somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার ভয় নেই মা আমরা / প্রতিবাদ করতে জানি

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মনে পড়ে, ‘ক্ষ’র গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীতটি আমি কখনো শেয়ার করিনি। কারণ আমি সঙ্গীতের দাড়ি-কমা চিনিনা। তাই নিশ্চিত ছিলাম না এটি original সুরে গাওয়া নাকি experiment. তবে এতটা দরদী সুরে জাতীয় সঙ্গীত আমি কখনো শুনিনি।৮তারিখ যখন আমার লক্ষ-ভাইয়ের সাথে প্রচলিত সুরে জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলাম, পুরো শরীর কাপছিল আর চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে এমন অনুভুতি এর আগে কখনো হয়েছিল বলে মনে পড়েনা। মনে হচ্ছিলো মায়ের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ ঢুকে পড়েছে। মা বিষের যন্ত্রনায় কাদছে। ক্ষমতালোভীদের ব্যবহার করে প্রবেশ করানো হয়েছে এই বিষ। আর আমি এত দূর্ভাগা মায়ের এই যন্ত্রণা এতদিন দেখেও নির্বিকার ছিলাম। জানিনা সেই বিষ বের করতে আজ মায়ের কত রক্ত ঝরাতে হবে।

মহাসমবেশের এক পর্যায়ে বিশাল আকৃতির একটি পতাকা আমাদের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। লাল-সবুজ-হলুদের ওই পতাকা যখন আমাদের দিকে আসছিল, মনে হছিল এ কোন বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। পতাকাটি যখন মাথা স্পর্শ করে চলে গেলো, মনে হলো মা আশির্বাদ করে গেলেন। বললেন, "যা বাবা, দোয়া করে দিলাম। তোরা ৭১ কে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। সত্যিকারের মুক্তি তদের হাতেই আসবে।"

মহাসমাবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শপথ পাঠ। আমার অনুভূতির কথা নাইবা বললাম। উপস্থিত সকলের হাত তোলার ক্ষিপ্রতা, ভঙ্গি, শপথ পাঠে স্পষ্টতা, বিশুদ্ধতা বলে দিচ্ছিলো এ শুধু পাঠের জন্য শপথ নয়, এ যুদ্ধের শপথ।

ঐদিন আকাশ দেখে মনে হছিলো, আকাশটা হাসছে। রোদ ছিলনা, ছিলনা মেঘের আনাগোনা। পুরো আকাশ ছিল পরিষ্কার। পরে আবিষ্কার করলাম উজ্জল আকাশের রহস্য . এত আকাশ ছিলনা, ছিল লক্ষ শহীদের হাস্য-উজ্জল মুখ।

মহাসমাবেশের দিন শাহবাগ ও তার আসে পাশের পুরো এলাকা ছিল মানুষে মানুষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। একটি মানষকে ২টি টাকাও দেয়া হয়নি এখানে আসার জন্যে। এর পরও এত মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি, কখনো না। যারা উপস্থিত ছিলো তার ৯০% এর বেশি ছিলো যাদের জন্ম ৭১ এর পর। ৫২ যদি আমাদের সাধীনতার সংগ্রামের শুরু হয়ে থাকে, তবে ২০১৩ হলো রাজাকার মুক্ত প্রকৃত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামের শুরু। ইতিহাস এই দিনটিকে স্মরণ রাখতে বাধ্য .

এই সমাবেশে বেশ কিছু জিনিস আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। তার একটি হলো তথাকথিত বড় রাজনীতিবিদদের অনুপস্থিতি উত্সাহিত করা ও রাজনৈতিক ব্যানার অপসারণ। এত বড় সমাবেশে স্বেচ্চাসেবী ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। এর পর পুরো সমাবেশস্থল ছিল শুসৃন্খল। আর মেয়েদের উপস্থিতি কতটা নিরাপদ ছিল তা অনুমতি না নিয়ে আমার এক বোনের স্টাটাস থেকে কপি পেস্ট করলাম-

"ভিড় ভাট্টায় ধাক্কাধাক্কি হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু সত্যি কথা বলতে আজকে কোনও রকমের অস্বস্তি হয়নাই, একবারও মনে হয়নাই কোনও অসুস্থ হাত এগিয়ে আসছে কোনও দিক থেকে। বাংলাদেশ অভ্যস্ত হোক এরকম জনসমাবেশে, অচেনা অজানা ছেলেও যেন সমবয়সী মেয়েকে বন্ধু ভেবে পথ চলতে সাহায্য করে দিবে, এরকম দিন আসছে, সামনেই! " (বোন্, তোমার অনুমতি না নেয়ায় অপরাধ হলে ক্ষমা করে দিও)

শাহবাগের প্রতিবাদ যেন প্রতিবাদের উত্সব। মূল কেন্দ্র ছাড়াও পুরো এলাকা জুড়ে আছে ছোট ছোট বাহারি রকম প্রতিবাদের ভাষা। মোম বাতি, গণসাক্ষর, মশাল, মানচিত্র, কুশপুত্তলিকা, বন্ধ-খাচা, প্রজেকশন এ চলচিত্র আরো কত কি। অথচ সবার মুখে ছিল একই স্লোগান।

শাহবাগ প্রতিবাদ আজ মানুষকে এই বিশ্বাস দিয়েছে যে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত, রাজাকার মুক্ত, প্রকৃত দেশপ্রেমিক বাঙালির বাংলাদেশ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×