somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরাঙ্গনা না কচু, ওরাতো '৭১ এর বেশ্যা

২০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




*বীরাঙ্গনা মানে কি জানেন নাকি ভাই? একটু বুঝান তো।
-মাগী বুঝো??
*বুঝলাম না ভাই...
-আরে মাগী বেশ্যা এগুলান বুঝো না ? বীরাঙ্গনারা হইলো ১৯৭১ এর বেশ্যা।।
বুঝছো?
*জ্বী ভাই।।
কি বুঝছো??
যা বুঝাইলেন.।।


কিছুদিন আগে ভাই ব্রাদার নিয়ে সন্ধ্যায় আড্ডায় বসেছিলাম,কথা প্রসঙ্গে বীরাঙ্গনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখন আমারই এক জুনিওর আমাকে জানাই ঠিক এরকমই একটি কথাপোকথন হয়েছিল ২০১১ সালের শেষের দিকে, সে তার একভাই কে জিজ্ঞেস করলে সে এমন কথা বলে ।। তাই আজ আমার এ লেখাটি,


***অনেকেই আছে যারা বীরাঙ্গনা মানেই জানে না।। আর নব্য রাজাকারেরা বলে একাত্তরের বেশ্যা বা ইজ্জ্বত হারা মহিলারা।। একথা শুনে লজ্জ্বা লাগে না আমার, তবে ভীতরে একটা হিংস্র ভাব অনুভূত হয়, তবে কস্ট হয় এই ভেবে স্বাধীনতার এত বছর পরেও ইতিহাস টা জানলো না।।।
নীলিমা ইব্রাহীম এর "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" উপন্যাস টা কি পড়েছেন??? সেখান থেকে কিছু দেওয়ার চেস্টা করছি।।
দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু বীরাঙ্গনাদের জন্য পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। নীলিমা ইব্রাহীম সে-ই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাসন্তী গুহঠাকুরতা, নূরজাহান মুরশিদ, রাজিয়া বেগম, মমতাজ বেগম, নওসবা শরীফ। অনেক বীরাঙ্গনাকে ধানমণ্ডিতে পুনর্বাসিত করা হয়। সেখানে তাঁদের মেডিক্যাল সাহায্য দেয়া হতো। সেই কেন্দ্র থেকে প্রায় দুইশত শিশুকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে মিসেস টি নিয়েলসনের একটি সাক্ষাৎকারের কথা। যে সাক্ষাৎকারটি আগরতলার রবীন্দ্র সেনগুপ্তের সহযোগিতায় দুলাল ঘোষ সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এটি নীলিমা ইব্রাহীম এটি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়-
যে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে পাকিস্তানি সেনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন, একদিন তিনি এলেন। সব কিছু জেনেও আমি তার পা জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, ‘কাকাবাবু, আমাকে বাবার কাছে রেখে আসুন। ছোট্টবেলা থেকে আপনি আমাকে চেনেন। আপনার মেয়ে সুলতানার সঙ্গে আমি একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি, স্কুলে পড়েছি। আমাকে দয়া করুন’।
উনি পা ঝাড়া দিয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।
…প্রথমে আমার উপর পাশবিক অত্যাচার করে একজন বাঙালি। আমি বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিলাম।
…আমাদের শাড়ি পরতে বা দোপাট্টা ব্যবহার করতে দেয়া হত না। কোন ক্যাম্পে নাকি কোন একটা মেয়ে গলায় শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
…প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে সব রমণী মাতৃভূমির জন্য তাদের সতীত্ব, নারীত্ব হারিয়েছে তিনি তাদের বীরাঙ্গনা আখ্যায় ভূষিত করেছেন। অন্তরের শ্রদ্ধা জানালাম সেই মহানায়কের উদ্দেশ্যে। আমি বীরাঙ্গনা, এতোবড় সম্মান আমি পেয়েছি। আমি ধন্য কিন্তু চোখের জল কেনো জানি না বাঁধা মানতে চায় না।
বাবাকে দেখবার জন্য, তাদের খবর নেবার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য এমন কাউকে দেখি না যাঁকে অনুরোধ করা যায়। শেষে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কার্যনির্বাহি অফিসার মোসফেকা মাহমুদকে বাবার ঠিকানা দিলাম। পথের দিকে তাকিয়ে থাকি, যেনো খবর পেয়েই বাবা ছুটে আসবেন। কিন্তু না দিন গড়িয়ে সপ্তাহ গেল। খবর পেলাম বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে সে সব মেরামত করা নিয়ে বাবা ব্যস্ত, আসবেন কয়েক দিনের মধ্যে। শুধু উচ্চারণ করলাম,‘বাবা তুমিও’!
ইত্যবসরে আমার গর্ভপাত করানো হলো, কারণ এতদিনে বাস্তবতা বুঝে গেছি।
…আপা (নীলিমা ইব্রাহীম), আপনি তো দেখেছেন মেয়েরা কিছুতেই গর্ভপাতে রাজি হয়নি। আপা, আপনার মনে আছে মর্জিনার কথা? সেই যে ফ্রকপরা মেয়েটি। আপনাকে দেখলেই চিৎকার করতো, আর বলতো, আপনি তার ছেলেকে চুরি করে বিদেশ পাঠিয়ে দেবেন। আপনি মর্জিনার কষ্ট দেখে পাঠাতে আগ্রহী ছিলেন না।
…বঙ্গবন্ধুকে যখন বলেছিলাম (নীলিমা ইব্রাহীম) উনি বল্লেন, ‘না আপা, পিতৃপরিচয় যাদের নেই সবাইকে পাঠিয়ে দেন। মানুষের সন্তান মানুষের মতো বড়ো হোক।
…নিয়েলের ভালবাসা, স্নেহ, মমতা আমার অতীতকাল মুছে ফেললো। তারা ব্যানার্জী থেকে আমি হলাম মিসেস টি নিয়েলসন ।
…স্বদেশে আমার সত্যিকার পরিচয় নেই, তারা ব্যানার্জী মরে গেছে … আমি কোথায়? ওদের কাছে আমি ঘৃণ্য, নিন্দিত, মৃত।
…দেশে সম্মান মর্যাদা যা পেয়েছি মিসেস টি নিয়েলসন আর টমাসের মা হিসাবে।
…জন্ম দিলে জননী হওয়া যায় কিন্তু লালন পালন না করলে মা হওয়া যায় না। আমি জন্মেছিলাম সোনার বাঙলায়, লালিত হচ্ছি ডেনমার্কের ভূমিতে। তবুও সেই মাটিতেই হবে আমার শেষ শয্যা…।

