রাত ২:১৫ এর দিকে বাসায় প্রবেশ করি। বরাবরের মতো বাচ্চা দুটি জেগে ছিলো। সালাম বিনিময় হলো। আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে, সময় নষ্ট না করে ঘুমাবো। যেন সকালে আবার অফিসে আসতে পারি। কারন রাতে একটি টিম কাজ করছিলো। সকাল সকাল আমাকে কাজ করতে হবে। যাই হোক, ড্রেস চেঞ্চ করতে করতে বউ ও বাচ্চাদের (যমজ মেয়ে আমার) সাথে যেটুকু কথা হবার হলো। টয়লেট, হাত-মুখ ধুলাম, লাইট অফ, সোজা ঘুম।
বিছানার একপাশে আমি, জুমানা আমার পাশে, জুমানার পাশে ওদের মা, তার পাশে রামীছা। তো, বিছানায় গিয়ে যখন শুই, জুমানা আমায় ধরে আর আমিও ওকে আদর করি। ওর নানু নতুন গাড়ি কিনেছে সেই বিষয়ে আমায় বলছিলো। আমিও কিছুটা মজা করে কথা বলছিলাম। ঠিক এমন সময় রামীছা একটা কথা বললো যা আমায় খুব কষ্ট দেয়, কাঁদায়। যাদের সন্তান নেই তারা হয়তো বুঝবেন না আমার কাঁদবার কারন। রামীছা বললো, “আমাকে আদর করবানা বাপু?”
বিগত দিনগুলি অফিসের কাজে এতোই ক্লান্ত ছিলাম যে গতরাতে আমার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো ঘুমানো। তার উপর গতকাল আমার শরিরটাও খারাপ যাচ্ছিল। অফিসে কিছুটা ঘুমিয়েছিলাম। তো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, দুই বাচ্চাকে একসাথে জড়িয়ে ধরে আদর করিনি, যা সব দিন করি। সম্ভবত ৫-১০ সেকেন্ড চুপ করে ছিলাম আমি। খুব অপরাধী লাগে নিজেকে। আসলেইতো আমি অপরাধ করেছি। খুব ক্লান্ত, তাও উঠলাম, লাইট জ্বালালাম, পরিবারের সাথে কথা বললাম, ওদেরকে আদর করলাম ঠিক অন্যদিনগুলিতে যেমন করি তার চাইতে বেশি। এই প্রথম আমি বাইরে থেকে ফিরে বাচ্চাদের আদর করতে ভুলে গিয়েছি।
প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় কাটাবার পর, আবার ঘুমাতে যাবো এমন সময় জুমানা বললো রং তুলির কথা। বিগত কয়েক দিন ধরে রং তুলি আনবার আবদার করছিলো ওরা। আমি আমার অপারগতা ঢেকে বললাম, “আম্মু, আমিতো অফিস থেকে রাতে আসি। আর রাতের বেলাতো দোকান বন্ধ থাকে। তাই আনতে পারিনি।” জুমানা সাথে সাথে বললো, “কালকে অফিসে ঢুকবার আগেই কিনে ফেলবা।...”
ওর দ্রুত সমাধান শুনে চোখে পানি এসে যায় আমার। মনে মনে বললাম, “৩ বছরের শিশু হযেও তুই-ই আসল ম্যানেজার। কতো সহজে সমাধান দিলি। কি *** ম্যানেজার হইছি আমি যে তোর রং তুলির কথাই মনে রাখতে পারিনা।”
আমার এই লেখা পড়ে কেউ অন্য কিছু ভাববেন না। আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, যতোই কাজ করি, যেখানেই থাকি, প্রতিটাবার পরিবারেই ফিরে যাই। তাই পরিবারের যত্নও ততোটাই নিতে হবে যতোটা অন্য ক্ষেত্রে নিচ্ছি।
(রং তুলি কিনেছি আজ)