই ফিরতে হবে ভেবে!

বিকালে আবার গেলাম এ্যাঞ্জেল ড্রপ এ। আজকের শেষ সুর্যাস্তটা দেখতে। সারাদিন ভেজা থাকার পর নতুন করে আর ভিজত ইচ্ছা করছিল না কিন্তু সমুদ্রের আকর্ষন এড়ানো গেল না। আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ঢেউকে প্রতিহত করে কিছুণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু সময়কে প্রতিহত করতে পারলাম না। সময় তাড়া দিচ্ছে হোটেলে ফিরে যাবার জন্য। কিছু সময় পর সিল্কলাইন আবার আমাদের ফেরত নিয়ে যাবে। এ্যাঞ্জেল ড্রপ এর উঠোনে বসে কফি খাচ্ছি, শরীর থেকে নোনা পানি ঝরে পড়ছে। এ্যাঞ্জেল ড্রপ এর উঠোনটা লোক সমাগমের তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল। ফলে সারাণ ভিড় লেগেই থাকে। আমাদের সবার জন্য বসার জায়গা পাওয়া কঠিন। পাশের টেবিলে সম্ভবত এক দশপতি (দম্পতি) গুটুরগুটুর গল্প করছিল। আমাদের হাসাহাসিতে বিরক্ত হয়ে লোকটা একটু উঠে দাঁড়িয়েছে। ওমনি আমরা একটুও দেরী না করে আমাদের টেবিলটা ওটার সাথে জোড়া লাগিয়ে দিলাম! লোকটা ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি ভাব দেখাল! বুঝিয়ে দিলাম ও দেখার সময় আমাদের নেই! হুটোপুটি করে আমরা জায়গা দখল করলাম।

বুশরা আপু, রিফাত আপুকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাচ্ছি না। কারন, তাঁদের আয়োজন ছাড়া এ আনন্দ সফল হত না। ধন্যবাদ ছাড়াই যে আবার কোথাও হারিয়ে যাবার পরিকল্পনা হবে সেটা বেশী দেরী নাই! সারাণ মজাদার আড্ডার অনুঘটক ছিল পুরো টিমের সবাই। বিশেষ করে হারুন ভাই, রনি ভাই, তাসফিক, আশিক, বনি, রাকিব ভাই ও অন্যান্যরা। ফিরে যাচ্ছি। মনটা খারাপ। আবার সেই পুরনো গন্তব্য - অন্ধকার নগরী, চলৎ শক্তিহীন জ্যামে ভরা পথ আর মৃত নগরে। শরীরটা যাচ্ছে মন পড়ে রইল। বিদায় সমুদ্র, বিদায় এ্যাঞ্জেল ড্রপ। কানে ভাসছে সমুদ্রের গর্জন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৩৪
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×