আজ সে বিশেষ দিন। তোমার সাথে আবারো আমার দেখা হবে। সব কিছু শুরু হয়েছিল, যখন তুমি ছিলে মোবাইলের ভিপ ভিপ করে জ্বলতে থাকা সবুজ বাতি। শুধুমাত্র একটি আওয়াজ। ডিজুসে ২টাকায় সারারাত কথা যে হাজারো অদেখা প্রেমের জন্ম দিয়েছিল, তারমধ্যে আমরাও ছিলাম। অবশ্য আমাদের প্রেমটা অদেখা থাকেনি। স্কুল ফাকি দিয়ে ১৯৬কি:মি: পথ অতিক্রম করে সাড়ে চার ঘণ্টা পর যখন কুমিল্লা পৌঁছালাম, তখন তুমি বিশ্বাস করতে পারছিলেনা! মৌলভীবাজার থেকে একটা ছেলে তোমার সাথে দেখা করতে চলে এলো! এরপর আরো ২ঘণ্টা অপেক্ষার পর তুমি এসেছিলে মাত্র ৫মিনিটের জন্য!! কিন্তু ঐ ৫মিনিটই যথেষ্ট ছিল। আমার বাকিটা জিবন তোমার সাথে যুক্ত করতে।
আমরা বড় হলাম, সাথে সাথে আমাদেন প্রেমটাও। তুমি সিলেটে এসে কলেজে ভর্তি হলে, আর আমরা কাটানো শুরু করলাম আমাদের জিবনের সবচে' স্মরণীয় অধ্যায়। তখন বলতে গেলে প্রতিদিনই দেখা হতো।
...আর এখন চাইলেও দেখা করা যায়না।
আমরা রিক্সায় প্রচুর ঘুরেছি। তুমি বলতে, আমি রিক্সার ডান পাশে বসলে তোমার জন্য আমার কাধে মাথা রাখা অনেক সহজ হয়। রিক্সার চাঁকা ঘুরতো। তুমি চোখ বন্ধ করে আমার কাধে মাথা রাখতে আর আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে সুখি মানুষ বলে মনে হতো। কতই না ভালবাসতে তুমি আমাকে!
আচ্ছা, তুমি এখন যার সাথে আছো, তাকেও কি তুমি সেই একি রকম ভালবাস!?
ভালবাসতাম আমিও তোমাকে। মনে আছে? একবার প্রচন্ড গরমে তুমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলে। তোমাকে অজ্ঞান দেখে আমার যে কি অবস্থা হয়েছিল!! তোমার জ্ঞান অল্প কিছুক্ষের মধ্যে ফিরে আসলেও, আমাকে স্বাভাবিক করতে কিন্তু তোমাকে অনেক ভুগতে হয়েছিল। সিলেট মডেল থানা কি কখনো ভুলতে পারবো আমরা! ঐ থানার সামনে তুমি প্রথমবার আমাকে কিস্ করেছিলে!! তোমার সাহসও ছিল বটে। ভিতু তো ছিলাম আমি। তাই সময় থাকতে তোমাকে অর্জন করতে পারিনি! মনে আছে, পোলার রোডের আইল্যান্ডের উপর, কুয়াশার চাদর আমাদের আলাদা করে ফেলত বাকি পৃথিবী থেকে! তখন আমাদের শরীর যত কাছে ছিল, মন ছিল তারচেয়েও কাছে।
এখন সব কিছুই দূরে,, বহু দূরে।
অন্যান্যদের মতোই আমাদের মধ্যেও জগড়া হতো। তবে শেষের দিকে জগড়াটা একটু বেড়েই গিয়েছিল। তুমি বিয়ের কথা বলতে আর আমি কেরিয়ারের কথা ভাবতাম। আরো এস্টাবিল্স্ হওয়ার কথা ভাবতাম। বলতাম বিয়ের জন্য বাকি জিবন তো পরেই আছে! তোমার কথা, বিয়ের জন্য তোমার পরিবারের চাপের কথা কিছুই না আমি ভাবতাম না। অনেক স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। অনেক বেশি!! শেষ যেদিন তোমার সাথে আমার কথা হলো, সেদিন আমার জ্যাকাট-টা বুকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কেঁদেছিলে! কিন্তু আমি না কিছুই করতে পারছিলাম না।..
এরপর ৫টি বছর কেটে গেল। আজ তোমার সাথে আমার আবারো দেখা হবে। অবাক হই এটা ভেবে যে, তোমার জামাই কিভাবে এখনো তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে দেয়!! আমি হলে কিন্তু জিবনেও দিতাম না। হাহাহা।..
.. ঐ যে তুমি চলে এসেছো। হাতে বরাবরের মতোই গোলাপ ফুল। ফুলগুলো আস্তে করে তুমি আমার কবরের উপর রাখলে। যদিও কবরটা এখন আর আমার না। গত ৫বছরে এখানে প্রায় ১০জনকে দাফন করা হয়েছে। যাই হউক, তোমার কান্না শুরু হয়েছে। আমি জানি তোমার কান্না আরো বাড়বে। বাড়তেই থাকবে। সেদিন এক্সিডেন্টের পর যখন আমি হাসপাতালে নিজের শেষ নিঃশ্বাসগুলো গুনছিলাম, তুমি আমার জ্যাকাট-টা বুকে জড়িয়ে এভাবেই কাঁদছিলে। পাগলের মতো কাদছিলে!!
আমি খুব ছোটবেলায় টল্স টয়ের একটা উক্তি পড়েছিলাম। যেখানে উনি বলেছিলেন, অতীত বা ভবিষ্যৎ বলে কিচ্ছু নেই। বর্তমানটাই সব। আমাদের কিছু বলার থাকলে এক্ষুণি বলতে হবে। করার থাকলে এক্ষুণি করতে হবে। ভলবাসতে হলেও এক্ষুণি বাসতে হবে। ভবিষ্যৎ একটা মরিচীকা। এখন আমার খুব মনে হয়, যখন তুমি আমার সামনে ছিলে, তখন কেন আরেকটু ভাল করে তোমাকে দেখলাম না, স্পর্শ করলাম না, অনুভব করলাম না! টল্স টয়ের উক্তিটা আমি শুধুই পড়েছিলাম। ধারণ করতে পারিনি। আসলে আমরা কেউই পারিনা।-
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৪২