কাকরাইল মসজিদ হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বাঙলাদেশের মারকাজ। এখান থেকে বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতে তাবলিগের কাজ পরিচালিত হয়, এমন কী বিদেশি জামাতগুলোও এখানেই প্রথম আসে তারপর যায়, বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে।
তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেকের খারাপ ধারণা, ভুল ধারণা, বিতর্কিত ধারণা রয়েছে। সে-সবই না জানার ফসল। আমি এখানে তা নিয়ে কিছু বলবো না। আর আমার কথার সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ ছবি দিতে পারলাম না, কারণ সেখানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ, তবে আশা করি যে, কেউ ইচ্ছে হলে গিয়ে দেখে আসবেন। হ্যাঁ, নারীরা কেউ কিন্তু পারবেন না!
যেটা নিয়ে বলবো, তা হচ্ছে একটা ভয়াবহ দৃষ্টিকটু ব্যাপার। দুধের মধ্যে একটু অপবিত্র কিছু পড়লে পুরো দুধটাই অপবিত্র হয়ে পড়ে—এমন একটা উদাহরণ প্রায়ই দাওয়াতের সময় অনেকে বলেন। আর এই ব্যাপারটা ঘটেছে খোদ কাকরাইলেই! কিন্তু তাঁরা ব্যাপারটা নিয়ে তো চিন্তিত নন-ই বরং স্বীকার করতেও তাঁদের সমস্যা আছে।
কিছুদিন আগে কাকরাইলে গিয়েছি আমাদের হাল্কার পাহারার জামাতে শরীক হতে। আমার দায়িত্ব পড়লো খেদমত, অর্থাৎ, জামাতের সাথীভাইদের জন্যে রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছাসহ, পরিবেশনের কাজ। রান্না করতে গেলাম কাকরাইলের মূল রান্নাঘরে। বর্তমানে রোজার মাসে কাকরাইলে অবস্থানরত জামাতবন্ধী মানুষের ইফতার, সেহ্রী ও রাতের খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। শুনেছি ঢাকার লালবাগ এলাকার সাথীরা এর জন্য অর্থায়ন ও খেদমতে জড়িত। জিজ্ঞেস করে জানলাম প্রতিবেলা প্রায় ৪০০-৬০০ কিলো চালের ভাত রান্না হয়। বিশাল আয়োজন। বাজার করার জন্য তাঁদের পিকআপ আছে, প্রতিদিন একটা গরু নাকি জবাই হচ্ছে, বিশাল আয়োজন। আল্লাহ্ তৌফিক দিয়েছেন, তাঁরা করছেন।
নিজে খারাপ বলেই হয়তো, এতো ভালো কিছু মধ্যে আমার চোখ গেলো লবণের বস্তার দিকে। উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য আয়োডিনবিহীন লবণ; আমি তো থ! যতোদূর জানি, এটা আইনের লঙ্ঘন, কারণ মূলত চামড়াশিল্পে এই লবণ ব্যবহৃত হয়। তাঁরা জেনেশুনে টাকা বাঁচানোর জন্য এ কাজ করছেন। আর কাকরাইলের এতো হর্তাকর্তা (তাঁদের ভাষায় মুরুব্বি) তা চোখ বুজে দেখছেন। যদি তাঁরা বলেন যে, তাঁরা খেয়াল করেন নি, তবে তা তাঁদের দায়িত্বের অবহেলা বৈ কিছুই নয়।
একজনকে ব্যাপারটা জানালাম। তিনি যুক্তি দিলেন, এটা কেনো সমস্যা নয়, এখানে সকল মাখলুককে অস্বীকার করা হয়, তাই এতে কিছু হবে না। কী আর বলবো, মাখলুককে অস্বীকৃতি—এই শব্দের অপব্যবহার প্রায় সর্বত্র। জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবস্থা নেই, সাপ্লাইয়ের পানিতে রোগজীবাণু থাকতে পারে এ দিকে কোনো খেয়াল নেই। আল্লাহ হেফাজত করবেন। মাখলুকের কী ক্ষমতা আছে রোগ সৃষ্টির?! আর যদি আপনার ডায়রিয়া-আমাশয় হয়েও যায়, তবে তাঁরা বলবেন: রোগের ফলে গুনাহ্ মাফ হয়। এভাবে বলা শুরু করলে তর্কে কী আর জিততে পারবেন?
তবে একটা কাজ করা যায়, মোবাইল কোর্ট তো আছে। তাঁরা যদি এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন। বেশি না সাবধান যদি করেন, আর পত্রিকায় যদি নিউজ যায়, তাহলেই আমার মনে হয়, সব ঠিক হয়ে যাবে। কাকরাইল কতৃপক্ষ ঠিক করে ফেলবেন। তা ছাড়া টনক নড়ার সম্ভাবনা কম, কারণ আমার ধারণা, ধর্ম সেখানে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির স্লুইস গেট সীমিত আকারে খোলা রেখেছে। কাকরাইলের অনেক অব্যবস্থাপনা তাই তাঁদের চোখে হয়তো আসে না, আসলেও তা পূণ্যের বাহুডোরে, সাধারণত বিচারবুদ্ধির স্লুইস গেটের আগেই আটকা পড়ে।
ধর্মের সাথে আধ্যাত্মিকতা জড়িত। আধ্যাত্মিক কারণে তাই অনেক কিছুই জায়েজ, কিন্তু যে দেশে এর চর্চা করা হচ্ছে, তা যতোই আধ্যাত্মিক হোক না কেন, আইনের বিরুদ্ধে গেলে তা নাজায়েজ এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তি পাওয়াটা জায়েজ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৭