তোমরা কি কেউ আব্রাহাম লিঙ্কনের নাম শুনেছো? কেউ হয়তো শুনেছো কেউ শোননি। তিনি ছিলেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হচ্ছে রাষ্ট্র প্রধান। রাষ্ট্রের সকল কাজকর্ম তার নির্দেশেই হয়। তিনি একদিন তোমাদের মত ছিলেন। তোমাদের মত আব্রাহাম লিংকনের বাড়ি ছিল না। ঠিক মত খেতে পারতেন না। কখনো দর্জির দোকানে কাজ করতেন কখনো রাস্তার পাশে জুতা সেলাই করতেন। তিনি ছিলেন ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী আর সৎ। তিনি কখনো মানুষকে ঠকাতেন না, মানুষের সাথে অশ্রাব্য কথা বলতেন না। তিনি খুব ছোট থেকেই অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতেন। কোন মানুষ বিপদে পড়লে তিনি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন।
একবার গির্জার পাদ্রী গির্জায় কিশোর ছেলেদের তাদের স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যেকেকে প্রশ্ন করেছিলেন ''বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও?' কেউ বলল আমার একটা গাড়ি থাকবে। কেউ বলল আমি অনেক বড় ব্যবসায়ী হবো। কেউ বলল আমি চিকিৎসক হবো। পালাক্রমে পাদ্রী যখন আব্রাহাম লিংকনকে জিগ্যেস করলেন ' আব্রাহাম, বড় হয়ে তুমি কি হবে?' আব্রাহাম বুক ফুলিয়ে বলল 'আমি বড় হয়ে হোয়াইট হাউজের মালিক হবো।' অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্টের বাস ভবনকে হোয়াইট হাউজ বলে। আব্রাহামের মুখে এই কথা শুনে পাদ্রী মুহূর্তের মধ্য নিরব হয়ে গেলেন। একজন দর্জি বা একজন মুচি হতে চায় হোয়াইট হাউজের মালিক, সেকি সহজ কথা! পাদ্রী কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন 'আমি প্রার্থনা করি তোমার যেন স্বপ্ন পূরণ হয়।'
তোমাদের ভেতর কেউ কি এমন স্বপ্ন দেখেছো? কেউ হয়তো স্বপ্ন দেখো একটা ফুলের দোকানের মালিক হওয়ার। কেউ হয়তো স্বপ্ন দেখো ভালো একটা ঘরে বাস করার, যে ঘরে বৃষ্টি এলে পানি পড়ে না। কারো হয়তো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ইশকুলে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেউ কি শেখ হাসিনা বা প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছো? দেখনি। কিন্তু আব্রাহাম লিংকন ছোট থেকেই এরকম স্বপ্ন দেখতেন। একদিন ঠিকই সেই জুতা সেলাই করা ছেলেটা হয়ে গেল হোয়াইট হাউজের মালিক। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট। এমন কথা ভাবা যায়! কিন্তু এটা সত্যিই।
তোমরা যদি মন থেকে বড় মানুষ হতে চাও। পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের মত। তোমরা ঠিকই তাই হতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম, সততা আর অধ্যবসায়।
এ.পি.জে আব্দুল কালামের নাম হয়তো কেউ শোননি।
তিনিও ছিলেন আব্রাহাম লিংকনের মত। আব্দুল কালামের বাবা ছিলেন খেয়া মাঝি আর মা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। খুব অভাবে ছিলেন তারা। আব্দুল কালাম ছোটবেলায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। তারপর খুব ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। দশটা বেজে গেলে তোমাদের মত ছোট আব্দুল কালাম বাড়ি ফিরে আসতেন। তারপর গোসল করে খেয়েদেয়ে স্কুলে চলে যেতেন। আবার বিকেলবেলা স্কুল থেকে ফিরে কাগজ বিক্রির পাওনা টাকা তুলতে যেতেন। খুব কষ্টে ছিলেন আব্দুল কালাম। একদিন এই ছোট আব্দুল কালামের বিশ্বজোড়া নাম হল। তিনি হয়ে উঠলেন বড় বিজ্ঞানী, বিমানের প্রযুক্তিবিদ। এই স্টেশনের প্লাটফর্মে খবরের কাগজ বিক্রি করা ছেলেটি হয়ে উঠলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট।
আব্দুল কালাম তোমাদের জন্য ওনার লেখার ডায়রিতে একটা সুন্দর কথা লিখে গেছেন। কি লিখেছেন শুনবে তোমরা? 'যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমাতে দেয়না সেটাই প্রকৃত স্বপ্ন'। মানে হচ্ছে, তুমি যদি গাড়িতে চরে ভালো জামাকাপড় পড়ে অফিসে যেতে চাও তাহলে তোমাকে সবার প্রথম পড়াশুনা শিখতে হবে। পড়াশুনা না শিখলে কেউ বড় হতে পারে না। তোমরাদের ভেতর থেকেই কেউ একজন হয়ে হবে এ.পি.জে আব্দুল কালাম কিংবা আব্রাহাম লিংকন।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) ছিলেন তোমাদের মত। তাঁর বাবা তার জন্মের পূর্বেই মারা যান আর মা মারা যান ছয় বছর বয়সে। তোমাদেরও হয়তো কারো মা বাবা নেই। তোমাদের মত খুব কষ্টে নবীজির দিন কাটতো। আমদের নবী ছিলেন খুব বিনয়ী আদর্শবান। । মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকতেন। মানুষের সাথে সত্য ও সুন্দর কথা বলতেন। আজ থেকে চৌদ্দশো বছর পূর্বে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু মানুষ এখনো তাকে খুব শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং অনন্তকাল করবেন। কারণ কি জানো তোমরা? কারণ, তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন। কারো সাথে অশ্রাব্য কথা বলতেন না। তিনি তার সমবয়সী ছেলেদের সাথে কখনো মারপিট করতেন না।
তোমরা একদিন অনেক বড় হবে। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।