somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দোলন দমানোর ১০১টি কার্যকর উপায়

২৩ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন আন্দোলনকে কিভাবে দমাতে, সমর্থনহীন করতে হয় তা জানতে চান? চট্টগ্র্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে বাস্তব উদাহরণসহ এই লেখায় তার বর্ণনা পাবেন।
-----------------
“আমি আন্দোলন করাইছি, আন্দোলন কিভাবে দমাইতে হয় আমি জানি”, “কাকে কী দিলে আন্দোলন বন্ধ করানো যায় আমি জানি”এই দম্ভোক্তিগুলো, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার ন্যুনতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে বসা আবু ইউসুফের।

স্বীকার করতেই হয়, সে তার কাজ খুব ভাল জানে।

আন্দোলন থামিয়ে দেবার জন্য ভিসির চেষ্টা, ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কিছু ব্যাপার খোঁজখবর করে জানতে পেলাম। আন্দোলনের প্রথম দিকে প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়াতে খবর আসেনি। খবর যাতে না আসে সে ব্যাপারে ভিসির চেষ্টার কমতি ছিল না।

প্রথম দিনই ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে ভিসি সম্ভবত বুঝে গেছিলেন এ খবর পত্রিকায় ভালো জায়গা পাবে। এজন্য সেদিন বিকালের দিকেই অনেকগুলো পত্রিকাতে যায়- এ আন্দোলন দমাতে, মিডিয়া কাভারেজ না দিতে, জনমত বিপক্ষে নিতে- পত্রিকাপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের ৩০০০০ থেকে ৫০০০০ টাকায় ছাপানো প্রথম বিজ্ঞপ্তি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে, নিয়মানুযায়ী কিছু বিজ্ঞাপন প্রশাসনকে পত্রিকায় ছাপাতেই হয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা খাইয়ে হুকুমদাস করে বা হাতে রাখবার পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো নানান তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা খরচ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার একটা ধারা ভিসি আবু ইউসুফের আমলে আরো আগে শুরু হয়। কিছু হলেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন।(সরাসরি তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ঘুষ দেয়া যায় না। কিছু হিসেব তো অন্তত দেখাতে হয়। আর তাছাড়া জনমতও তৈরী করা যাচ্ছে।) এমনকি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এক আন্দোলনের ব্যাপারেও ভিসির উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় পত্রিকায় একটা বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়। যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ারের সেই আন্দোলনে চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দীনের উপর চাপ তৈরী হচ্ছিল, আর আমাদের ভিসি তার খাস/খুব ভাল/ঘনিষ্ঠ .... (চামচা ছাড়া অন্য কোন শব্দ খাটবে মনে হলে পাঠক বলবেন দয়া করে। যত যাই হোক আবু ইউসুফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। সে বা, প্রাক্তন মেয়র কেউই নিশ্চয় তাকে চামচা ভাবেন নি। যদিও প্রায় পুরো চট্টগ্রামবাসী মেয়র নির্বাচনের সময় টিভিগুলোর টকশো থেকে শুরু করে পত্রিকার সাক্ষাৎকার পর্যন্ত সবখানেই ভিসিকে মহিউদ্দীন সাহেবের পাশে বা, পেছনে দেখেছেন। দেখেছেন মহিউদ্দীন সাহেব কথা শুরু করলে ভিসি শেষ করে, আটকে গেলে ভিসি ছাড়িয়ে দেয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এধরণের কাজ করতে পারেন কিনা, বা, করা উচিত কিনা সে আলোচনা বাদই দিলাম।) হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে আবু ইউসুফের ঘুষ দেবার (ঘুষ না মনে হলেও বলবেন পাঠক) ব্যাপারটা সম্ভবত প্রথমবার শুরু হয়।

এবার, আবার, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরেকদফা অর্থপ্রাপ্তির আশা দেখিয়ে, সে আশা মিটিয়েই- প্রথমে খবর একেবারে না ছাপাতে, পরে মিথ্যে আর নেতিবাচক খবর ছাপাতে, আরও পরে ঘটনা বড় হয়ে গেলে যখন আর চেপে রাখা যাচ্ছে না, তখন যথাসম্ভব রেখে ঢেকে অন্তত আন্দোলনের পক্ষে যাতে না যায় সেভাবে সত্যি আর মিথ্যের মিশেলে খবর ছাপানোর যে প্রকল্প ভিসি নেয় তা অনেকাংশেই বাস্তবায়িত।

