এক বছরের ভেতর দুইটা মৃত্যু আমাদের পরিবারে অনেকটা বিপর্যয়ের মত। বিশাল বৃক্ষের মত মাথার উপর ছায়া হয়ে যে আব্বা সবাইকে আগলে রেখেছিলেন তিনি গত বছর মারা গেছেন। আমার চারপাশে এখন এমন কেউ নেই যাকে জড়িয়ে ধরে আমি কাঁদব। ডাবলু ভাই ব্যস্ত মানুষ। তারপরও তিনি রাত বিরাতে এসে খোঁজ খবর নেন। মনের মধ্যে ভরসা পাই। আব্বা মারা যাবার পর বড় দুটি কাজ ছিল পেনশন ও ব্যাংকের টাকা উঠানো। ডাবলু ভাই একাউন্স অফিসার, পেনশনের তিনিই সব করেছেন আর নমিনি না থাকায় ব্যাংকের টাকা উঠানো যে কি ঝামেলা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তারপরও যে কাজটুকু হয়েছে ডাবলু ভাই না হলে সেটুকু আমার পক্ষে সম্ভব হত না।
ফজর থেকেই লোকজন বাড়িতে আসতে শুরু করে। পুরুষ মানুষরা এসে ভবিষ্যতের পরামর্শ দেন। সব অকাজের পরামর্শ অথবা বাখ্যা করেন কিভাবে কি চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল! মহিলা মানুষ এসে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে। স্মৃতি কথা বলে মা’র কান্নাকে উসকে দেয়। হালকা রঙের কাপড় পরার পরামর্শ দেয়! বাড়িতে সব সময় অনেক মানুষের নিঃশব্দ শ্লথ কোলাহল। মানুষের কোলাহল, আমার অসহ্য লাগে। রাতে শুধু আমি আর মা। গভীর রাতে মা সুর করে কাঁদতে বসে। আমি তাকে নতুন করে স্বান্তনা দেই।
বছর না ঘুরতেই বড় দুলাভাই মারা গেলেন। আব্বার মৃত্যু দিন থেকে মাত্র দু’দিন আগে। আব্বা ২০০০ সালের দশই ডিসেম্বর, দুলাভাই ২০০১ সালের আটই ডিসেম্বর। শ্বশুর তের রোজায় Ñ জামাই তেইশ রোজাতে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে খবর পেলাম দুলাভাই অসুস্থ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নির্বাচনের পর কারো দুঃখ কারো আনন্দের রেশ তখনো কাটেনি। আমি কয়েক দিনের বাজার করে দিয়ে রংপুর বেরিয়ে গেলাম। মাকে বার বার বললাম, আমি হয়ত কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরে আসতে পারব। বাড়িতে শুধু মা আর কাজের মেয়েটা থাকল।
হাসপাতালে গিয়ে দুলাভাইকে চিনতেই পারলাম না। তিন মাসের ভেতর এতটা পরিবর্তন! তিনি একেবারে বিছানার সাথে মিশে গেছেন। আমাকে দেখে দুলাভায়ের কোটরাগত চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল। আপা স্কুলের ছুটি নিতে ভোরবেলায় তেঁতুলিয়ায় গেছেন, কাল ফিরে আসবেন। আমি বললাম, আপনি এত দেরীতে চিকিৎসা করালেন কেন? মাসরুর বলল, থাক মামা ওসব বলার দরকার নেই আব্বু রাগ করবে। তিনি এত দুর্বল যে টয়লেটে যাবার পথে বসে দু’বার বিশ্রাম নিলেন! নিচু স্বরে আস্তে করে বলছেন, ঠাকুরগাঁ’য়ে ডাক্তার না পাবার পর এখানে পনেরো দিন হল ভর্তি হয়েছি। মুচকি হেসে আবার বললেন, সুস্থ হয়ে একবার দৌড়াতে পারলে দেখতি! আমি বললাম, মাত্র ষোল দিন আগে আপনি দশ কিলোমিটার মোটর সাইকেল চালিয়ে অফিস করেছেন। আপনি অবশ্যই সুস্থ হবেন। আকাশ পাতাল সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বললেন, ‘তুই একেবারে ঠিক কথা বলেছিস।’
