somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকরাইলের লবণ

৩০ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাকরাইল মসজিদ হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বাঙলাদেশের মারকাজ। এখান থেকে বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতে তাবলিগের কাজ পরিচালিত হয়, এমন কী বিদেশি জামাতগুলোও এখানেই প্রথম আসে তারপর যায়, বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে।

তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেকের খারাপ ধারণা, ভুল ধারণা, বিতর্কিত ধারণা রয়েছে। সে-সবই না জানার ফসল। আমি এখানে তা নিয়ে কিছু বলবো না। আর আমার কথার সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ ছবি দিতে পারলাম না, কারণ সেখানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ, তবে আশা করি যে, কেউ ইচ্ছে হলে গিয়ে দেখে আসবেন। হ্যাঁ, নারীরা কেউ কিন্তু পারবেন না!

যেটা নিয়ে বলবো, তা হচ্ছে একটা ভয়াবহ দৃষ্টিকটু ব্যাপার। দুধের মধ্যে একটু অপবিত্র কিছু পড়লে পুরো দুধটাই অপবিত্র হয়ে পড়ে—এমন একটা উদাহরণ প্রায়ই দাওয়াতের সময় অনেকে বলেন। আর এই ব্যাপারটা ঘটেছে খোদ কাকরাইলেই! কিন্তু তাঁরা ব্যাপারটা নিয়ে তো চিন্তিত নন-ই বরং স্বীকার করতেও তাঁদের সমস্যা আছে।

কিছুদিন আগে কাকরাইলে গিয়েছি আমাদের হাল্কার পাহারার জামাতে শরীক হতে। আমার দায়িত্ব পড়লো খেদমত, অর্থাৎ, জামাতের সাথীভাইদের জন্যে রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছাসহ, পরিবেশনের কাজ। রান্না করতে গেলাম কাকরাইলের মূল রান্নাঘরে। বর্তমানে রোজার মাসে কাকরাইলে অবস্থানরত জামাতবন্ধী মানুষের ইফতার, সেহ্‌রী ও রাতের খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। শুনেছি ঢাকার লালবাগ এলাকার সাথীরা এর জন্য অর্থায়ন ও খেদমতে জড়িত। জিজ্ঞেস করে জানলাম প্রতিবেলা প্রায় ৪০০-৬০০ কিলো চালের ভাত রান্না হয়। বিশাল আয়োজন। বাজার করার জন্য তাঁদের পিকআপ আছে, প্রতিদিন একটা গরু নাকি জবাই হচ্ছে, বিশাল আয়োজন। আল্লাহ্‌ তৌফিক দিয়েছেন, তাঁরা করছেন।

নিজে খারাপ বলেই হয়তো, এতো ভালো কিছু মধ্যে আমার চোখ গেলো লবণের বস্তার দিকে। উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য আয়োডিনবিহীন লবণ; আমি তো থ! যতোদূর জানি, এটা আইনের লঙ্ঘন, কারণ মূলত চামড়াশিল্পে এই লবণ ব্যবহৃত হয়। তাঁরা জেনেশুনে টাকা বাঁচানোর জন্য এ কাজ করছেন। আর কাকরাইলের এতো হর্তাকর্তা (তাঁদের ভাষায় মুরুব্বি) তা চোখ বুজে দেখছেন। যদি তাঁরা বলেন যে, তাঁরা খেয়াল করেন নি, তবে তা তাঁদের দায়িত্বের অবহেলা বৈ কিছুই নয়।

একজনকে ব্যাপারটা জানালাম। তিনি যুক্তি দিলেন, এটা কেনো সমস্যা নয়, এখানে সকল মাখলুককে অস্বীকার করা হয়, তাই এতে কিছু হবে না। কী আর বলবো, মাখলুককে অস্বীকৃতি—এই শব্দের অপব্যবহার প্রায় সর্বত্র। জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবস্থা নেই, সাপ্লাইয়ের পানিতে রোগজীবাণু থাকতে পারে এ দিকে কোনো খেয়াল নেই। আল্লাহ হেফাজত করবেন। মাখলুকের কী ক্ষমতা আছে রোগ সৃষ্টির?! আর যদি আপনার ডায়রিয়া-আমাশয় হয়েও যায়, তবে তাঁরা বলবেন: রোগের ফলে গুনাহ্‌ মাফ হয়। এভাবে বলা শুরু করলে তর্কে কী আর জিততে পারবেন?

তবে একটা কাজ করা যায়, মোবাইল কোর্ট তো আছে। তাঁরা যদি এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন। বেশি না সাবধান যদি করেন, আর পত্রিকায় যদি নিউজ যায়, তাহলেই আমার মনে হয়, সব ঠিক হয়ে যাবে। কাকরাইল কতৃপক্ষ ঠিক করে ফেলবেন। তা ছাড়া টনক নড়ার সম্ভাবনা কম, কারণ আমার ধারণা, ধর্ম সেখানে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির স্লুইস গেট সীমিত আকারে খোলা রেখেছে। কাকরাইলের অনেক অব্যবস্থাপনা তাই তাঁদের চোখে হয়তো আসে না, আসলেও তা পূণ্যের বাহুডোরে, সাধারণত বিচারবুদ্ধির স্লুইস গেটের আগেই আটকা পড়ে।

ধর্মের সাথে আধ্যাত্মিকতা জড়িত। আধ্যাত্মিক কারণে তাই অনেক কিছুই জায়েজ, কিন্তু যে দেশে এর চর্চা করা হচ্ছে, তা যতোই আধ্যাত্মিক হোক না কেন, আইনের বিরুদ্ধে গেলে তা নাজায়েজ এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তি পাওয়াটা জায়েজ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×