somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসীর গল্প !

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা ১৯৯৮ সালের কথা , তারুন্যের প্রানবন্ত উচ্ছাসে ভাসচ্ছি । সেই সময়ে বেঁচে থাকাটাই ছিল চরম আনন্দের । সামান্য প্রেয়সীর মুখের হাঁসি টা কে মনে হত স্বর্গীয় । যখন স্বপ্নের তরী করে জীবন নদী পাড় হবার স্বপ্ন দেখছিলাম ঠিক সেই সময়ে ধুম করেই মুখ থুবরে পড়তে হল । প্রেয়সী চলে গেল অভিমান করে ।

মুহুর্তে বদলে গেল জীবন টা , পড়াশোনায় অমনযোগী , আড্ডাবাজী , সিগারেট খেতে শেখা , বাজে ছেলেদের সাথে মেশা । ক্রমশ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি । সেই সময়ে বেঁচে থাকাটাই অসহ্য মনে হচ্ছিল ।

আমার এই পরিবর্তনে পরিবারের সকলেই উৎকন্ঠিত , চিন্তিত । সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল আমাকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়া হবে , আমাকে জিজ্ঞেস করতেই কোন রকম চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেলাম । মনে হচ্ছিল পরিচিত সবার থেকে দূরে থাকলেই ভাল থাকবো , এরচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে তার স্মৃতি থেকে পালাতে চেয়েছিলাম ।

সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল বেশ দ্রুতই , দেশ ছাড়ার মাত্র ৩ দিন আগে প্রেয়সীর কানে পৌছালো চলে যাচ্ছি বহু দূরে! তাকে খুব বেশী ভালবাসতাম বলেই আমার পাগলামীর পরিমান টাও ছিল বেশী । পড়াশোনা , ভবিষ্যতের চেয়ে সে ছিল বেশী গুরুত্বপূর্ন , আর তার কাছে ছিল ভবিষ্যত ! আমাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন ছিল বলেই সে চাইতো আমি যেন ঠিকভাবে পড়াশোনা করি , উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলি কিন্তু আমার অবুঝ মন বুঝে নি । আমাদের ৭ বছরের সম্পর্কে যে কিনা শুধু মাত্র হাতটি ধরলেই লজ্জায় চুপসে যেত , সেদিন সে আমার বুকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল ।

আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এলো প্রবাসে পাড়ি জমানোর সময় , বিদায় নেবার সময় মা , বোনদের কান্না দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল ঠিকই , কিন্তু যে বাবাকে কোন দিন কাদতে দেখি নি , তার কান্না দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি , দু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল কষ্ট গুলো ।

সাহিত্যে একটি বাক্য আছে , " নাড়ী ছেড়ার টান" আমাদের বিমান টি যখন মাটি থেকে শুন্যে ভেসে উঠে ঠিক সেই সময়ে উপলব্ধী হয়েছিল এই বাক্যটির , এই অনুভতি বলে বুঝানো সম্ভব নয় । সত্যি বলতে সেদিন বুঝি নাই প্রবাসী নামক দুর্ভাগ্য টা কে এইভাবে বয়ে বেড়াতে হবে ।

প্রবাসের বাস্তবতায় নিজেকে খুব অসহায় মনে হলেও , ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হল । জীবন নামের প্রতিযোগীতায় নেমে কেটেই যাচ্ছিল সময় । একদিন হুট করেই খবর পেলাম তার "বিয়ে" , আরো কিছুদিন পর খবর আসলো জন্মদাতা পিতা সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে ।

প্রিয় মানুষ টি কে হারানো , শেষ সময়ে পিতার পাশে না থাকার যন্ত্রনা , হাঁসি কান্নায় পরিবার-পরিজন কে পাশে না পাওয়া , উৎসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত সহ হাজার ও কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে আজ আমি প্রবাসী ।

এই গল্প আমার একার নয় । আমার মত হাজারো প্রবাসী , আমার চেয়ে অনেক বেশী দুঃখ নিয়ে প্রবাসে আছে । নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যের আশায় কেউ বা পরিবার পরিজনের মুখে হাঁসি ফোটাবার জন্য নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় বিক্রি করে উপার্জন করছে রেমিটেন্স ।

এতকিছুর পরও যখন আমরা দেখি একমাত্র মা ছাড়া অন্য সবার কাছে আমাদের চেয়ে আমাদের উপার্জন বেশী গুরুত্বপূর্ন তখন মনে হয় আমরা প্রবাসীরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী অবহেলিত আর দুর্ভাগা ।
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×