somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ এটা গল্প হতেও পারতো ...

১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- শোন আমাদের এই প্রেমের একটাই নাম দেওয়া যায় "বিরক্তিকর প্রেম "
- মানে ? !!
- মানে কি আবার বিরক্তিকর প্রেম ।
- কি বলতে চাস তুই ?
- যা বলার তাতো বললামই !!
- আজ এতবছর পর তোর এই মনে হল ?
- এত বছর পর কেন প্রথম থেকেই একরকমই মনে হচ্ছিল আজ বললাম ।
- তাই তাহলে একটা ভাল প্রেম খুজে নে আমি চললাম ।
পরিস্থিতি নাগালের বাইরে , হাতটা ধরে বললাম একটা প্রশ্ন আছে
- কি?
- আচ্ছা এতবছর পর তুই আমাকে কতটুকু চিনলি ?
আমি আঁখি নামের মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি । ওর চোখ একটা প্রশ্নেরর উত্তর খুঁজছে ...
ওকে খুজতে দেওয়া উচিত এর মধ্য আমার একটু স্মৃতি ভ্রমণ করা উচিত ।
আঁখির সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটি কোচিং করতে গিয়ে । নাম জানা পরিচয় । কথা বার্তা হত খুব কম ।
প্রথমবার কারোই ভার্সিটি হয় নাই সম্পর্ক তখনই বলতে গেলে শুরু আমি আর আঁখি একি ডিপার্টমেন্টে আর সুজন রসায়নে ।
আমাদের মাঝখানে সুজন কই দিয়া আসলো । ওতো আসবেই আমাদের দুইজনের সবচেয়ে ভাল বন্ধুটির নাম সুজন । সুজনকে নিয়ে পরে একদিন বলব ।
ক্লাসের পর আমাদের প্রতিদিন আড্ডা হত ।
আপনারা এত তারাতারি প্রেমের গন্ধ পাচ্ছেন তাহলে হবে ?
গল্পে বিচ্ছেদের দরকার আছে এবার বন্ধুদের বিচ্ছেদ হবার পালা পরের বছর সুজন ঢাকা একটা ভার্সিটিতে চান্স পেল , আর আঁখি খুলনা ততদিনে বেশ ভাল একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল । একা রইলাম আমি ।
আমি আমার পুরনো বন্ধুদের মাঝেই থেকে গেলাম । দূরত্ব বাড়ল , পরিবর্তন হল সম্পর্কের । সুজন আরও কাছে আসলো আঁখি দূরে গেল ।
যোগাযোগটা কমে গেল একটা পর্যায়ে শূন্যের কোঠায় । একটা কাজ ও সবসময় করত আর সেই কাজ আমি কখনো করতাম না, "বার্থডে উইস" ।
কথা, বলতে গেলে ঐ সময়ই হত আমাকে উইশ করার সময় আর ওর উইশ না করার সময় । রাগ হয়ে আমাকে ফোন দিত তার পর ঝারত গালাগালি
করত আমি মনে হয় ওর ঐ গালাগালির প্রেমে পরে গেছিলাম

অনেক দিন পর ......
ততদিনে অনেক গাছের অনেক পাতা ঝরে পরেছে, অনেক পাখির বাসা ভেঙ্গেছে, হয়ত আখিরও ভেঙ্গেছে

