somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি জালাল উদ্দিন রুমী । পৃথিবীর বুকে একজন সুফীর আগমন।আজ কবির জন্ম দিন ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রুমীর জীবন এর সুচনাকাল :

রুমীর পৃথিবীতে আগমনের সময়টা ইতিহাসের খুব একটা ভালো সময় নয় । একদিকে খ্রিষ্টানদের ক্রুসেড অভিযান, ইউরোপের পশ্চিম অংশ থেকে আনাতোলিয়া উপদ্বীপ পেরিয়ে সর্বত্র আছরে পরছে । পূর্ব দিক থেকে দুধর্ষ মোঙ্গল বাহিনী । এমন এক সময় মানব আত্বার মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতী, সান্নিধ্য সৃষ্টিকারী মহান প্রেমিক জালাল উদ্দিন রুমীর জন্ম ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে সেপ্টেম্বর মানে আজকের ঠিক এই দিনে । আজ কবির জন্ম দিন
১২০৭ সনের ৩০ শে সেপ্টেম্বর রুমী জন্ম গ্রহন করেন বলখ শহরের নিকটস্থ একটি স্থানে যা বর্তমানে আফগানস্থানের একটি অংশ । রুমীর ছিলেন ইসলামি ফিকহ, ধর্ম ও সুফীবাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে ধারক এক বংশের অধিকারী । তার পিতা বাহউদ্দিন ওয়ালাদ এর লিখিত একটি বই ‘মা’ রিফ (আত্বা কে ভালোবাসার কথা ) যা থেকে রুমী অত্যন্ত অনুপ্রানিত হয়েছিলেন । রুমীর তরুন বয়সেই তার পরিবারকে তখন বলখ থেকে পালাতে হয় কারন ইতিহাসের আরেক ভিলেন চেঙ্গিস খান ধেয়ে আসছে তার শহরের দিকে । রুমী ও তার পরিবার প্রথমে দামেশকে ও পরে নিশাপুরে যান । সেখানে রুমির সাথে সাক্ষাত ঘটে কবি ও শিক্ষক ফরিদউদ্দিন আত্তারের সাথে । তিনি কিশোর রুমির মধ্যে বিরাট আধ্যাত্বিক চেতনা দেখতে পান। বাহাউদ্দিন এর পেছনে রুমিকে দারিয়ে থাকতে দেখে ফরিউদ্দিন বলেন একটি সাগর আছে আর তাকে অনুসরন করছে একটি মহাসাগর । তিনি রুমীকে একটা একটা গ্রন্থ উপহার দেন , ইলাহিনামা (আল্লাহর গ্রন্থ)
বেশ কিছুদির পর রুমির বিশোর্তিন্নো বয়সে তার পিতা ইন্তেকাল করেন । রুমী তার পিতার দায়িত্ব তথা মুরিদদের আত্বার বিকশের সাথে জরিত বিভিন্ন বিষয়, ধর্মতত্ব, কবিতা , সঙ্গীত এবং বিভিন্ন ইসলামি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন । শিঘ্রী তার ক্ষ্যাতি ছরিয়ে পরে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ হাজার ছাত্রের সমাবেশ ঘটে । রুমীর পরিচালিত দরবেশ সুফি তরিকার লক্ষ্য ছিল আত্বাকে উন্মোচন, মিলনের রহস্য আবিস্কার। তার এসব অনুশিলন করতেন গান, কবিতা, ধ্যান, নিরবতা , কাহিনী , সংলাপ এর মাধ্যমে । রুমী ইসলামে বিষয়ে মস্ত বড় পন্ডিত ছিলেন । তার রচিত কো্রানের তাফসির, অনুবাদ , ব্যাখ্যা আজো পঠিত হয় ।

