এতক্ষণ বললাম স্বপ্নে কথা, কিন্তু এই মেট্রোরেলে তৈরির পিছনে ঢাকাবাসীর ভোগান্তিও কম নয়। আগে থেকেই ভয়াবহ যানজটে নাকাল নগরবাসী তার উপর চলছে মেট্রোরেলের জন্য রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ির কাজ। ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে, সেই সাথে বেড়েছে যানজটের তীব্রতা। খুব জরুরী না হলে এখন আর কেউ মিরপুরের পথ মাড়ান না। তার উপর আবার গত একমাস যোগ হয়েছিল বিপিএল এবং বাণিজ্যমেলার ভোগান্তি। আপাতত বিপিএল বানিজ্যমেলা দূটোই শেষ, তবুও স্বস্তি নেই যানজটের হাত থেকে,তাই অনেকেই যানজট থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে বিকল্প রাস্তা খোঁজেন।
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। ঢাকা শহরে অন্য এলাকার চেয়ে সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম। এখানে সবাইকে নিয়মকানুনের মধ্যদিয়ে চলতে হয়, নিয়মের একটু হেরফের হলেই পড়তে হয় কঠোর শাস্তির মুখে, তাই এ এলাকায় নিয়ম ভাঙ্গার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। মিরপুর থেকে ফার্মগেট আসতে সহজ রাস্তা একটাই, সেটা হচ্ছে মিরপুর ১৪ নম্বর হয়ে কচুক্ষেত দিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে জাহাঙ্গীরগগেট দিয়ে বের হয়ে সোজা ফার্মগেট। এটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা তাই এখানে সাধারণ মানুষের চলাচলে বেশকিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এখানে সেনা সদরের অনুমোদনবিহীন কোন গাড়ি চলতে পারে না। তাই সাধারণ মানুষের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। এখান দিয়ে যেতে চাইলে একটাই ভরসা, সেনাবাহিনী পরিচালিত বাস সার্ভিস "ট্রাস্ট পরিবহন "। বিকেলে কারওয়ান বাজার থেকে ট্রাস্ট পরিবহণে কোন রকমভাবে একবার উঠতে পারলেই অনেকে একটা যুদ্ধ জয়ের সমান আনন্দ পান।এই গাড়িতে কোনরকম উঠে দাঁড়াতে পারলেই স্বস্তি। কিন্তু গাড়ি যখন ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশমুখ জাহাঙ্গীরগেটে আসে তখনি হয় বিপত্তি, সেনাসদস্যরা বাসে দাঁড়ানো যাত্রী দেখলেই গাড়ি আটকে রাখেন, ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতে দেন না। তাই জাহাঙ্গীরগেট আসার আগেই গাড়ির হেলপাররা যাত্রীদের সংকেত দিতে থাকেন
-"আপনার সবাই নিচে মেঝেতে বসে পড়ুন নাহলে গাড়ি আটকে দেবে"।
বেশিরভাগ যাত্রীই গাড়ির ময়লা মেঝেতে বসে পড়েন সেনাসদস্যাদের বাস আটকের ভয়ে। অনেক সময় দুএকজন বসতে চান না তখনি গাড়ি আটকে দেওয়া হয়।
সেনাবাহিনী কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে বিপদেআপদে সেনাবাহিনী সবসময়ই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যদিয়ে বাস সার্ভিস চালু হবে এটা সাধারণ মানুষ কোনদিন ভাবতেই পারেনি। এই সার্ভিসের জন্য সেনাবাহিনী অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সেনাসদরের প্রতি অনুরোধ যতদিন মেট্রো রেলের কাজ শেষ না হয় ততদিন অন্তত ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের নিয়মকানুন একটু শিথিল করা হোক, এবং ট্রাস্ট পরিবহণে মানুষকে দাঁড়িয়ে যাতায়াতের সুযোগ করে হোক অথবা ট্রাষ্ট পরিবহণের গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।
আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জন্য অনেক ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩৪