বিউটি সার্কাস কেবলমাত্র বাপের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার চলচিত্র না। শতভাগ রাজনৈতিক ও সেই সাথে নারীর সাহসের বয়ানের চলচিত্র। ধর্মের আড়ালে মৌলবাদীদের দেশ বিরোধী, সভ্যতা বিরোধী, জাতি বিরোধী অপকর্মের ফিরিস্তিরও চলচিত্র বিউটি সার্কাস।বিউটি সার্কাস মুক্তিযদ্ধের চলচিত্র তো বটেই। আর বিউটি সার্কাস নিছক বিনোদনের জন্য না!
বিউটি সার্কাসের গল্পটা একজন হতভাগ্য কিন্তু লড়াকু অদম্য সাহসী কন্যার যে তাঁর পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে সচেষ্ট আবার একই সময়ে সে দেশ কাল সমাজ ও রাজনীতি সচেতন লড়াকু একজন মানুষও। এই বিবেচনায় বিউটি সার্কাস মিস বিউটি অর্থাৎ জয়া আহসান নির্ভর চলচিত্র বা আরেকভাবে বললে নায়িকা নির্ভর চলচিত্র। তবে, বিউটি সার্কাস কে নায়িকা নির্ভর চলচিত্র না বলে গল্প নির্ভর চলচিত্র বলাই শ্রেয় ও ন্যায় সঙ্গত হবে। গল্পই মূল।
চিরকুটের সুমির গান পাবেন বিউটি সার্কাসে । এই গান থাকায় মনে হতে পারে বিউটি সার্কাস শহুরে মধ্যবিত্তের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সার্কাস তো শহর গ্রাম সব জায়গারই, সব ধরনের মানুষের জন্যই একটা সময় পর্যন্ত ছিল । সার্কাস নিয়ে এতো সুন্দর চলচিত্র বাংলায় আর দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। সার্কাস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই কাজটি অসাধারণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই দিকটি জানা মতে কোথাও উঠে আসেনি এর আগে। না সাহিত্যে না চলচিত্রে, বিউটি সার্কাস অনন্য ও ইতিহাসে প্রথম। এই কাজের জন্য নির্মাতা মাহমুদ দিদারকে স্যালুট।
বিউটি সার্কাসে দেশের ডাকসাইটে অভিনেতা- অভিনেত্রী থাকায় অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিউটি সার্কাস এদিক দিয়ে সৌভাগ্যবান। মূল চরিত্র জয়া আহসান কে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নাই। জয়ার বয়স দিনকে দিন আসলেই কমছে। তৌকির, ফেরদৌস, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ, এবিএম সুমন, সাধু যে মুভিতে থাকেন সেই মুভিতে অভিনয় খারাপ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না আসলে। তবে এবিএম সুমন ও তৌকিরকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়নি মনে হয়েছে। আরেকভাবে বললে নবাব চরিত্রটিতে তৌকির তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। আর রংলাল এবিএম সুমনকে স্ক্রীনে আরো সময় দিলে আমার মত দর্শকদের আরো ভাল লাগত হয়তো। রংলাল চরিত্রটিও আরো স্পষ্ট ও গোছালো হয়ে উঠতে পারতো। সাধুকে আর কোথাও পাবো না আমরা, বিউটি সার্কাসে প্রাণোচ্ছল সাধুকে দেখে মন ভারি হয়ে উঠেছে দর্শকদের এটা নিশ্চিত করে বলা যায় ।
মৌলবাদীদের নৃশংসতা-বিভৎসতা আরো আর্টিষ্টিক, আরো স্পষ্টভাবে দেখানোর সুযোগ ছিল। নির্মাতা এই জায়গাটায় আরো মনযোগী হলে ফলাফল আরো ভাল হত। চরিত্র ও ঘটনা নির্মাণে কখনো কখনো তাড়াহুড়ো করা হয়েছে মনে হবে। আবার কখনো কখনো ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু কিছু জায়গায় স্কীপ করা হয়েছে মনে হতে পারে। কিন্তু তাতে চলচিত্র দেখার আনন্দ বা একাগ্রতা নস্ট হয় না।মূল চরিত্র নারী বা নায়িকা প্রধান চলচিত্র নির্মাণে সাহসের দরকার। মাহমুদ দিদার সেই সাহস সততার সাথে দেখিয়েছেন। আমরা দর্শকরা কতটা প্রস্তুত সেটা গ্রহণে, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাচ্ছে।
বিউটি সার্কাস নিয়ে ভিন্ন আরেকটা আশংকা আছে আমার বিবেচনায়। বিউটি সার্কাসে মৌলবাদ ও মৌলবাদীদের অপকর্ম খালি চোখে যেভাবে দেখানো হয়েছে, এদেশের মানুষ সেই বয়ানের সাথে এই সময়ে পুরোপুরি সহমত হবেন কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। তাই, বিউটি সার্কাস শেষাবধি ব্যাপোক সমাদৃত চলচিত্র হয়ে উঠতে পারবে কি না সেই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
আমরা মানি বা না মানি, এদেশের মানুষের র্যাডিকালাইজেশন হয়েছে ব্যাপোক মাত্রায় । এর বড় উদাহরণ পিনাকী ভট্টাচার্য্যের মত মানুষের ব্যাপোক সংখ্যকের মধ্যে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা । খুব অবাক হব না, পিনাকী ভট্টাচার্য্য বিউটি সার্কাসকে ইসলাম বিরোধী চলচিত্রের তকমা দিয়ে দিলে! যেমনটা সে 'দামাল' এর ট্রেলার দেখেই দামালের ক্ষেত্রে করেছে।
বিউটি সার্কাসের রাজনৈতিক বক্তব্য এদেশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন সকলেরই বক্তব্য। আমরাও চাই, এই জমিনে সকলের হক আদায় হোক!
এই আসমান বিউটি সার্কাসের তাবু
এই জমিনে আমাদের হক আছে
বিউটি সার্কাস আছে
বিউটি সার্কাস থাকবে
-মিস বিউটি, বিউটি সার্কাস দলের অধিপতি