ইংরেজীতে একটা কথা আছে। “give it a bad name, then kill it.” তাহলে কেউ আর শোর করবেনা। আবু ইউসুফ এই তরিকা খাটানোর ব্যাপক চেষ্টা করে গেছে। সফলও হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে। আন্দোলন চলাকালীন কোনো কোনো পত্রিকায় চালু কয়েকটা রটনা ছিল “যুদ্ধাপরাধীর বিচার নস্যাৎ করতেই এ আন্দোলন”, “শিবির এ আন্দোলনের সুযোগ নিতে চেয়েছে” “শিবির আর বাম সংগঠনগুলো সোহরাওয়ার্দী হলে মিটিং করে একসাথে আন্দোলনে ভাংচুর চালিয়েছে”। সমকালে তো প্রথম পৃষ্ঠায় শিরোনাম ছিল “নেপথ্যে শিবির”। মজার ব্যাপার হলো, আমি দেখা চট্টগ্রামের তথাকথিত কিছু প্রগতিশীল এই প্রত্যেকটা রটনা বিশ্বাস করেছে। এমনকি পাগলেও বিশ্বাস করবেনা যে কথা, সেই বাম-শিবির আঁতাতএর কথা পর্যন্ত।

এ সমস্ত রটনা রটাতে, শুধু এ আন্দোলনের ব্যাপারেই এবার বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গেছে ২৪ লাখ টাকা।

এই দারুণ কূটবুদ্ধিটা বোধহয় মোবাইল অপারেটরগুলো থেকে পাওয়া; মোবাইল কোম্পানিগুলোর টাকাই তো পত্রিকাগুলোর আয়ের বিরাট একটা অংশ যোগায়, যার ফলে এদের কোনরকম দূর্নীতি, অনিয়ম, চুরিচামারি বিষয়ে পত্রিকায় কখনোই কোন খবর আসে না।

এছাড়া, ভিসি এবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমানোর কাজে রীতিমতো দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে লোক লাগায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয় সবকটা পত্রিকাকে ম্যানেজ করার জন্য। সে তার দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করায় এই ১৫ দিনের মধ্যে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অথচ বছরখানেক আগে আত্নহত্যা করেন একই বিভাগের সকলের প্রিয় যে শিক্ষক, সেই এন্ড্রু অলক তেওয়ারীর আত্নহত্যার কারণগুলোর মধ্যে তার বিভাগের শিক্ষক রাজনীতিতে নিস্পেষিত হওয়ার পাশাপাশি ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর ধরে শিক্ষকতা করার পরও পদোন্নতি না পাওয়া।

প্র্রিন্ট মিডিয়াকে হাত করতে আবু ইউসুফ প্রায় সফল। টিভি মিডিয়াকে হাত করতে সম্ভবত পারছিল না, তাই এক্ষেত্রে ছিল এদের আটকানোর প্রচেষ্টা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়, টিভি মিডিয়া গুলোর উপর নানা ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ। বর্তমান সরকারের সময়েও নাকি এ ধরণের কিছু ব্যাপার চালু আছে। সে সুযোগ নিয়ে, আবু ইউসুফ প্রধানমন্ত্রীকে সেই যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎতের, শিবিরের ভুত দেখিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে আমাদের আন্দোলনের কোন খবর প্রচারের উপর গোপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করাতে সক্ষম হয়।

আন্দোলনের মধ্যবর্তী একদিন একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে আবু ইউসুফ নিজেই ফোন করে বলে, ঐ চ্যানেলে যদি কোন খবর যায় তাহলে ক্যাম্পাসে তাদের ক্যামেরা ছাত্রলীগের ছেলেরা ভেঙে দিলে সেজন্য কোন দায়ভার প্রশাসন নিতে পারবেনা। (প্রসঙ্গত, চবি ছাত্রলীগের মধ্যে আবু ইউসুফ এর প্রভাবাধীন একটি অংশ রয়েছে।) অন্যান্য চ্যানেলগুলোর কথা জানিনা, তবে নিশ্চয় একই হুমকি তাদেরও দেয়া হয়েছে। এ দুধরণের কারণেই, প্রথম কয়দিন একেবারেই কোন খবর কোন চ্যানেলে (শুধু বাংলা ভিশনে রাত সাড়ে এগারোটার খবরে কিছুটা ছাড়া) আসেনি।


আমাদের এই ন্যায্য আন্দোলনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিলই না বলতে গেলে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন তাদের সমর্থন ছিলনা। একেবারে যে ছিলনা তা নয়। এবার আন্দোলনের প্রথম থেকেই আর সব ক্ষেত্রের মতো শিক্ষকদেরও দমন পীড়ন চালানো হয়, হুমকি দেয়া হয়। ফলে যাদের সমর্থন ছিল তারা সবাই সমর্থন মনে মনেই রেখে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ইতিহাস বিভাগের অত্যন্ত সিনিয়র একজন শিক্ষক ড. হায়াৎ হোসেন যেদিন আমাদের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, সেদিনই তাকে শোকজ করা হয়‍ ! তাকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করা হয়।
পুলিশ ভিসির নির্দেশে তাদের লাথি মেরে হলে ঢুকে ছাত্রদের গ্রেপ্তার ও পেটানোয় দুটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে চান। মিডিয়ায় এ খবর চলে আসবার ভয়ে ভিসি তাদের সরাসরি হুমকি দেয়। তাদের কোনরকম শিক্ষাছুটি দেয়া হবেনা বলে এবং আরো নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরস্ত করা হয়।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:৫৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×