সৃষ্টিকর্তার কি অপূর্ব মহিমা! যে মেয়েটি বাবার বাড়িতে একগ্লাস পানিও ঢেলে খায়নি, সেই মেয়েটিই যখন একজন মা তখনি প্রকাশ পায় তার ভিন্নরূপ। অবলীলায় হাসি মুখে সন্তানের জন্য সব দুঃখ কষ্ট সয়ে যান। রাতের পর রাত জেগে সন্তানকে দুধ পান করান, সন্তানের সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য সারারাত দুচোখের পাতা এক করেন না। চরম শুচিবাই গ্রস্থ মেয়েটিও হাসি মুখে সন্তানের মলমুত্র পরিষ্কার করেন। তার একমাত্র চিন্তা কিসে সন্তানের ভাল হবে, কি করলে সন্তান তার ভাল থাকবে।
আমার মা একজন গৃহিণী,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংসারের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেন। আবার খাবারের সময় সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পরই আম্মা খেতে বসেন। আমার এবং আমার বোনের ফেলে রাখা খাবারটা আম্মা খেয়ে নেন। কিছু বললে বলেন অযথা খাবার নষ্ট করে লাভ কি? আম্মা বেশীরভাগ দিনই মাছের লেজ খান, আমরা সাধারণত কাটার জন্য লেজ খেতে চাই না, তাই লেজটা সবসময় আম্মার ভাগেই জোটে। সেই ছোটবেলা থেকে এখনো আম্মার সামনে যদি কোন খাবারের নাম একবার উচ্চরণ করি , আম্মা যেখান সেটা যেভাবে পারুক হাজির করবেনই।
আম্মা শুধু আমাদেরকে নিয়ে ভাবেন তা নয় আশপাশের মানুষগুলোকে নিয়েও উনার ভাবনার কমতি নেই। একবার যশোর থাকাকালীন সময় আমাদের উপরের ফ্লাটে একজন মহিলার স্বামী বিদেশ থাকতেন তিনি খুব একটা আশপাশের মানুষের সাথে মিশতেন না তাই আমাদেরও সাথে খুব একটা ভাল সম্পর্ক ছিল না।একদিন মহিলাটি যখন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন সেদিন উনার পাশে দাড়ানোর মত কোন মানুষ ছিল না। আমার মা সেদিন একাই মহিলাটিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডেলিভারি হওয়ার পরও সারারাত উনার পাশে ছিলেন। সেদিন আমাদের খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য কাজে বেশ অসুবিধে হয়েছিল তাই আমরা আম্মার প্রতি বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আজ এই ঘটনাটি মনে পড়ে চোখে জল এসে গেল।সৃষ্টকর্তাকে ধন্যবাদ দেই এমন মায়ের গর্ভে আমাকে পাঠানোর জন্য।
গত ১৫ বছর ধরে আম্মার সাথে একসাথে থাকা হয়না। আজকের এই দিনে আম্মাকে বড়ই মিস করছি।
মা তোমায় সালাম, মরণের পর তোমার চরণে একটু জায়গা দিও মা।
নারী তোমায় সালাম, সকলকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
(রিপোষ্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