এই ক’দিনে ডাক্তার কিছু ধরতে পারেনি। আর একটা টেষ্ট করলে ফাইনাল হয়ে যাবে এই বলে প্রতিদিন টেষ্ট হচ্ছে। রোগী কিছু খেতেও পারছে না। অবস্থা দিনকে দিন খারাপের দিকে। রিলিজ দিতেও রাজি না, অপারেশন করে দেখতে চাই Ñ পেটের ভেতর কি অবস্থা! শেষমেষ অনেকটা জোর করেই রিলিজ নিয়ে নিলাম। সত্য বলতে ডাক্তার একটা সিদ্ধান্তে এসেছেন। যক্ষা অথবা কোলন ক্যান্সার হতে পারে Ñ একেবারে নিশ্চিত না। শুধু আপাকে বলেছে কিছু ধরা পড়েনি। দুলাভায়ের এক ভগ্নি জামাই আছেন এই মেডিকেলে। কোয়াটারে তিন তলায় থাকেন। দুলাভাইকে সেখানে নিয়ে গেলাম। তাঁকে দুই হাতের উপর বসিয়ে আমি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছি। মানুষের অসুখ করলে কি রকম অসহায় ছোট বাচ্চা হয়ে যায়।
মেজ আপাÑদুলাভাইকে ফোন করে কল্যানপুর বাস কাউন্টারে থাকতে বলেছি। মামুন মামা বাসে উঠার শেষ মুর্হুতে ছোট্ট করে বললেন, রোগীর কাছে বেশী কিছু আশা করা ঠিক হবে না কিন্তু। গত বছরও ঠিক এসময় হঠাৎ করে ঢাকা গেছিলাম বাংলাদেশ- ভারত প্রথম টেষ্ট খেলা দেখতে। তখন আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার বলেছিল,‘প্রচন্ড রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল - ব্রেন হেমারেজ হয়ে যেতে পারত। এখন ঠিক ঠিক দেখে রাখবেন, পড়ে গেলে একেবারে বিপদ হয়ে যাবে।’ আব্বার পা মাঝে মাঝে ফুলত আবার ঠিকও হয়ে যেত কিন্তু এবার কমছে না। বিশাল দেহটা নিয়ে তিনি শুয়ে থাকছেন। গরম স্বেদ দিলে আরাম পাচ্ছেন। দু’তিন দিনে ব্যাথার আরও অবনতি হল। কি করব আমি বুঝতে পারছি না। স্থানীয় বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গেলাম। এক ডাক্তার এসে পরামর্শ দিলেন রাজশাহী নিয়ে যাবার জন্য। আব্বাকে আগেও বলেছি যাবার জন্য কিন্তু তিনি রাজি হননি। মুখে কিছু না বললেও আমি জানতাম আমার সব চাচারা চিকিৎসার জন্য রাজশাহী গিয়ে আর ফিরে আসেননি, এ ভয়টা তাঁর ভেতর কাজ করছে। ইফতার নিয়ে বসলেই আব্বার বাথরুম লাগে। মা আক্ষেপ করে বলে, আগে থেকে বুঝতে পার না। ব্যাথা পা নিয়ে আব্বা একাই টয়লেটে এগিয়ে যান। আমি দৌঁড়ে গিয়ে তাঁকে ধরি। তিনি বলেন, তুই ইফতার করগে আমি একাই যেতে পারব! কিন্তু আমার ভয় করে যদি তিনি পড়ে যান!