সুফী রুমীর নতুন করে নিজেকে চেনা :
১২৪৪ সালে রুমীর জিবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি সাল । এ বছর তার প্রিয় ব্ন্ধুর সাক্ষাত পায় রুমি । সে আর কেউ না সামশেদ তাবরেজ । যার কারনে রুমীকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুফিতে পরিনত করেছে । তাবরেজ ছিলেন একজন দরবেশ । যাকে অনেকেই ড্যান্সিং দরবেশ বলে থাকেন কেননা সে রাস্তায় নেচে নেচে আল্লাহর জিকির করতেন । লোকো তাকে নেহায়েত পাগল বলে মনে করত এমনকি প্রথমদিকে রুমী নিজেও । তাবরেজ এর মাঝে এমন কিছু পেয়ে যায় যা সে এতো দিন খুজে বেরাচ্ছিল । এদিকে এতজন বদ্ধ পাগলের সাথে রুমীর এই সক্ষ্যতা দেখে মানুষজন বলাবলি করতে লাগল রুমি নিজেই হয়ত পাগল হয়ে গেছে ।অনেক গ্রন্থে তাবরেজের সাথে রুমির পরিচয়ের বিভিন্ন বিবরন পাওয়া যায় : কেউ বলে রুমী একদিন মুরিদদের নিয়ে তার পিতার মা রিফ পড়ে শুনাচ্ছিলেন। এমন সময় তাবরেজ এসে তার হাত থেকে গ্রন্থ নিয়ে পানিতে ফেলে দেয়ে । তখন রুমি বলে আপনি কে ? কি করছেন এসব ? তখন তাবরেজ বলে তোমার এসব আর পড়া ঠিক হবোনা। কিছুক্ষন পর তাবরেজ রুমিকে পানি থেকে কাগজগুলো তুলে রুমীর হাতে দিলেন যা কিনা সম্পূর্ন শুকনা ঝরঝরা । রুমি তখন বলে ওগুলো ওখানেই পরে থাকুক । এই পরিত্যাগের মাধ্যেমে রুমি নিজে ধর্মিয় গুরু পেশা বাদ দিয়ে তাবরেজের কাছে বায়াত নিতে চায়। তাবরেজে তাকে বলে আমার কাছে বায়াত নিতে হলে তোমার আমার কথা শুনতে হবে যা তুমি করতে পারবে না । আমার কথা না মানলে তোমাকে আমি বায়াত হিসেবে নিতে পারবনা । রুমী সব মানার কথা বলে । তাবরেজ আরো ভাবতে বলে তাকে । বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে রুমীর সাথে তাবরেজের বন্ধুত্ব হয়। তাবরেজ সম্পর্কে রুমির একটি কবিতার বাংলা হলো :

সমস্ত কিতাব গ্রন্থ যা আছে সব নদীতে ফেলে দাও ওখানে আল্লাহ নেই আল্লাহকে পেতে হলে সামশেদ তাবরেজের কাছে যাও

এভাবে আস্তে আস্তে রুমীর আর তাবরেজ এর ঘনিষ্ঠতা বারতে থাকে আর রুমির সমস্ত রহস্যের জট খুলতে থাকে। সে নিজেকে নতুন করে চিনতে শুরু করে।

রুমীর কবিতার দুটি ধারা ফানা আর বাকা , দুটি আরবি শব্দ ।সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের যথাক্রমে খেলা ও ব্যাবচ্ছেদ এর ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়েছে। ফানা হচ্ছে একের ভিতরে আরেকজনের লীন হওয়া । একের অস্তিত্তের ভিতরে নিজেরটাকে হারিয়ে ফেলা ।যেমন সরাই খানায় মাতাল বলে উঠে যে আমাকে এখানে এনেছে , সেই আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। আগুন ঘিরে উড়াউড়ির পর পতঙ্গ স্বয়ং আগুনের শিখিয় পরিনিত হওয়ার পর পশ্ন করে মোমবাতির শিখায় এমন কি ছিল যা আমায় শিঘ্রি গ্রাস করে নিল ?
বাকা দরজা পেরিয়ে ভিন্ন পথ । আরবিতে বাকার ভিন্ন অর্থ আছে । ভিতরে একটা অস্তিত্ব । বাকা এমন একটি অবস্থান সব সময় আরেকজনকে অনুভব করা । যার সাথে ফানা তার সাথেই সে সব সময় বাকা অবস্থায় থাকে । রুমীর কিছু রহস্যে ঘেরা সংলাপে থেকে কিছুটা দেখা যায় :
বাকা বলছে :