- শালা , শয়তান ,বান্দর , কুত্তা !!
- মানে কি
- এতদিন খবর নিশ নাই ক্যান?
- আঁখি খবর নেওয়ার কথা ছিল তোর লাস্ট ফোনটা আমি করেছিলাম ।
- হুম হইছে ক্যামন আছিস
- তোমারে ছাড়া কি ভাল থাকা যায় সোনা?
- হইছে আর দরদ দেখাতে হবে না
- আচ্ছা দেখামু না তা তোর কি খবর ক ? ( আমি ইতোমধ্যে ভদ্রলোকের ভাষা ছেড়ে আঞ্চলিক ভাষায় অবতরণ করা শুরু করছি)
- কোন খবর নাই ।
- তা তোর ছ্যাকা খাবার কি খবর ?
- নো ছ্যাকা
- হ হইছে তুমি ছ্যাকা না খাইয়া পুরান বয়ফ্রেন্ড রে মনে করবা এইটা আমি বিশ্বাস করি ?
কথা চলতেই থাকে ...
এরপর প্রায়ই কথা হত বলা যায় প্রথম প্রেমের দ্বিতীয় শুরু ।
নাহ প্রেমে পড়ার সময় এখনো হয়নি অনেক কথা হলেও প্রতিদিন হত না ২-৩ দিন পর পর ম্যারাথন কথা
এরপর সে সিদ্ধান্ত নেয় ভালোবাসা দিবসে সবাইকে ভালোবাসা বিলবে ফেসবুকে আইডি খুলবে । খুলুক
এরপরের টা গল্প...
ফেসবুকে সাধারনত কাউকেই আমার চ্যাটে নক করা হয় না গল্প করার জন্য ।
নক করত আঁখি
- জানু
- বলো ।
- খাইছ
- নাহ তুমি
- নাহ এখন রান্না করব করব তারপর খাব
- আহা কি কষ্ট !!
- তুমি খাইয়া নাও গো
- এহ কি দরদ এত ভালোবাসা কই যে রাখি
- পকেটে রাখো
- তোমার যে ভালোবাসা তা রাখতে হলে পকেট কাইটা ছোট করতে হবে ।
- আমি কিন্তু কাইন্দা দিমু
- টয়লেট টিস্যু দিমু ?
- দরকার নাই তোর টিস্যু তুই রাখ
- আছে আছে যার যা লাগে তারে তো তাই দিতে হবে
- তাই
- হুম
- কুত্তা,হারামজাদা,বান্দর ।
- তোর যে এত রুপ আগে জানতাম না
- আমি জানতাম
- তুই তো জানবিই বুড়ি
- হুম তুই তো বাচ্চা
- ওকে লেটস চেক ইট .........
এইভাবেই চলতে ছিল আমাদের কথা তুমি দিয়ে শুরু তুইতে শেষ মাঝখানে রোমান্টিক, নরম, গরম,সামাজিক, অসামাজিক সকল কথাই বলা হত । চলছিল ভালই...
প্রেমে পরতে হলে একটা টুইস্ট এর দরকার হয় আমাদের মাঝেও হল তা হলো ,একটা ভুল বোঝাবুঝি কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ । তখনই বুঝেছিলাম প্রেমে পরেই গেছি ক্রেন দিয়েও আর উঠানো যাবে না ।
সব ঠিক হল বলতে গেলে ওই সব ঠিক করল । তারপর থেকে আমার প্রেম মিশন শুরু !! তথাকথিত উপায়ে আমার দ্বারা প্রেম সম্ভব না একটু অন্য উপায়ে যেতে হবে শুরু হল সাহিত্য চর্চা তবে অখাদ্য সাহিত্য চর্চা এবং তার উদ্গিরন হত আঁখির ফেসবুক ওয়ালে, উদ্দেশ্য ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে আমাকে ভালোবাসি বলা !! আচ্ছা আমি ওর ওয়ালে লিখছি তাতে ও আমাকে ভালবাসি কেন বলবে ?
প্রথমতঃ ওর আর আমার অবস্থান টা ভিন্ন আমার পাগলামিতে কে কি মনে করে তাতে আমি খুব কমই কেয়ার করি কিন্তু ওর কেয়ারিংটা বেশি ।
