somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশঃ স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতার আরও এক বছর পার হলো। বর্তমান সময়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন কী হবে সেটাই আমার আলোচ্য বিষয়। এখানে খেয়াল রাখা দরকার আমি স্বাধীনতা নামক কোনো একাট্টা, ধ্রুব ও পরম কোনো ধারণার খরিদ্দার নই। আবার এ-রকম পরম ধারণার পিছনে যে-আবেগ কাজ করে, বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সে-আইডেন্টিটিকেও ইতিহাসের মধ্যে ধরার কর্তব্য এতো বছর ধরে আমরা শেষ করতে পারিনি। স্থায়ী, ধ্রুব বা আবেগজাত ধারণা আকারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাজনৈতিক সংগ্রাম ও যুদ্ধকে বিচার না করে এ-অঞ্চলের জনগণ এবং বিভিন্ন শ্রেণীর রাজনৈতিক বাসনা-জাত ঐতিহাসিক সক্রিয়তাকে জানা বা বুঝাটাই আমি কর্তব্য জ্ঞান করি। লেনিনও জাতীয় মুক্তির পক্ষেই থাকবেন, কিন্তু কেনো এবং কীভাবে তিনি চলেন, তা বুঝার চেষ্টা করি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পোলিস বিপ্লবী রোজা লুসেমবুর্গের সাথে লেনিন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন প্রসঙ্গে তর্কে অবতীর্ণ হন। রোজা মনে করতেন, জাতীয় স্বাধীনতা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য এক অলীক স্বপ্ন, যা তাদের আরও বেশি-করে জাতীয় বুর্জোয়াদের অধীনস্হ করবে। বিপরীতে লেনিন জাতীয় মুক্তি প্রসঙ্গটি সাম্রাজ্যবাদ এবং শ্রমিক শ্রেণীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐক্যের সাপেক্ষে বিচার করেছেন এবং এ-সাপেক্ষেই জাতীয় মুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদী ধারা কর্তৃক অন্য দেশে পরিচালিত আগ্রাসনের ক্ষেত্রে লেনিন শ্রমিক নেতৃত্বকে সতর্ক করেছেন। যেমন মার্কসের সময় বৃটেনে শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিলো আইরিশদের প্রতি তাদের বর্ণবাদী মনোভাব। আজকে আমাদের মধ্যে আফগানিস্তান বা ইরাকের জাতীয় মুক্তির চাইতে তালেবান বা আল-কায়দা বিরোধিতা প্রবল হতে দেখা যায়। এ-মনোভাবকে ক্রিটিক্যালী না দেখলে সর্বহারার আন্তর্জাতিকতার উন্মেষ সম্ভব নয়। লেনিন এ-দিকেই জোর দিতেন এবং যার আলোকে নিজ ও অন্য দেশের জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন তিনি বিচার করেছেন।

কিন্তু এটা বুঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, কীসের ভিত্তিতে শ্রমিক শ্রেণী জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেবে? জাতীয় মুক্তি অর্জিত হলেই তো আর শ্রেণী বিরোধের মীমাংসা হয় না। তাই লেনিন এ-ব্যাপারে সতর্ক করেন যে, বুর্জোয়াদের সাথে জাতীয় ঐক্যের উপরে সর্বহারার আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যকে স্থান দিতে হবে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত শ্রমিক শ্রেণীকে অবশ্যই নিজস্ব রাজনৈতিক এবং পার্টিগত অবস্থানে সুসংহত হতে হবে। এবং সংগ্রামের নেতৃত্ব দখল করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতায় এ-প্রক্রিয়া কতোটুকু সম্পন্ন হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ছাত্রলীগ নিউক্লিয়াস (পরবর্তীতে জাসদ) ৭১-এ বুর্জোয়া নেতৃত্বের একদম ভিতর থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের পলিসী নেয়। মস্কোপন্থীরাও আওয়ামী লীগের ধামাধরা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তারপরও হাস্যকরভাবে কোন কোন অর্বাচীন এখনও ছাত্রলীগ নিউক্লিয়াসকে স্বাধীনতার যুদ্ধের সবচাইতে সংগঠিত অংশ বলে মহিমান্বিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাসেও আমরা প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সবচাইতে বড়ো ভূমিকা নেয় সেখানকার শ্রমিক শ্রেণী। অথচ তারা জাতীয়তাবাদী এএনসির নেতৃত্বের বাইরে লড়াই সংগ্রাম পরিচালিত করতে না পারায় বর্তমান তাদের বেহাল অবস্থা। কাজেই লেনিনের কাছে জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন মানে শুধু যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া নয়। বরং শ্রেণীগত অবস্থানে ছাড় না দেয়া, সংগ্রামের নেতৃত্বে আসীন হওয়া এবং সর্বোপরি সর্বহারার আন্তর্জাতিকতা এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার আলোকে অবস্থান নেয়া। বিষয়গুলো আলাদা নয়। বরং একত্র। এর সাপেক্ষেই অন্য শ্রেণীর সাথে রাজনৈতিক মিত্রতা হতে পারে জাতীয় প্রশ্নে।

