somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নগরায়নে সাহাবায়ে কেরাম

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামামাটা কথায় নাগরিক সুবিধাগুলোকে সুলভ করার যে চেষ্টা সেটাকে নগরায়ন বা শহরায়ন বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস যত পুরনো নগর বা শহরের ইতিহাসও প্রায় তত পুরনো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফল হিসেবে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতাগুলোর নিদর্শন থেকে নগরায়নে আদিম মানুষের অবদানের কথা জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল সুমেরীয় সভ্যতা। সুমেরীয়রা পত্তন করেছিলেন ‘উর’ শহর। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০-৩০০০ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে মিশরের বিকাশ লাভ করে মিশরীয় সভ্যতা। মিশরীয় সম্রাটগণকে বলা হত ফেরাও। তাদের হাতে ৪০টি নোম বা নগরের গোড়াপত্তন হয় মর্মে উল্লেখ করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দে মেসোপটেমিয়া নদীর তীরে ব্যবিলনীয়রা গড়ে তুলেছিলেন জগৎখ্যাত ‘ব্যবিলন’ শহর। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১১০০ বছর পূর্বে ইয়েমেনে রানী বিলকিস তৈরী করেছিলেন ‘সাবা’ নগরী

নগর বা শহরায়নে মুসলমানদের অবদানও উল্লেখ্যযোগ্য। আল্লাহর অধিকার পূরণে যেমন ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে তেমনি মানুষের অধিকার পূরণেও ইসলাম কড়া আদেশ জারী করেছে। তাইতো ইসলামের প্রথম প্রজন্ম সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সবেচেয়ে বেশী তৎপর। কল্যাণের সকল কাজে সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন অগ্রণী। খোলাফায়ে রাশেদার আমলে সাহাবায়ে কেরাম নতুন নতুন এলাকা বিজয় করে নতুন নতুন শহর গড়ে তুলতেন। তাই ইসলামী সভ্যতাকে নগর নির্মাণের সভ্যতা বলে আখ্যায়িত করা হয়। সাহাবায়ে কেরামের হাতে শত শত নগর বা শহর গড়ে উঠেছিল।

রাসূল (সাঃ) এর প্রথম শ্রেণীর সাহাবী ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাঃ) এর নির্দেশক্রমে তাঁর নিযুক্ত প্রশাসকগণ বিভিন্ন অঞ্চলে শহর নির্মাণ করেন। নতুন কোন শহরের স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে পানি ও চারণভূমির নিকটবর্তীতাকে তিনি বিবেচনায় রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে ১৬ হিজরীতে সাহাবী উতবা ইবনে গাজওয়ান (রাঃ) ইরাকে বসরা শহর নির্মাণ করেন। ১৭ হিজরীতে সাহাবী সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) কুফা শহর নির্মাণ করেন। ২১ হিজরীতে আমর ইবনে আস (রাঃ) মিশরে ফুসতাস শহর তৈরী করেন। মিশরের জিযা নামেও একটি শহর তৈরী করা হয়েছিল। হিজরী ৫০ সালে তিউনিশিয়াতে ‘কাইরাওয়ান’ শহর গড়ে তোলেন উকবা ইবনে নাফে (রাঃ)।

খোলাফায়ে রাশেদার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন তাঁদের অধীনস্থ শহরগুলোতে তখনকার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাধান্য পেত নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ, সুমিষ্ট পানির নহর খনন, পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় মেহমানখানা স্থাপন, বাঁধ নির্মাণ, মসজিদ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

কোন একটি নতুন শহর গড়ে তুললে সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হত। উমর (রাঃ) যখন ইরাকে বসরা ও কুফা শহর নির্মাণ করার নির্দেশ দেন তখন তিনি ঘরবাড়ী নির্মাণে নীতিমালা কি হবে সেটাও জানিয়ে দেন। হাদিসে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শহরের দালান-কাঠামো সুউচ্চ করা যাবে না। তাছাড়া দালাল বেশি উচ্চ করলে প্রতিবেশীর বাড়ীতে পর্দার অসুবিধা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাহাবী খারেজা ইবনে হুজাফা যখন দ্বিতল বাড়ী নির্মাণ করে তখন তিনি ইরাকে গভর্নর আমর ইবনে আসকে চিঠি দেন, এই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে খারিজার বাড়ী গুড়িয়ে দাও। খারিজা কি তার দালান থেকে প্রতিবেশী মহিলাদের দিকে তাকাতে চায়? রাস্তাগুলোর কাঠামো কেমন সেটা খলিফা নির্ধারন করে দেন। প্রধান সড়কের প্রস্থ ৪০ হাত। শাখা সড়কের প্রস্থ ৩০ হাত এবং সাধারণ সড়কের প্রস্থ ২০ হাত নির্ধারণ করা হয়। ২০ হাতের চেয়ে সংকীর্ণ কোন রাস্তা নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়।

