কাল আমাদের সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ হঠাৎ আক্রমণ করে। অবশ্য করবে বলেই তারা ঠিক করে রেখেছিল। সকাল ৮টায় যখন ছাত্রদের জমায়েত শুরু হয় ষোলশহরে, তখনই পুলিশ রীতিমতো গালিগালাজ করা শুরু করে। তার আগের দিনও যে দু'তিন হাজার ছেলে মেয়ে দুই নং গেটে অবস্থান করে ন্যুনতম বিশৃঙ্খলা বা উগ্রতা দেখায়নি। সেই ছাত্রদের পেছনে রবিবার সকাল ৮:৩০-এই জলকামান নিয়ে পুলিশ হাজির হয়- মানে সরাসরি হুমকি। মিছিল প্রেসক্লাব গিয়ে বিকালে দুই নং গেটে আবার আসতেই পুলিশ মার শুরূ করে। আজ রোববারেও ছাত্ররা যাবার আগেই কয়েকশ পুলিশকে প্রশাসন (প্রশাসন এর বদলে ভিসি বলাই বেশি মানানসই) ক্যাম্পাসে দাঙ্গার প্রস্ততি নিইয়ে প্রবেশ করায়। উসকানি আসলে কে দিল তা কি বোঝা যায় না এখান থেকে?
সংঘর্ষে সাধারণত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দু'একটা টিয়ার শেল থাকে। আমদের দিকে ছোঁড়া হয়েছে কয়েকশ' টিয়ার শেল।
কিন্তু এসব কিছুতে না। মনটা খারাপ, রাগ, দু:খ, প্রতিশোধস্পৃহায় ভরে গেছে আমাদের ছাত্রীদের উপর পুলিশের অত্যাচারের বর্ণনা শুনে।
আমরা ছিলাম আজ অন্য দিকে; চাকসুর সামনে। ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে আমাদের সাথে যোগ দিতে চেয়েছিলো। পুলিশ দেয়নি। ধোঁকা দিয়ে পুলিশ তাদের এমন জায়গায় বসতে দেয় যেখানে তাদের ঘিরে ফেলে দু'দিক থেকে মারা যাবে। নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্রীরা পুলিশের ধোঁকায় গিয়ে পড়ে। সবাই রাস্তায় বসতে না বসতেই পুলিশ- তাও মহিলা পুলিশ না পুরুষ- বেধড়ক মার শুরু করে। একজনকে লাঠি দিয়ে মেরে দু'পা-ই ভেঙে দিয়েছে। একজনকে মেরে সালোয়ার ছিড়ে উরু, পা এর মাংস ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। গায়ে টিয়ার শেল মেরে এক জনকে বেহুঁশ করে তার উপরই পেটাতে আসে। ধাক্কা দিয়ে কয়েকজনকে ফেলে দিয়ে তলপেটে বুট পায়ে লাথির পর লাথি মেরে গেছে। রাবার বুলেট থেয়ে একজন পড়ে গেছিল। তাকে রাস্তা থেকে তোলেওনি; ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে রাস্তার ওপর দিয়ে ভ্যানে নিয়ে গেছে। ঐ বোনের পায়ের পুরো চামড়া ছিলে গেছে। আর একজনের তো দু'হাতের একটা আঙুলেও চামড়া নেই। দৌড়াতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়েছিল, তাদের রাস্তায় শুইয়েই ভয়াবহ লাঠিপেটা করে। সে কী লাঠিচার্জ, না খেলে বোঝা যায় না। কাউকে কোন চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। কয়েকজন ছেলে ছিলো, ওরা ক্রমাগত লাঠির বাড়ি সব নিজের গায়ে নিতে নিতে রাস্তা থেকে আহত মেয়েদের তুলে নিয়ে আসে। নইলে হয়তো এতক্ষণে কয়েকজনের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হতো।
এতসব, তখন জানতে পারি নি। কিছু পরে; জেনে মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল। খুব ইচ্ছে করছিলো হলে গিয়ে ওদের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি।
আজকের পর কি আর কখনো কোন ছাত্র এই কথা ভুলবে? না। দেড় মাস বন্ধ দিয়ে প্রশাসন এ আন্দোলন বন্ধ করে দিতে পারবে ভেবেছে। দেড় মাস পড়ে সেই দশহাজার টাকা পর্যন্ত বেতন, ফি, জরিমানা নেবার চেষ্টাই প্রশাসন করবে ভাবছে। জীবনে যে ছেলে একবার উঁচু গলায় কথাও বলেনি, সে আজকে পুলিশের সামনে হাত খুলে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল। জীবন দিয়ে দিতেও ঐ মূহুর্তে তার গায়ে লাগত না। সবাই যাদের দূর্বল, ভীরু ভেবে আসছে; শুধু ক্লাসই করা ছাড়া প্রেম করারও সাহস করেনা যে মেয়ে, সেও আজকে হল ছেড়ে সামনে চলে এসেছে। প্রশাসন, ভিসি ঐ ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করে এদের দমাতে পারবে না। এরা তখনও আসবে। ভিসির গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডায় অন্য লোক ভুলতে পারে। আমরা তো ভুলছিনা।
আজাদী,পূর্বকোণ-এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম, শেষ পাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করে পর পর কয়েকদিন ধরে প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। টিভি পত্রিকায় সবখানে বলা হচ্ছে আমাদের বেতন কম।
মিডিয়ার অসহযোগিতা আর একেবারে খাস দালাল এক'দু'জন সাংবাদিকের নেতিবাচক খবরে এবিষযে কোনো সংযোগহীন কিছু সাধারণ মানুষের মধ্যে আমাদের আন্দোলন সম্পকে বিভ্রান্তি ছড়াতে প্রশাসন পেরেছে। কিন্তু আসল মানুষ- এই আমরা তো ভুলি নি।
আমরা ভুলবোওনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৩৫