বন্ধু আমাদের ঘনিষ্টতা হচ্ছে
যেখানেই তুমি তোমার পা রাখবে
পদতলে দৃঢ়তার মাঝে
আমাকেই অনুভব করবে
ফানা বলছে :

এ কেমন প্রেম
আমি তোমার অস্তিত্ব দেখছি
তোমাকে নয় ?
বাকাকে বিবেচনা করা হয় রুমির বসন্তকালের কবিতার হিসেবে । সদা উপস্থিত সবুজ, সজিব সুন্দর ।
এক সাথে থেকো বন্ধুরা
বিক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো না।
জেগে থাকার জন্য আমাদের বন্ধুত্ব


রুমী তার জীবনের শেষ বারোটি বছর ধরে একটি সুদীর্গ ধারাবাহিক কবিতা মসনবী রচনা করেছেন । চৌষট্টী হাজার লাইন বিশিষ্ঠ কবিতাটি ছয় খন্ডে বিভক্ত । বিশ্ব সাহিত্য এর সমতুল্য আর দ্বীতিয়টি নেই । অস্বাধারন একটি কাব্যগ্রন্থ । । এটি বহু বিষয়ে ঘিরে স্ফিত হয়ে উঠা একটি কাব্যগ্রন্থ ।কোথাও আত্বার মধ্যকার কথা বার্তা, কোথাও কিছুটা রসিকতা কোথাও কোরানের আয়াতের ব্যাখ্যা । রুমীকে নিয়ে নিয়ে বহু গবেষকদরে মধ্যে আমেরিকান কবি কোলম্যান বার্কস মসনবী নিয়ে বলেছেন "এ এক এমন এক প্রবাহ যার আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখা কঠিন । মসনবীর কোনো সীমা পরিসীমা নেই "

রুমির বাসর রাত
১২৭৩ সনের ১৭ ই ডিসেম্বর ঐ দিন পৃথীবি জুরে রুমীর মৃত্যুবার্ষীকি পালিত হয় । সুফীরা বিশেষ করে তাসাউফ পন্থিরা তাকে উরস বলে । উরস বা বাসরের রাত । সৃষ্টিকর্তার সাথে রুমির মিলনের রাত ।

আমি সেই প্রেমিকের সাথে আছি
যে দুই পৃথিবীকে একটি হিসেবে দেখেছে ।
এবং সেই একটিকেই জেনেছে
প্রথম, শেষ বাহির ও ভিতর বলে
এটাই কেবল মানুষের নিশ্বাস ।


পুনশ্চ : পুরো লিখা টা দিতে আমার কোলম্যান বার্কস এর রুমীকে নিয়ে লেখা The Sole of Rumi বই থেকে সাহাজ্য নিয়েছি । কিছু জিনিস আগে থেকে জানতাম । কিছু নেট থেকে । কোলম্যান বার্কস যে বছর বইটা বাজারে বের করেন ঠিক সে বছরি নাইন ইলেভেন এর ঘটনা ঘটে, এতো কিছুর পরেও রুমিকে নিয়ে লেখা তার গবেষনা প্রকাশনীটি খোদ ইউ এস এ তে বই টি বেস্ট সেলার নির্বাচিত হয়। রমী কবি হিসিবে ইউরোপ এ্যমেরিকা সহ বহু দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। আমাদের নজরুলকে অনেক কাঠমোল্লা পছন্দ করেনা কারন সে একাধারে ইসলামি সঙ্গীত আবার সেই সাথে শ্যামা সঙ্গীত রচনা করেছেন, রুমি প্রায় ৮০০ বছর আগেও একি কাজ করে গেছেন তার কবিতাতে খ্রীস্টধর্মের বিভন্ন দিক নিয়ে কথা বার্তা পাওয়া যায়। পাওয়া যায় সাম্যবাদ । ধন্যবাদ ।



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
৩৫টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×