তমিজ খা তার শিকারের বন্দুকটি আকাশের দিকে তাক করে আছে! লক্ষস্থল আকাশে উড়ে যাওয়া সাদা বক। ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে, এমন সময়ে একটা পিপড়া সাইজের মশা এসে হাতে কুটুস করে কামর দিয়ে বসল! তমিজের গুলি সোজা তার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল! সে কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইল! এমনেতেই তাকে কিছুটা নিরীহ ব্যাঙের মত দেখতে! ঠোট দুটো ঝুলে থাকে! তার মত বাঘ শিকারী কে কিনা একটা জংলি মশা কুপোকাত করে ফেলল! ভাবতে ভাবতে সুন্দরবনের গহীন অরন্য দিয়ে হেটে চলল। এই বনে সে ঘোরাঘুরি করে আজ ত্রিশ বছর হল! তারপর ও যতবার সে আসে তার গা ছমছম করে! মনে হয় এই প্রথম সে বনে ঢুকলো! কি যেন একটা আছে এই বনে! সবাই শুধু রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার জন্য এখানে আসে! হীরন পয়েন্ট আর কটকা পয়েন্ট। আসল জিনিস টাই কেউ দেখল না! এই বিশাল প্রাচীন ম্যানগ্রোভ বনের রহস্যময়তা! কি অপরুপ আর ভয়ঙ্কর!এলোমেলো ভাবনায় ডুবে যায় তমিজ!
ইঠাৎ প্রচন্ড পায়খানার বেগ পায়! ইদানিং কোন সিগন্যাল ছাড়াই যত্রতত্র তার পেটে টান মারে! জঙ্গলে তো আর ও সমস্যা! কাজ না হয় করা যাবে, কিন্ত পানি! প্রচন্ড বিরক্ত অনুভব করে তমিজ! কাজ সম্পাদনের জন্য একটা গাছের নিচে বসে পড়ে তমিজ। উঠতে যাবে তখন দেখে একটা বিষাক্ত কেউটে তার দিকে চেয়ে ফোস ফোস করছে! সম্ভবত কেউটের আবাস স্থলে সে ইয়ে করে দিয়েছে! তমিজ তাড়াতাড়ি তার বন্দুক তাক করতেই সাপটি চলে গেল। বাধ্য না হলে কাউকে মারে না তমিজ।এই জঙ্গলের পশুপাখিদের প্রতি তার অদ্ভুত ভালবাসা তৈরি হয়েছে। এ জঙ্গল তো তাদেরই! সে তো এখানে বিদেশী!
একটা পাতা দিয়ে হাত ঘষতে ঘযতে তমিজ জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসে। রেস্ট হাউজের সামনের রাস্তায় বের হতেই হাউসের কেয়ারটেকার ইদ্রিস তাকে ডাক দেয় ।"শহর থেকে ডিসি সাহেব আসছেন। আমি তোমার কথা বলছি। তোমারে দেখা করতে বলেছেন। আসো"বলল ইদ্রিস। তমিজ খুশি হয়। কারন সরকার থেকে বেশি টাকা সে পায় না। এই বড় সাহেবরা যখন আসে তখন বন ঘুরিয়ে দেখালে তারা খুশি হয়ে কিছু দেয় তাতে তার খেয়ে পড়ে বাঁচবার একটা আয় হয়।
গেস্ট হাউসের নিচতলায় একটা চেয়ারে বসে আছে আহসান সাহেব। বয়স পঞ্চাশ হবে। সোনালি ফ্রেম এর চশমার ফাকে চারপাশ দেখছেন আর চা এর কাপে চুমুক দিচ্ছেন। ছেলে মেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে এই প্রথম সুন্দরবন দেখতে আসা তার। ছেলে মেয়েদের চাপে কিছুটা বাধ্য হয়ে বলা চলে। তাদের স্কুল ছুটি। না হলে এই বর্ষাকালে আসার ইচ্ছা ছিল না তার। তবুও বনে বৃষ্টি দেখার একটা সুপ্তবাসনা
তার ছিল। সেটা পূরন হইবে।
স্যার ও ইইল তমিজ খা। এই বনের সরকারী গার্ড। খুব সাবাস ওর। তিন জনেরে বাঘ এর হাত থেকে ছুটাইয়া আনছে। ইদ্রিস আহসান সাহেব কে তমিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।আহসান সাহেব তমিজের দিকে ভালভাবে তাকালেন। ঘন মোটা গোফওয়ালা ছোট খাট কিন্ত পেশীবহুল শরীর তমিজের! গালের কাছে দুটো গভীর দাগ। যেন কিছু খামচে দিয়েছে তাকে। মোটা দুটো ঠোট। কিছুটা অদ্ভুত চেহারা। তবে আহসান সাহেবের সবচেয়ে নজর কাড়লো তমিজের নিষ্পাপ আর রহস্যময়তায় ঘেরা চোখ দুটো! কেমন যেন একটা মায়া!
আহসান সাহেব হাত বাড়িয়ে দিলেন। তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল তমিজ। কিন্ত তমিজ তো পড়ল মহাবিপদে! সে কৃত্রিম একটা হতস্তত হাসি ফুটিয়ে হ্যান্ডশ্যাক করল। কি আর করা! (চলবে)......