***সবচেয়ে বড় খারাপ বা কস্টটা তখনই লাগে যে পিতা বা যে স্বামী তার কন্যা বা স্ত্রী কে রক্ষা করতে পারেনি, নিজের জীবন নিয়ে কাপুরুষ এর মত পালিয়েছে, তাদের কন্যা অথবা স্ত্রী কে রেখে গেছে পাকিস্তানী কুত্তাদের নিকটে, তারাই আবার যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বলল সমাজে তোমাদের কে ফিরিয়ে নিতে পারব না আবার কেউ বলল, তোমাকে গ্রহন করতে পারবো না কারন তোমার ইজ্জত খুয়িয়েছ।।। তারা নতুন বিবাহ করেছে অনেকেই।।।
আচ্ছা, এবার বলুন তো তারা আত্মহনন এর চেস্টা কেন করবে না, যে স্বামী বা পিতা পাকিস্তানি নরপিশাচ এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি, তারাই এসব কথা বলছে।।। জ্বী, এনারাই বাংগালি বাবু।।।

*** বীরাঙ্গনাদের কিছুই নেই, না আছে স্বামী, না আছে পিতা, না আছে সমাজ আর না আছে সামাজিক মর্যাদা।। দেশে কতজন বীরাঙ্গনা আছেন সেটাই হয়তো এখনো জানা যায় নি।। এদের কে নিয়ে কথা বলতে সবাই নারাজ।। যদি কোন বীরাঙ্গনার নিকটে যাওয়া হয় লজ্জ্বায় তারা মুখ ঢেকে ফেলে, আসলে লজ্জ্বা পাওয়ার কথা কাদের??? প্রশ্ন তোলা থাকলো।।।

***সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতার এত বছর পরেও
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কোন আলাপ নেই, কোন সমাচার নেই।। তারা কে কোথায় কিভাবে আছে তাও কেউ জানে না।। তাদের সংখ্যা কত সেটাও কেউ জানে না তবে,
বীণা ডি’কস্টা তার “Bangladesh’s erase past’ প্রবন্ধে জানাচ্ছেন যে, সরকারী হিসাব অনুযায়ী একাত্তরে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল দুই লক্ষ নারীকে। একটি ইটালিয়ান মেডিক্যাল সার্ভেতে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা বলা হয়েছে চল্লিশ হাজার। লন্ডন ভিত্তিক International Planned Parenthood Federation (IPPF) এই সংখ্যাকে বলেছে দুই লাখ। অন্যদিকে যুদ্ধ শিশুদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সমাজকর্মী ডঃ জিওফ্রে ডেভিসের মতে এই সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। সুজান ব্রাউনমিলারও ধর্ষিতার সংখ্যা চার লাখ বলে উল্লেখ করেছেন।

*** এবার আসি বীরাঙ্গনারা যে সন্তান প্রসব করেছিল তাদের কি অবস্থা হয়েছিল।। কোন এক সাময়িকীর চিঠিপত্র কলামে ছাপা হয়েছিল এক কিশোর যুদ্ধ শিশুর চিঠি। বাংলাদেশের কোন এক মাদ্রাসার ছাত্র ছিল সে। সেখানে তাকে নিত্যদিন ‘জাউরা’, ‘পাকিস্তানীর পুত’সহ নানাবিধ টিটকারী শুনতে হতো সহপাঠীদের কাছ থেকে। সেই কিশোর যুদ্ধ শিশু করুণ আর্তিতে জানতে চেয়েছিল, এই দেশে কি তার কোনই অধিকার নেই। সে কি পাকিস্তানী কোন লম্পট ধর্ষক সৈনিকের ঘৃণ্য সন্তান, নাকি এই দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা এক নির্যাতিতা মায়ের গর্বিত সন্তান? কোন পরিচয়টা তার আসল পরিচয়?

***বীরাঙ্গনা খেতাবই শুধু জুটেছে তাদের মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।।।

শেষে একটি কথায় বলতে চাই,বীরাঙ্গনারা হলেন আমার শাশ্বত, চিরসুধাময়ী,গর্বিত মা।

তথ্য নিয়েছিঃ নীলিমা ইব্রাহীম এর আমি বীরাঙ্গনা বলছি, বীণা ডি’কস্টার “Bangladesh’s erase past’ এবং ইউটিউব থেকে।।।
ছবিটি ঃ মুজিবনগর,মেহেরপুরের একটি ভাস্কর্য।

বি দ্র ঃ লেখাটি বেশ আগেই লিখেছিলাম, কিন্তু সেদিন আড্ডার পর বুঝলাম লেখাটি দেয়া দরকার, কারন নতুন প্রজন্ম কে জানতে হবে বুঝতে হবে কে বা কারা বীরাঙ্গনা ।।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×