আমাদের ইতিহাসের নদী একই দিকে বহে নাই। ৭১-এ আওয়ামী-লীগ তথা উঠতি বাঙালী মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক এ-দুই শ্রেণীর মধ্যে জাতীয় মুক্তি প্রশ্নে সাধারণ স্বার্থ ছিলো, কিন্তু লেনিনীয় অর্থে কোনো ঐক্য হয় নাই। তদুপরি শ্রমিক-কৃষক শ্রেণীর অংশগ্রহণ এবং চরম আত্মত্যাগকে আওয়ামী-পন্থীরা সম্পূর্ণভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যুদ্ধের সময় ভারতের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট মুজিব বাহিনী কর্তৃক নকশাল দমন অভিযানের নামে দেশ-প্রেমিক বিপ্লবীদের হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দেয় শ্রমিক-কৃষক প্রশ্নে শ্রেণীগত ঐক্য তো দূরের থাকুক বরং চরম নির্মমভাবে দমন-পীড়নে যুদ্ধ-কালীন সময়েও পিছপা হয় নাই আওয়ামী-লীগ। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অভাবনীয় ঘটনা ঘটে।

পাকিস্তান গণ-পরিষদের সদস্যরা নিজেদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান সভার সদস্য দাবী করে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরীতে হাত দেন। কিন্তু কোনো ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে? ভারতীয় মদদে সংবিধান সভার সভ্যদের প্রণীত এ-সংবিধানই তবে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়তি? সংবিধান সভার ন্যুনতম শর্তও পুরন হল না কেন?তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় কমান্ডে যুদ্ধ পরিচালনা, ভারতীয় বাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী-লীগের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ৭১-এর স্বাধীনতা-যুদ্ধে সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে সর্বহারা পার্টি দক্ষিণ বঙ্গে পাক-হানাদার এবং সম্প্রসারনবাদী ভারতীয় দালালদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।এর আগে বারবার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব জাতীয় মুক্তির রুপরেখা আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য পার্টির কাছে স্পষ্ট করেন।কিন্তু কোন সারা না পেয়ে জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে 'ছয় পাহাড়ের দালাল' আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং একমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বেই জাতীয় মুক্তি সম্ভব একথা জোর করে বলা হয়। বর্তমানে আওয়ামী সিমপাথাইজার তথাকথিত বামদের কেউ-কেউ ভ্রান্তি বিলাসে আক্রান্ত হয়ে এমনটা প্রচার করেন যে, ৭১-এ উঠতি বাঙালী মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক-কৃষকের শ্রেণীগত স্বার্থের ঐক্য ছিলো। কিন্তু বাস্তবে শ্রমিক-কৃষক শ্রেণীর জন্য এটা ছিলো স্ব-নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থে নিজেদের ব্যবহৃত হওয়া, অবশ্যই ঐক্য নয়।