বসরাবাসীদের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খলিফা উমর (রাঃ) আবু মূসা আশআরী (রাঃ)কে দজলা নদী থেকে একটি নহর খননের নির্দেশ দেন। উক্ত নহরের দৈর্ঘ ছিল ৯ মাইল। যা নহরে আবু মূসা নামে পরিচিতি পায়। খলিফার নির্দেশে দজলা নদী থেকে আরো একটি নহর খনন করেন সাহাবী মা’কেল ইবনে ইয়াসার (রাঃ)। তবে উমর (রাঃ) এর শাসনামলে হিজরী ৩২ সালে মিশরের গভর্নর আমর ইবনে আস (রাঃ) একটি সুদীর্ঘ নহর খনন করেন। এটি ছিল উমর (রাঃ) এর আমলে খননকৃত সবচেয়ে বড় নহর। উক্ত নহরটি ‘আমিরুল মুমেনিন উপসাগর’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই নহরের মাধ্যমে নীলনদ ও লোহিত সাগরের মাঝে সংযোগ তৈরী করা হয়। এটি ফুসতাত থেকে শুরু হয়ে বাবলিস পাড়ি দিয়ে লোহিত সাগরে গিয়ে পড়েছে। এর ফলে সামুদ্রিক জাহাজগুলো অতি সহজে মিশর থেকে মদিনাতে পণ্য-সামগ্রী বহন করে আনতে পারত। এছাড়া ইরানের খুজেস্তন ও আহভাজ এলাকায় একাধিক নহর খনন করেন সেখানকার শাসক জাযা বিন মুয়াবিয়া (রাঃ)।

উমর (রাঃ) শাসনামলে মুসাফিরদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি শহরে একটি করে মেহমানখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাজী ও উমরাকারীদের সুবিধা বিবেচনা করে মক্কা ও মদিনার মাঝে অনেকগুলো মেহমানখানা নির্মাণ করা হয়। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি শহরে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। রাতের বেলা শহর পাহারা দেয়ার জন্য প্রহরী নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি শহরের চারদিকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়। নাগরিকদের পারস্পারিক বিবাদ নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট বিচারক নিযুক্তের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা চালু করা হয়।

সাহাবায়ে কেরাম যখনই কোন এলাকা বিজয় করতেন অথবা অভিযানে বের হতেন সর্বপ্রথম সেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিতেন। মসজিদকে যাবতীয় কর্মতৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রহণ করতেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁরা নাগরিকদের ইবাদতখানা, শিক্ষালয়, বিচারালয় ইত্যাদি অতি মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতেন এবং মসজিদ থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হত, কেন্দ্রীয় ফরমানগুলো ঘোষণা করা হত। হিজরী ৬ সালে রাসূল (সাঃ) এর সাহাবী ও ইয়েমেনের গভর্নর ওবার ইবনে ইয়াহনুস আনসারী ইয়েমেনের রাজধানী ‘সানআ’ তে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। হিজরী ১৭ সালে কুফা শহর নির্মাণকালে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা মসজিদে কুফা নামে পরিচিত। একইভাবে বসরা নগরীতেও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। হিজরী ২১ সালে মিশরের ফুসতাতে জামে মসজিদ তৈরী করেন মিশরের গভর্নর আমর ইবনে আস (রাঃ)। এই মসজিদের আদলে একই সনে মিশরের দিময়াতে মসজিদ তৈরী করেন সাহাবী মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ)। হিজরী ৫০ সালে তিউনিশিয়ার কাইরাওয়ান শহরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন সাহাবী উকবা ইবনে নাফে (রাঃ)।
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশিত, ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×