আব্বা সব শেষবার আমাকে ঠিক কি বলেছিলেন মনে করতে পারছি না। সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসার মুর্হুতে মাথা ঘুরিয়ে তিনি তাকিয়েছিলেন। চোখ দুটো ক্লান্ত ঘোলাটে ছিল তবু আমার একটুও অলুক্ষণে মনে হয়নি। আমি শুধু বলেছিলাম, কাল ভোরেই মাকে পাঠিয়ে দিব। গতরাতে আব্বার সাথে শুয়েছিলাম। সারারাত ছটফট করেছেন। শীতের মধ্যেও শরীর ঘেমে যাচ্ছিল - বার বার লেপ ফেলে দিচ্ছিলেন। ভোরবেলায় পুরো শরীর একেবারে ঠান্ডা বরফ হয়ে গেল তবু কপালে ঘাম জবজব করছে। দুপুর বেলায় আলট্রাসনোগ্রাম টেষ্ট হলো। রাণীহাটি ফিরে টেষ্ট রির্পোট জানার জন্য রাতে রাজশাহীতে ফোন করলাম। এমদাদ ভাই বলল, ‘কিডনীতে পাথর পাওয়া গেছে ।’ - কত বড় পাথর? তিনি বললেন - ‘তিন ডায়ামিটার!’ ‘আব্বা জানে একথা?’ -‘না।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে কাল খুব ভোরে মাকে রাজশাহী পাঠিয়ে দিব।’
হঠাৎ করে আমার প্রচন্ড অস্থির লাগছে। একবার ঘরে যাচ্ছি একবার বারান্দায়, একবার গলিতে একবার আঙ্গিনায়। এমন সময় একটি ম্যাক্রোবাস এসে থামল। গেট খুলেই দেখলাম - আব্বার লাশ ধরে সাথী যুথী চিৎকার করে কাঁদছে! ডুজ দেয়ার সময় আব্বা মারা গেছেন। মা, আব্বার কাছে ছুটে গেছে কিন্তু আব্বা চিরদিনের জন্য বাড়ি ফিরে চলে এসেছেন।
বাসে বসে সব উল্টাপাল্টা চিন্তা হচ্ছে। দুলাভায়ের অবস্থা যদি আব্বার মত হয়! গত বছরও ঠিক এ সময় ঢাকা গেছিলাম এ কথাটা মাথা থেকে সরাতে পারছি না, কেমন খটকা লাগছে। শেষ পর্যন্ত কি সবকিছুই গতবারের মত মিলে যাবে? এ রকম আজেবাজে সব উদ্ভট চিন্তা।
বারডেমে এন্ট্রোগ্যাসট্রোলজীর প্রফেসর দুলাভাইকে ভর্তি করে দিতে বললেন। কথা বার্তায় তিনি নিপাট ভদ্রলোক। তাঁর পরনের এ্যাপ্রন গোঁফ চোখের ভ্রু মাথার চুল সবই এক রঙের। ভর্তির জন্য আমি আর মেজ দুলাভাই বদরুল একাউন্ট শাখায় গিয়ে ভিম্রি খাওয়ার যোগাড়। আমিতো প্রথমে ভেবেছি এখানে সম্ভবত বায়স্কোপ খেলা দেখানো হয়! একটু পরেই ভুল ভাঙ্গল - আসলে ওগুলো বায়স্কোপ না, মান্ধাতা আমলের বিশাল বপু কম্পুটার! মনেহয় পাশের জাতীয় জাদুঘরের একটু ছোঁয়া লেগেছে আর কি! কম্পুটারের দু’জন অপারেটরের একজন বেদম আঙ্গুল গুনে যোগফল বের করছেন। টাকা নেয়ার কথাতে তিনি পাশেরটাতে যেতে বললেন। আমাদের টাকা জমা দেয়া শেষ হলেও তিনি পঁচানব্বই যোগফল মেলাতে পারলেন না। আমার মনে হল ছোট বেলায় খাড়াভাবে তিনটি দাগ যোগ চিহ্ন দুটি খাড়া দাগ দিয়ে, যোগফল পাঁচ মেলাতাম।
দুলাভাইকে হাসপাতালে নেয়ার পর থেকেই স্যালাইন আরম্ভ হল। ডাক্তার আগের কথা শুনলেন। অসুস্থ হলে মানুষ স্বান্তনার বাণী শুনতে চাই। ডাক্তার শোনালেন। ডাক্তার পরিচিত অথবা অন্তত এলাকার লোক হলে তার কাছ থেকে ভাল চিকিৎসা সুবিধা পাবার একটা আকাঙ্খা মনের মধ্যে জন্মায়। ডাক্তার বদিউজ্জামান এলাকার লোক শুনে মনের মধ্যে জোর পেলাম। তিনি অবশ্য রাগত স্বরে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জানালেন তাঁর কোন ঘর বাড়ি নেই!