দ্বিতীয়তঃ ওর ওয়ালে ওর স্যার সিনিওর,জুনিয়র আছে,আর সেটাই আমার বড় এডভান্টেজ ও আমাকে কিছু বলতেও পারবে না সহ্য ও করতে পারবে না । আমাদের ভিতর বন্ধুত্বটা নষ্ট করা ওর আর আমার কারো পক্ষেই সম্ভব না । তাই রিস্ক নিয়েই কাজটা করেছিলাম ।
তৃতীয়তঃ প্রত্যেকটা মেয়ের ভিতরই কাছাকাছি থাকা ছেলের প্রতি একটা সফট কর্নার থাকে ।
বলাই যায় আমি সফল ৪-৫ দিনের মাথায় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আমাকে ফোন দিল ২দিন ফোন রিসিভ করি নাই তারপর আবার চ্যাটে
- কি শুরু করছিস তুই?
- শুরু করার তো কিছু নাই
- এই সবের মানে কি ?
- মানে না বোঝার মত ছোট তুমি না
- তুই কি যা বলছিস বুঝে বলছিস?
- হা বুঝেই বিলছি
- তুই কি সিরিয়াস?
- হ্যাঁ
- আমি আবার বলছি তুই কি সিরিয়াস?
- হ্যাঁ
- আমি শেষবার বলছি তুই কি সিরিয়াস?
- প্রশ্ন যতবার হোকনা না কেন ২+২ এ চারই হয় ।
- ওকে আমাকে ফোন দে
ফোন দিয়েছিলাম সুখের ফোন অনেক শর্ত সাপেক্ষে আমাদের "বিরক্তিকর ভালোবাসার" হালখাতা খোলা হল যদিও তার শর্তের কোনটাই আমি পুরন করি নাই এখনো !!
কি হইছে বুড়া বয়সে ভীমরতিতে ধরছে ? ধাক্কা খেয়ে স্মৃতি ভ্রমণ থেকে ফেরত আসলাম এখন বাস্তবে আমি
- আরে বাপজ বুড়া হলাম কিভাবে আর ভীমরতি মানে কি ?
- বিয়ের পাঁচ বছর পর বউয়ের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলে ওটাকে ভীমরতি বলে ।
হ্যাঁ আমাদের দেখতে দেখতে বিয়ের পাঁচ বছর পার করে এসেছি কিন্তু তারপরও আমরা নিয়ম করে ঝগড়া করি, । অফিস ফাকি দিয়ে, বাবা মাকে ফাকি দিয়ে ডেটিং করি মাঝে মধ্যে ধরাও খাই
এবং আমাদের ৪ বছরের ছেলের কাছে মিষ্টি বকাও খাই । এবং ডেটিং এর এই সময়ে আমরা তুমি শব্দটা ভুলে গিয়ে তুই বলি । Allz are happening in oUr love .
- চলো বাসায় যাই ।
- চলো ...

কি গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হল ? চলেন তাহলে নামকরণের সার্থকতা খুজি !!
গল্পের রিক্যাপ হোক , সমবয়সী একটা মেয়ে একটা ছেলের থেকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড হয় আঁখি তার প্রমাণটা ভালভাবেই দিয়েছিল যেদিন আমি ওকে প্রপোজ করি..
আমাদের ভিতর বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই সব থেকে ভাল ও বুঝাতে বাধ্য করেছিল সেদিন সেই ফোনে । কোন সম্পর্ক আবেগে হয় না বাস্তবতাটা অনেক জরুরী । ভার্সিটির ফার্স্ট গার্ল জাতীয় ভার্সিটির শেষ সারির
ছেলেটির সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে প্রেম নামের সম্পর্কটা সিনেমায় হয় । অতএব প্রেম হয় নি ।
কি গল্পের আনহ্যাপি এন্ডিং হল ? হ্যাঁ হতেও পারে ... তাইতো এটা গল্প হতেও পারতো ...
ঐযে টুং করে একটা শব্দ হলো
-শালা কতক্ষণ ধরে ম্যাসেজ দিচ্ছি কই গিয়া মরছস?
-নাগো তোমারে ছাড়া কি মরতে পারি ...

পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×