লেনিন সাম্রাজ্যবাদ প্রশ্নে ছাড় দিয়ে জাতীয় মুক্তির সপক্ষে অবস্থান অসম্ভব বলে মনে করতেন, এটা আগেও বলেছি। আমাদের বরেণ্য (?) অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ও গং স্বাধীনতা পূর্ব-কালে দুই-অর্থনীতির তত্ত্ব দেন। পূর্ব-পাকিস্তানে কৃষি ও শিল্পের বিকাশ এবং তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-মূলক সম্পর্কের বিচার না করে এ-তত্ত্বে বাঙালী বনাম পাঞ্জাবী - এই বর্ণবাদী বিরোধিতাই প্রধান হয়ে উঠেছে। জাতীয় মুক্তির প্রশ্নকে জাতিতে-জাতিতে দ্বন্দ্বের মধ্যে পর্যবসিত করার প্রতিক্রিয়াশীলতা সম্পর্ক আমরা মোটামুটি ওয়াকিবহাল। বর্তমানে তথাকথিত সিভিল সোসাইটির পুরোধা এই রেহমান সোবহানরা সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় এজেন্সীর ভূমিকা পালন করছেন বেশ ভালোভাবেই।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গ কীভাবে জাতীয় মুক্তির আলোচনায় প্রাসঙ্গিক তা আরও ভালোভাবে বুঝা যাবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে। বলে রাখা ভালো, জাতীয় মুক্তি কোনো ক্যালেন্ডারের বিষয় নয় যে, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরেই সব চুকেবুকে গেছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় লাফিয়ে-লাফিয়ে নিজের প্রমোশন দেখতে পেয়েছে (২০০৮-এ ১২তম, ২০০৭-এ ১৬তম, ২০০৬-এ ১৯তম)। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে এ-পরিভাষাসমূহ তৈরী করা হয় এবং দেশীয় প্রৌপাগেটরদের সাহায্যে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে তা প্রয়োগ করা হয় । এ-কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করছে ডেইলী স্টার গ্রুপ। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান 'বাংলাদেশ কি অকার্যকর রাষ্ট্র?' (প্রথম আলো, ২৭ এপ্রিল ২০০৪) শিরোনামে এক লেখায় আমাদের প্রায় অকার্যকর নাগরিক বানিয়ে ছেড়েছিলেন। এখন তাদের মতে একে কার্যকর করার পদ্ধতি হলো আরও বেশি তাবেদারী করা আর মার্কিন নীতিতে ঈমান আনা।

সাম্রাজ্যবাদকে শুধুই ঠাণ্ডা-যুদ্ধের আলোকে দেখলে (যে-ভুল প্রায় অনেকেই করেন) প্রগতিশীল রাজনীতি কখনও পায়ের তলায় মাটি পাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এখন ওয়ার অন টেররের যুগে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভিতর যেসব গুণগত পরিবর্তন এসেছে তাকে না বুঝলে নিজেদের অকার্যকর রাষ্ট্রের ব্যর্থ নাগরিকের বেশি কিছু মনে হবে না। আবার ১/১১র অসাংবিধানিক, অবৈধ, জনগণ-বিচ্ছিন্ন এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাসীন সরকারকে দূর্নীতি বিরোধী মেসিয়াহ মনে হবে। সুশাসনের ভাওতাবাজি বুঝতে হলে জানতে হবে ওয়ার অন টেররের যুগে রাষ্ট্রের কাজ শুধু জঙ্গী দমন, ইসলামিস্টদের ঠেকানো, রাজনৈতিক বিকাশ রহিত করে দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজম এবং নব্য একনায়কতন্ত্র কায়েম করা। আর রাষ্টের অন্য সবকিছুর দায়িত্ব পালন করবে এনজিও, বহুজাতিক এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন কৌম্পানী। রাষ্ট্রের কাজ শুধু নিরাপত্তা বিধান। বাংলাদেশে এ-রকম একটা সিকিউরিটি স্টেইট কায়েম হলে সাম্রাজ্যবাদ এবং তার তাঁবেদারদের উদ্দেশ্য হাসিল হলেও নাগরিকরা কেনো এ-ব্যবস্থা মানবে? তারা কি মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে গণ-দমনে দক্ষ র‌্যাব-পুলিসের হাতে ধুঁকে-ধুঁকে মরাকেই নিয়তি বলে মেনে নিবে? না। কারণ, জনগণ বুঝে ১/১১ পরবর্তী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের একটি স্থানীয় রূপ মাত্র।

