প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে থাকতে খুবই হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। প্রতিদিনের চলার পথে আমাদের বাস যখন রাস্তায় ঠায় দাড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠিক তখনই পাশ দিয়ে বাইকগুলো কত দ্রুতগতিতে পার হয়ে যায় দেখে হিংসে হয়। আমরা বাসে যেখানে তিন ঘন্টায় মিরপুর থেকে মতিঝিল পৌছাই সেখানে বাইকাররা ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই কত সহজেই তাদের গন্তব্যে পৌছে যায়। আর এ ভাবনা থেকেই একটা বাইক কেনার খুব ইচ্ছে হয়। আমার এই ভাবনাটা আমার অফিসের সহকর্মী মাকসুদ ভাইয়ের সাথেও শেয়ার করি। আমার ভাবনার সাথে মাকসুদ ভাইয়ের ভাবনাও মিলে যায়। শুরু হয় ইন্টারনেটে বাইক কম খরচে বেশি মাইলেজ পাওয়া যায় এমন একটি বাইকের খোজাখুজি। আমার বাজেট কম তাই অনেক খোজাখুজির পর নিজের জন্য টিভিএস মেট্রো ১০০ সিসি বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেই। মাকসুদ ভাইয়ের বাজেট একটু বেশি তাই উনাকে টিভিএস স্টাইকার ১২৫ কেনার পরামর্শ দেই।
গত সপ্তাহে আমি টিভিএস ১০০ বাইকটি ক্রয় করি, রবিবার অফিসে গিয়ে শুনি আমার সহকর্মী মাকসুদ ভাইও একটি বাইক কিনেছেন তবে নতুন বাইক নয় পুরাতন, বাজাজ ডিসকভার ১২৫। আমার অফিস কলিগরা তাকে খুবই বকাবকি করে পুরাতন বাইক কেনার জন্য।
আমার কলিগ মাকসুদ ভাইয়ের স্ত্রী তানজিনা ভাবী প্রাইম ব্যাংকের অফিসার পদে কর্মরত আছেন। ভাবি ঢাকা ভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞান বিভাবে সাবেক ছাত্রী। দুজনেরই অফিসই প্রায় কাছাকাছি তাই প্রতিদিন দুজন একসাথে অফিসে আসেন। ভাবি সাত মাসের অন্তঃসত্তা ছিলেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের ঘর আলো করে প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা ছিল। উনাদের বাসা যাত্রাবাড়ীতে, প্রতিদিন সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল আসতে গাড়ি পেতে খুবই কষ্ট হয়। তাই ভাবিকে অফিসে নিয়ে আসার জন্যই বাইকটি তাড়াহুড়ো করেই কিনেছিলেন মাকসুদ ভাই।
আমি বাইক চালাতে জানি না গত এক সপ্তাহ ধরে প্যাকটিস করে মোটামুটি বাইক চাললোর বিষয়টি আয়ত্ত্ব করেছি,তাছাড়া এখনও আমার গাড়ির কাগজপত্র রেডি হয়নি তাই বাসার আশপাশ দিয়েই বাইক চালচ্ছি আর নিজেকে একজন দক্ষ বাইকার হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমার কলিগ মাকসুদ ভাই অনেক ছোটবেলা থেকেই বাইক চালান তাছাড়া উনার গাড়িটি পুরনো হওয়ায় কাগজপত্র সব রেডিই ছিল।গত এক সপ্তাহ ধরে বাইক কেনার পর থেকেই তিনি খুবই এক্সসাইটেড ছিলেন। প্রতিদিন সকালে অফিসের চায়ের আড্ডায় ভাবিকে কিভাবে অফিসে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন আমাদের সাথে সেই অভিজ্ঞতা বর্ননা করেন।
গতকাল (০৭-১০-২০১৮) ভাবিকে পিছনে বসিয়ে অফিসে আসছিলেন মাকসুদ ভাই। দূর্ঘটনাটি ঘটে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের উপরে,অন্য একটি বাইকের সাথে মাকসুদ ভাইয়ের বাইকের সংঘর্ষ হয়। অন্য বাইকের পিছনে বসে থাকা মহিলা যাত্রী ছিটকে পড়ে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি মাইক্রোবাসের নীচে পড়েই ঘটনা স্থলেই মারা যায়। মাকসুদ ভাই এবং ভাবি দুজনই গুরুতর আহত হন। মাকসুদ অলৈকিক ভাবে বেচে গেলেও ভাবী ১০ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে রাত ১০.৩০ মিনিটের দিকে ইন্তেকাল করেন সাথে তাদের অনাগত সন্তান।
মৃত্যু এক চরম সত্য কিন্তু এই অকাল মৃত্যুকে মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। সবাই দোয়া করবেন তাদের পরিবার যেন এই শোক সইতে পারে। আমার হয়তো আর বাইক চালানো হবে না। আপনারা যারা বাইক চালান খুবই সাবধানে বাইক চালানোর পরামর্শ রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




