somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অনাদরের অতীত আর আমার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত।

১১ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার সচেতন এর লেখা “আমাকে আদর করবা না ” লেখাটার প্রতিক্রিয়ায় আমার এই লেখা.....

যখন আমি কষ্ট পেতাম....

আমি আমার আমার বাবা-মার প্রথম সন্তান, বাবা থাকতেন (এখন ও থাকেন) মধ্যপ্রাচ্যে,
বাবা কি জিনিস বোঝার আগের সময়টা বাদই দিলাম,
যখন বুঝি আমার বয়সী পাড়ার ছেলেদের বাবা বলে একটা জিনিস আছে, তখন ও বাবাকে চোখে দেখিনি। বাবার আদর-সোহাগ, শাসন কোন কিছু আমার জন্য ছিল না।
প্রথম কখন বাবাকে দেখেছিলাম ঠিক মনে করতে পারছি না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি যখন হয়ঃ স্পষ্ট মনে আছে আমার জ্যাঠা আমাকে আর আমার জ্যাঠাত ভাইকে একসাথে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। (প্রসঙ্গত বলে রাখি সেদিন আমার বাবার নাম ভুল লিখেছিল, আহম্মদ এর জায়গায় মুহাম্মাদ যা এখনো বিভিন্নভাবে আমার ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে।)

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পা রাখার আগে বাবাকে দেখেছি বলে মনে করতে পারছিনা, বাবা যে দেশে আসেন নি তা না, হয়ত এসেছেন বছর দুয়েক পরে একবার, ছিলেন দু’মাস নয়ত তিনমাস। এই আসা-যাওয়াটা আমার শিশুমনে বাবার ছায়াটা ফেলতে পারেনি।

পরে যখন বাবাকে দেখতাম খুবই ভয় পেতাম বাবাকে, কখনো নিজে থেকে বাবার কাছে যাওয়া হতো না, বাবা ডাকলেই শুধু কাপাঁ কাপাঁ বুকে বাবার কাছে যেতাম।

বড় হবার পরে যতটুকু মনে পড়ে বাবা তখন অডিও ক্যাসেটে ভয়েস রেকর্ড করে পাঠাত, আর আমরা ভাই-বোন সবাই মিলে সেগুলো শুনতাম। বাবা সবসময় শুধু বলত ভাল করে লেখাড়পড়া করতে।

ছোটবেলায় বাবার সাথে আমার স্মৃতি বলতে এগুলোই। বা এরকম বছর দুয়েক পরে একবার বাবাকে দেখা এবং যতটুক সম্ভব বাবা-ছেলের দূরত্ব বজায় রেখে চলা। কখনো কোন আবদার করলে ও ভয়ে ও সংকোচে তা সিংহের কাছে খরেগোসের আবদার করার মত ছিল।

এখন কি আমি কষ্ট দিচ্ছি/দেব?

গ্রাজুয়েশন শেষ করে দেশে দু, একটি প্রতিষ্টানে ভাগ্যের সন্ধান করে বিফল হওয়ায় শেষ আশ্রয় হিসেবে দুই বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে ছুটে এসেছি। একটি ভাল চাকুরী ও পেয়েছি।
গত ডিসেম্বরে বিয়ে করেছি মাত্র ২৬ বছর বয়সে, বলতে পারেন প্রেম করার বয়সে বিয়ে করেছি। ভাবতাম বিয়ে করার পরে বউ এর সাথে প্রেম করব। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। বিয়ে করার দুই মাস পরে চাকরী বাচানোর জন্য আমার কর্মস্থল মধ্যপ্রাচ্যে ছুটে এসেছি।

আসার পর থেকে শুর হয়েছে প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণা, কিভাবে যে এক একটি দিন পার করছি শুধু আল্লাহই জানেন।

প্রতিদিন দু’একটি করে আসা এসএমএস থেকে গতকাল আসা আমার বউ এর একটি এসএমএস থেকে কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি
"amar mon kub beshi valo ney, baire kub bristi hosse asomoy jodi apni amer kase takten kub valo lagto"

কত আত্মত্যাগ যে করতে হয় আমাদের মত লক্ষ লক্ষ প্রবাসীদের ও প্রবাসীদের স্ত্রী-সন্তানদের একবার ভাবুনতো বন্ধুরা।

আমরা আমাদের বর্তমানকে বিক্রী করে দিয়েছি সুন্দুর আগামীর প্রত্যাশায়। কিন্তু ক‘জন পায় সেই সুন্দর আগামীর দেখা?
কেউ কি একটু ভাববেন এর সমাধান কি , কোথায়?

ব্লগার সচেতন তার ব্লগের শেষে লিখেছেন “আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, যতোই কাজ করি, যেখানেই থাকি, প্রতিটাবার পরিবারেই ফিরে যাই। তাই পরিবারের যত্নও ততোটাই নিতে হবে যতোটা অন্য ক্ষেত্রে নিচ্ছি"

আমার সন্তান যদি আমাকে প্রশ্ন করে বাবা আমাকে কেন এতটা বছর আদর করনি, কেন আমি তোমার কাছে রংপেন্সিল কিনে দেবার আবদার করতে পারিনি। কি জবাব দেব আমি বলতে পারেন?

আমার এই উত্তর দিতে না পারার ব্যার্থতার দায় কি আমার দেশের উপর একটু ও বর্থাবে না?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৫
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×