তৃতীয় দিনে এসে দুলাভাই বমি করতে লাগলেন। পেটের ভেতর কিছুই নাই। বমি করতে কষ্ট হচ্ছে। ওষুধ খাবার পর হেঁচকি উঠতে লাগল। থুথুর সাথে লাল রঙের কি যেন বের হচ্ছে। কষ্ট কমানোর জন্য ডাক্তার নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে দিলেন। নল দিয়ে লাল আবার কখনো ডোবা পুকুরের শ্যাওলার মত পানি বের হচ্ছে।
দুলাভায়ের বেড নম্বর ৯০৮, নয় তলায়। পাশের কেবিনে দু’দিন আগে এক মহিলা তিনটি কন্যা সন্তান উপহার দিয়েছেন! আরেক মহিলা সে কেবিনে এসেছেন - তাঁকেও বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। পরদিন নার্সদের হাসিমুখ দেখে জানতে পারলাম তিনিও মাশাল্লাহ দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান উপহার দিয়েছেন। আমার বন্ধু শুনে বলল, আজকাল দেখছি মানুষ আর গরু ছাগলে কোন পার্থক্য নাই!
নয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। ঢাকার যানজট উপভোগের সবচেয়ে ভাল জায়গা। আজ বেরিয়াম এনিমিয়া টেষ্ট হবার কথা ছিল কিন্তু মেশিন খারাপ থাকায় হয়নি। ডাক্তার রক্ত দেয়ার কথা বললেন। মামুন মামা সন্ধানীর দুটি কার্ড দিয়েছিল সেটা দিয়ে সহজেই দুই ব্যাগ রক্ত পাওযা গেল। পরদিন ডাক্তার এসে জানতে চাইল রক্ত ক্রশম্যাচ করা হয়েছে কিনা। ক্রশম্যাচ করা হয়নি শুনে ডাঃ বদিউজ্জামান ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। এমনিতে তিনি বদমেজাজী - কথায় আন্তরিকতার ছিটেফোঁটাও নাই। দুলাভায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সাথে করে কি এসব লোকজন এনেছেন, একটাও কাজের না - সব অথর্ব!’ ডাক্তারির সবকিছু নিশ্চয়ই আমাদের জানবার কথা না। নার্স বা ডাক্তার কেউ-ই আমাদের ক্রশম্যাচের কথা বলেনি। রক্ত আনার পর নার্স ব্লাড ব্যাঙ্কে রেখেছিল। আমি, বদরুল ভাই, এমদাদ ভাই দাঁড়িয়ে আছি। ডাক্তার কটাক্ষ করে বলল, ‘আপনাদের এলাকার সব লোকই কি এমন গাধা নাকি।’ আমার মাথায় আগুন ধরে গেছে, মনে হচ্ছে শালার নাক ফাটিয়ে দিই। তবু মাথা ঠান্ডা করে বললাম, ‘না আপনিও যখন সে এলাকার তখন সবাই গাধা (!?) এমন কথা বলি কি করে।’
প্রফেসর এসে সব কথা বুঝিয়ে বললেন। দুলাভায়ের পাকস্থলীতে ক্যান্সার এবং তা পুরো খাদ্যনালীতে ছড়িয়ে গেছে। প্রথম দিকে হলে হয়ত কিছু অংশ কেটে বাদ দেয়া যেত। অপারেশন করার প্রথম বাধা হল স্যালাইন দেয়ার ফলে পুরো নাড়ী ভুড়ি পানির উপর ভাসছে। বাতাস পেয়ে ক্যান্সার আরও ছড়িয়ে যেতে পারে। দুলাভায়ের আবার ডায়াবেটিস আছে, ফলে অপারেশনের কাটা জায়গা না শুকালে পুজ রক্ত বের হতে পারে। এমনকি শরীরের যা অবস্থা তাতে ও.টি.তে গিয়ে জ্ঞান নাও ফিরতে পারে। এসব বিভিন্ন কথা। মেজ দুলাভাই ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে কাগজ পত্র দেখিয়ে বিভিন্ন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলেন। সবার একই কথা। আপা কাঁদছেন। আমাদের স্বান্তনা দেয়ার মত কোন ভাষা নেই। আপাকে বললাম, আপনি চাইলে আমরা অপারেশন করাতে প্রস্তুত অন্তত মানষিক শান্তির জন্য কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন Ñ যদি ওটিতে জ্ঞান না ফেরে।
মৃত্যুই যখন শেষ অবধারিত পরিনাম তখন বাড়ি ফেরৎ নিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু হাসপাতালের বিল পেমেন্ট নিয়ে বিপত্তি বাধল। বেরিয়াম এনিমিয়া টেষ্ট বিল দু’বার করা হয়েছে! অথচ এই টেষ্ট করাই হয়নি। টেষ্ট না করা সত্ত্বেও বেরিয়াম এনিমিয়া আর ইসিজি’র বিল পরিশোধ করতে হল!
