somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি আর পাবলিক থাকবে?

৩১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৭ তারিখ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আন্দোলন চলছে। বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য, নীতি অনুসারে জনগণের টাকায় জনগণের জন্য এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বেতন নেয়া হয় তা অধিকাঙশের জন্য সহনীয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এর সরাসরি প্রেসক্রিপশনে UGC এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ২০২৬ সালের মধ্যে প্রাইভেট করে ফেলা হবে।

কিভাবে?

বিশ্বব্যাংক আমাদের দেশের জন্য একটা ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র তৈরী করেছে। যেটা অনুয়ায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে বেতন ফি বাড়িয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ খরচ এর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আরও কিছু বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে (ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে সান্ধ্য কোর্স এবং অন্যান্য এ ধরণের পদক্ষেপ গুলোও সেজন্যেই নেয়া)। ফলে ঐ সময় যদি বছরে একলাখ টাকা এক জন শিক্ষার্থীর জন্য খরচ করতে হয় তাহলে সেই এক লাখ টাকা শিক্সার্থীরাই দেবে।
পাবলিক আর পাবলিক না থেকে হয়ে যাবে বিত্তশালীর বিশ্ববিদ্যালয়।
এই প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন অভাবনীয় মাত্রায় বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিছু উদাহরণ দেখা যাক।
আগে যেখানে ইমপ্রুভ বা সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষার ফি একজন ছাত্রকে প্রতি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য ১২৪ টাকা দিতে হতো, এখন সেটা হচ্ছে ৬০০-৯০০ টাকা। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭,০০০ ছাত্রের কমপক্ষে ৩০% প্রতি বছর ইমপ্রুভ সাপ্লি পরীক্ষা দেয়। আর নতুন ব্যাচ গুলোর অনেক বিভাগে এই হার ৯০% পর্যন্ত।
আগে নন/ডিস কলেজিয়েট ফি ছিলো ৬০০ টাকা, এখন সেটা হচ্ছে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতি বছরে নতুন বর্য়ে ভর্তি ফি বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যুনতম ৬০% ।

যে পরিমাণ বাড়ানো চলছে তাতে এখনই বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্রের পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২৭ তারিখ শুরু হওয়া আন্দোলনে সুজন কান্তি দে নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রশাসন বহিষ্কার করে; যে কিনা এমনই একজন। সুজনের বাবা নেই; মা বোন গার্মেন্টসে চাকরি করে। সে নিজেও একটা চাকরি করতে প্রতিদিন ১২টায় ক্যাম্পাস থেকে শহরে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো মুখে না বলে বুঝিয়ে দিতে চায় যে, টাকা নেই তো পড়তে আসারও দরকার নেই।
২৭ তারিখ থেকে এই আন্দোলন ভুক্তভোগী সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই শুরু করে। কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ থাকা প্রশাসন ২৮ তারিখ থেকেই স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেয় যে কোন বেতন ফি বাড়ানো হয়নি। নিজেদের অন্যায় ঢাকতে ও এ আন্দোলনকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সরাসরি সরাসরি মিথ্যাচার করে। আর এ মিথ্যার প্রতিবাদ যাতে না হয় তার জন্য স্থানীয় পত্রিকাগুলোয় আমাদের ভিসি-র রাজিনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ আন্দোলনের পক্ষে কোন খবর ছাপা বন্ধ করা হয় বলে সাংবাদিক সূত্রে জানা যায়।
অন্যান্য মিডিয়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর আন্দোলনকে যথেষ্ট কাভারেজ দেয়া থেকে একই কারণে বিরত থাকে বলে আমরা জেনেছি।
৩০ তারিখ রাতে, অর্থাৎ সদ্যই জানলাম যে প্রশাসন ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অথচ, গত ক'দিনের আন্দোলনে কর্মরত 'বর্ধিত বেতন ফি বিরোধী সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ' এর ব্যানারে এই আন্দোলনে ছাত্ররা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে অংশ নেয়। একটা সুতোও কেউ ছেড়েনি। একটা মানুষের একটা চুলও কেউ ধরেনি। আজ ৩১ তারিখ শনিবার আন্দোলন চলবার কথা। এখনো জানি না কতদূর কি হবে। আশা করবো সারা দেশের লোকজন বিশেষ করে মিডিয়া আমাদের ভাষ্য ফোকাসে আনবে; আমাদের পাশে থাকবে। এ আন্দোলন আর আরো সব আন্দোলন সফল হতে সাহায্য করে দেশের উচ্চশিক্ষাটা সাধারণের নাগালে থাকা নিশ্চিত করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৪৫
২১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×