গোলামীর জিঞ্জির পরেই আরেকটা নির্বাচনের কথা ভাবছে সবাই। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তো আমেরিকান ব্যাপার- তাও ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে, তার সাথে আমাদের জাতীয় প্রশ্ন কিভাবে জড়িত? হ্যাঁ, এটাই সেই মিসিং লিংক। ফাঁক পূরণ হলেই বুঝবেন কারজাই-মালিকী-ফখরুদ্দীন এই তিন মুসলমান কীভাবে সন্ত্রাসের (ইসলাম) বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের পার্টনার হন।

ঠাণ্ডা-যুদ্ধের পর বিশ্বপুঁজির বিকাশে ব্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নব্বইয়ের দশকের শেষে মোকাবেলা করতে হয় আরেক অভাবনীয় শত্রুর, যে কি-না ঠান্ডা-সময়ে তারই কৌশলগত মিত্র ছিলো । কিন্তু আধুনিকতার যুক্তিতে আপাদমস্তক মোড়া মার্কিনী এবং তাদের বন্ধুরা এ-মিত্রতা বা শত্রুতার আগাগোড়া বুঝে উঠার আগেই তার সাথে ভয়াবহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অবশ্যই এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কথায়- সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ। এরপর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশ সরাসরি আমেরিকার রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। লক্ষ্যভেদে চকিত ও মরিয়া মার্কিনী ও তাদের মিত্ররা ত্বরিত অ্যাকশনের নীতি গ্রহণ করে। এ-যুদ্ধে আমরা হয় মার্কিনীদের পক্ষে, নয় বিপক্ষে। আমরা চাই বা না চাই কোন্ সরকার কোন্ উসিলায় ক্ষমতাসীন হবে, এর সবই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের ভিত্তিতেই সাজানো হবে। শুধু রাষ্ট্র বা সরকার কেনো প্রয়োজনে রাজনীতিই বাদ যাবে।

ওয়ার অন টেররের এ-যুগে ইসলামের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিচারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সুদীর্ঘ উপনিবেশিক গোলামীর মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিতে আধুনিকতা আর এনলাইটমেন্টই সব কিছুর মাপকাঠি হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাব, ধর্ম আচারের বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই এ-মধ্যবিত্তীয় সংস্কৃতি পুষ্ট হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা ও হেয় প্রতিপন্নকারী এ-মানসিকতাই সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠনের সাংস্কৃতিক বৈধতা দেয়। নানাভাবে এ-বৈরীতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়াতে ইসলামকেও সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা হয়। তাই একই সাথে যারা ইসলামী রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, তাদের কর্তব্যও কম নয়। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী বৈশ্বিক লড়াইকে ধর্মতাত্ত্বিক লড়াই থেকে বিশ্ব নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লড়াইতে পরিণত করতে পারবেন কি-না, এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। কাজেই সাম্রাজ্যবাদের এই বিশেষ কালে ইসলামও আমাদের জাতীয় প্রশ্ন।

আরও কিছু বাকি রইলো।আপাতত লেনিনের পদ্ধতি অনুসারে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী রাজনীতির ঐতিহাসিক পর্যায় বিচার সাপেক্ষে বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে শোষিত-নিপীড়িত মানুষের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐক্য এবং আমাদের জাতীয় মুক্তির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো খানিক আলোচনার চেষ্টা হলো এখানে। এ-দিক গুলো বিবেচনায় না আনলে ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরে অর্জিত স্বাধীনতা আর জাতীয় মুক্তি সমার্থক হবে না।

সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ধন্যবাদ সবাইকে।স্বাধীনতা দিবসের শুভেচছা রইলো।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×