somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী সাহিত্যিক ও কিছু প্রশ্ন

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ বা সমরেশ মজুমদার এর মত জনপ্রিয় নারী উপন্যাসিক আসে নাই কেন? যাদের বই প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়বে, এক বই মেলায় একের পর এক সংস্করণ আসবে সপ্তাহ না ঘুরতেই। নিঃসন্দেহে অনেক বড় বড় লেখিকা আমরা পেয়েছি কিন্তু কেন তদের মত তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাসিক পাই নাই? অথচ আমরা দেখি অনেক উচুমানের নারী উপন্যাসিক আমাদের ছিল সব সময়ই। তাহলে কেন সেই অতটা জনপ্রিয়, পাঠক নন্দিত, প্রকাশকের কাঙ্ক্ষিত লেখিকা পাই নাই? এখানে পাঠকের বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির দায় কতটুকু?

শুধু সাহিত্য মান নিয়ে আমি বলছি না। আমি বলছি সাহিত্যমানের সাথে পাঠকপ্রিয়তা নিয়েও। তুখোড় সাহিত্য মান সমৃদ্ধ লেখা নিয়েও অনেকে উপরের উল্লেখিত লেখকেদের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে যেতে পারে নাই। অনেকেই জেনে আশ্চর্য হবেন রবীন্দ্র যুগেও উপন্যাসিক হিসাবে শরৎ এর জনপ্রিয়তা ছিল শীর্ষে। এ কালের হুমায়ূন আহমেদ এর কথাই ধরুন, তার লেখার সাহিত্যমান নিয়ে অনেক সাহিত্য বোদ্ধা গাইগুই করলেও কিন্তু উনার চেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক শরৎ এর পরে আর কেউ আসে নাই, এটাই সত্য। এমন কি কেউ কেউ তাকে শরৎ এর চেয়েও বেশী জনপ্রিয় বলে থাকেন।

বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অনেক অবদান রয়েছে। অনেক বড় বড় লেখিকাও পেয়েছি। যেমন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সুফিয়া কামাল, আশির দশকে পাওয়া গেছে তসলিমা নাসরিন,কৃষ্ণা বসু এবং মলি­কা সেনগুপ্ত কে। এছাড়াও রয়েছেন আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী , নবনীতা দেব সেন। কিন্তু কেউ কি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেছেন? অনেকেই তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন এটা সত্য। বর্তমানে যারা আছেন তাদের মাঝে তসলীমা নাসরিন অন্যতম। উনার তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে কিন্তু বিগত কোন সময়েই উনি বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে অবস্থান করেন নি।

জনপ্রিয়তা আর সাহিত্যমান আলাদা এটা সত্য। কিন্তু সাহিত্যের পুরো ইতিহাসে কেন একজন লেখিকাকেও পাওয়া যাবেনা শীর্ষে বা কাছাকাছি। আমার এই জিজ্ঞাসার মাঝে আমি যেটা জানতে চাই তা হল পাঠক হিসাবে আমাদের কোন দায় আছে কিনা তা জানা, সমাজের কোন দায় আছে কিনা তা জানা। বাঙালী পুরুষ শাসিত ভোগবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কি এই জন্য দায়ী? এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকভাবেই আসে কারন টেলিভিশন বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বিলবোর্ড পর্যন্ত কারনে অকারনে নারীকে দেখা যায়। যে পণ্যের সাথে নারীর কোন দূরতম যোগাযোগও নেই সেখানেও নারীকে উপস্থাপিত হতে দেখা যায়। তাহলে কি আমরা নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ দেখতে চাই না?

আমার কাছের এক বন্ধুর প্রেমিকা একটি নাম করা মেডিকেল কলেজে পড়ত। বন্ধুটি তার প্রেমিকাকে জিজ্ঞেস করেছিল এমবিবিএস শেষ করার পর তুমি কোন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে চাও পরবর্তী পড়াশোনার মাধ্যমে। সেই প্রেমিকা বলেছিল বাংলাদেশে মেয়েদের পথ দুইটা, নয় গাইনি বিশেষজ্ঞ হওয়া নতুবা শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়া। সে কারন জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটি বলেছিল বাংলাদেশে কেউ নারী ডাক্তারের কাছে আসে না এই দুটি ছাড়া। তার মানে মেডিসিন, কিডনি আরো কত বিশেষজ্ঞ আছে সেই সকল ডাক্তার পুরুষ না হলে কেউ যায় না? সে মেয়েটি নাকি বলেছিল যায় না বললেই চলে। আমি নিজে অবশ্য সত্য মিথ্যা অতটা জানিনা। তবে নিজের জীবনে মেডিসিনের অনেক ডাক্তার কে দেখিয়েছি সেখানে একজন ব্যাতিত সকল ডাক্তার পুরুষ ছিল। আমি ইচ্ছে করে নারী ডাক্তার দেখাই নাই সে রকম নয়, যাদের কাছে ভাল মেডিসিনের ডাক্তারের রেফারেন্স চেয়েছি তারা সবাই কোন না কোন পুরুষ ডাক্তারের নামই বলেছে। হয়তো ওই বন্ধুর প্রেমিকার কথাই ঠিক, কোন রুগী আসেনা তাই সেই ভাবে অন্যসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও খুব বেশী গড়ে উঠেনি।

বুদ্ধি বৃত্তিক বিকাশে নারীর সবচেয়ে বড় বাধা কি তাহলে পুরুষ শাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী? এই সমাজ কি নারীকে আজও ভোগের বস্তু মনে করে? শুধুমাত্র টিভি সিনেমার পর্দায় নারী কাঙ্ক্ষিত আর কোথাও কি এই সমাজ নারীকে দেখতে চায় না?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×