ডাঃ বদিউজ্জামান আমাদের কদিন আগেই রোগীকে বাড়ি ফেরত নিয়ে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু অন্য ডাক্তার দেখাতে গিয়ে তিন দিন দেরী হল। চলে আসার সময় তিনি বিড়বিড় করে বলছেন, ‘ব্যাটাদের আগেই নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম তখন আমার কথা শুনোনি, এখন তবে নিয়ে যাচ্ছিস ক্যান!’ বদিউজ্জামান তোমার হয়ত খুব কাছের আপনজন মারা যাবার অভিজ্ঞতা হয়নি। তাই বোঝনি এর কষ্ট কতটুকু, যেদিন খুব প্রিয় একজন নিশ্চিত মৃত্যু পথযাত্রী হবে Ñ সেদিন তুমি আমাদের মত ছুটোছুটি করবে নাকি নির্লিপ্ত থাকবে তা জানতে আমার বড় ইচ্ছা করে। ডাঃ তোমার সেই সুখের মুর্হুতের প্রত্যাশায় রইলাম। আর হাসাপাতাল কতৃপক্ষের কাছে জানতে ইচ্ছা করেÑহাসপাতালের লোগো’তে যে লেখা আছে (উরংপরঢ়রহব রং ষরভব) ‘শৃঙ্খলাই জীবন’ Ñ এটা কি শুধু রোগীদের জন্য, নাকি ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
কারসিনোসিস, হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সারের খুব ভাল ওষুধ। চাচা এটা খাওয়াতে বলেছেন। দোকানে আনতে গিয়ে দোকানী বলল, ‘নিয়ে যান এটা স্তন ক্যান্সারের খুব ভাল ওষুধ।’ আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘এটাতে আবার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে নাতো?’ Ñ‘আরে না না, কি যে বলেন।’ দোকানী মাথা দোলাল। আমি বললাম, ‘না মানে বলছিলাম যে ক্যান্সার আমার দুলাভায়ের কোন মহিলার না।’
দোকানী মনে হল এবার একটু ধাক্কা খেল। কম্পাউন্ডার পুচকে ছোঁড়া। আমার কথা শুনে দামড়াটা মিটমিটে চোখে হাসছে।
প্রায় দেড় মাস পর দুলাভাই মারা গেলেন। বিভিন্ন জায়গায় খবর দেবার পর ফিরে এসে দেখি, আপার কানে নাকে গয়না নেই। কিভাবে ওগুলো খুলে নেয়া হয়েছে আমি দেখিনি। তবে আব্বা মারা যাবার সময় মা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল, তখন কে যেন হ্যাঁচকা টানে মা’র নাক ফুল খুলে নেয়। সেভাবেই নাকি তাড়াতাড়ি খুলে নিতে হয়! আমি জানি না এটা কোন ধর্মীয়, নাকি সামাজিক বিধান। তবে যে বিধানই হোক না কেন এটা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
সময় কত দ্রুত চলে যায়। আব্বা, দুলাভাই আপনাদের কত দিন দেখি না। দুলাভাই আমাদের খুব মজার মজার গল্প শোনাতেন। আর কখনও একসাথে বসে সে মজার গল্প শোনা হবে না । একথাটা মনে হলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। আপনাদের তখন খুব বেশী মনে পড়ে। আব্বা আপনাকে দেয়া শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সনদপত্রটা পড়ার সময় আমি কোনভাবেই নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে বালিশটা ভিজে গেছে। তারপর তোমার ছবি দেখছিলাম। আমাদের সব ভাইবোনের সাথে তুমি আর মা। আর কখনো তুমি আমাকে কান ধরে শাসন করবে না, দুপুর বেলায় একসাথে বসে খাবে না, একসাথে গ্রুপ ছবি তোলা হবে না । এ আমি ভাবতে পারি না। তখন একা একা ছাদে চলে যাই। আকাশের দিকে তাকিয়ে কোটি তারার মাঝে তোমাকে খুঁজতে থাকি... কোনটি তুমি...
রচনা সময় # ডিসেম্বর’ ২০০১
লেখাটি রহস্যপত্রিকা - জুন ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত
আলোচিত ব্লগ
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন