"ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন একটু জিরো " .... আশ্চর্য পরিষ্কার গলায় পাখি বলে উঠল, এখানে পাখিদের মুখের ভাষাও বাংলা।। আজ আমি ফেলুদা কপচাতে আসিনি, তবে হয়তো ভাষা নিয়ে কিছু একটা লেখার প্রয়াস জেগেছে মনে,সংগত কারনে ফিল্ম তো উঠে আসবেই।।
আর ফিল্মি ব্যপার মানে এত্ত বছরে যেহেতু গোটা কয়েক নাটক আর দু একটা সিনেমা যেহেতু আছে তাই পুর্ব বংগের বাংলা ছবির আদি পুরুষ জহির রায়হান সাহেব উঠে আসবেন, কিন্তু কথা হবে মুলত তৌকির আহমেদের ফাগুন হাওয়ায় নিয়ে কারন এই শীতে সে বেশ ফাল্গুনী হাওয়া দিচ্ছে।। ফিল্ম আসতে আসতে হয়তো আসলেই ফাল্গুনের দেখা পাবো।
এটা ভাষার মাস, আমাদের মত চেতনাবাদি লোকজন খুব চিল্লা চিল্লি করে মাঝে মাঝেই, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে, গেছে বা গেল।। আসলেই কি তাই?? হয়তো কিছুটা বা পুরোটাই।।
বাংলা ভাষার অবস্থা বর্তমানে কেমন?? শক্ত, পাকাপোক্ত নাকি ডুবুডুবু?? মানুষ কি সাধারন, প্রয়োজনীয় ও দাপ্তরিক ব্যপার গুলা ভুলতে শুরু করেছে?? ভাত আর বিরিয়ানিরর পার্থক্যটা বুঝতে পারছে না??
এই ধরুন বলা হলো, রেস্টুরেন্ট এ গেলেন সেখানে আপনি আপনার চির পরিচিত মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছেন না, আপনি গেলেন, তারা বলল হ্যালো, আপনি হাই জানিয়ে বললেন, এ টেবিল ফর টু তারা বলল দিস ওয়ে, এভাবে কথা এগুতে থাকলে আপনি অর্ডার করছেন ইংরেজি তে।।
আজকাল দেখা যায় ফার্স্ট রিলেশনশিপে গেলেও এমন ভাব করেন যেন বাংলা টা ঠিক আসে না, জোর করে আনছেন।।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে না পড়ালে যেন মান সম্মান নিয়ে টেকা যায় আবার সেই সন্তান যখন বলে মাম্মি মাম্মি ফিফটি টু মানে কি বত্রিশ, তখন আমাদের জাত যায় না।
আজকাল কোন হোস্ট কে বাংলাতে প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করতে দেখেন??
যে দেশে সস্তার মদ কে বলা হয় বাংলা মদ আর সহজ ভাবে বোঝা কে বলা হয় বাংলায় বোঝা যেখানে বাংলার অবস্থান টা কতটুকু শক্ত??
যায়হোক, ক্ষোভ বা আক্ষেপ এর কথা থাক। আসলে বাংলা ভাষার ইতিহাস এত সহজ তো কোন কালেই ছিল না, কত আন্দোলন, কত রক্ত।। কতকাল ধরে বিহার, মানভুম, ঝাড়খণ্ড, আসাম ও আমাদের পুর্ব বাংলায় আন্দোলন হয়েছে, আসামে তো ১১ জন মারাও গেল বরাক উপত্যকা তে।
তারপর ও আমাদের জাতীর দায়বদ্ধতার জায়গা টা একদমই নেই, একটা জাতি কে উপস্থাপন করে ফিল্ম, বই।। সেখান থেকে আমার দেখে ভাষা নিয়ে কে কি করলো?? ভাষা আন্দোলন কে নিয়ে কি করলো আর ফেব্রুয়ারি বা এত রক্ত নিয়েই বা কি করলো??
আমাদের দর্শক কি ফিল্ম খায় না??
মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন এর মুভি মানে অনুদান বা লো-বাজেট সেটাই বা কেন??
কেনই বা একটা পরিচালক এত কষ্ট করে একটা ফিল্ম বানিয়ে ১০ টা হল পায়??
কোন কোন ফিল্ম তো তাও পায় না শুধু শিল্পকলা আর টাউন হলে দেখাতে হয়।। তারপর ইউটিউবে এর মত ফ্রি সাইট তো আছেই।।
অদ্ভুত লাগে, আমাদের মত চেতনাবাদি লোকেরা সারাদিন মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে ফেনা তুলে ফেলি মুখে, মার্চ মাসেই মুক্তি পেয়েছিল ফখরুল সাহেবের ভুবন মাঝি ছবিটি, দুর্দান্ত সিনেম্যাটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্ট, গান, প্লট তো জানেনই, কই সে মুভিটি হয়তো ১৪ টা হল পেল, সেই একই দিনে মুক্তি পেল বাপ্পি ভাইয়ের মিসড কল ফিল্ম টি সেটা পেল ৮০ টা হল এ।।
আচ্ছা, মশাই এটাকেই কি তাহলে Clash বলে??অদ্ভুতুড়ে ব্যপার!!
যায়হোক, সবকিছুর উর্ধ্বে চিন্তা করলে দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা হলেও অনেক কম হয়েছে ভাষা আন্দলোন নিয়ে, সেই জায়গা থেকে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন সব সময়ের প্রিয় মানুষ তৌকির আহমেদ, তার কাজ গুলো আমার অনেক পছন্দের।। কিন্তু তিনি ফিল্ম মার্কেটিং বা প্রোমোশন এ যান না, তবে সেটা কেন আমি জানি না।।
ফাগুন হাওয়ায় মফস্বলের গল্প কিন্তু সেটা কি মফস্বল এর সিনেমা হল পর্যন্ত পৌছাবে?? এই মুভি নিয়ে কিছু বলাও এখন অন্যায় হবে, স্পয়লার বলে একটা শব্দ তো এখনো ইংরেজি তে আছে যেটা বাংলা ভাষী মানুষ বাংলার চেয়ে ভাল বুঝে।। "বউ কথা কউ" কে উপজীব্য করেই ফাগুন হাওয়ায় এর সৃষ্টি।। ধন্যবাদ টিটো রহমান কে।। ধন্যবাদ তৌকির আহমেদ কে।।
শেষমেশ বলতে চায়, মা গো আমি তোমার কোলে শুয়েই গল্প শুনতে চাই, পাখির মত ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ছড়িয়ে যাক বাংলা ভাষা, ফাগুন হাওয়ায় ডেকে উঠুক বউ কথা কও।।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




