somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ জোহা দিবস-‘কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে’ :শহীদ ড.শামসুজ্জোহা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৬৯ গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাক বাহিনীর পুলিশদের উদ্দেশ্য তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রক্টর প্রফেসর ড.শামসুজ্জোহা বলেছিলেন ‘কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে’। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষার্থে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের জীবন। পিতা যেমন তার সন্তানকে আগলে রাখে ঠিক তেমনি জ্জোহা স্যার নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছিলেন সকল ছাত্রজীবন। শিক্ষকদের ইতিহাসে যিনি আতœত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ব্যক্তির দৃঢ়চেতা মনোভাব শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যুগাতে পারে, পারে সাহসী করে তুলতে । তার শাহাদাদের ফলেই তৎকালীন পূর্ব পকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার ধারা উন্মুক্ত হয়। তার এ্্ই শাহাদাদের দিনটাকে স্বরণ রাখতে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় রাবি শিক্ষক দিবস। যদিও জাতীয় ভাবে শিক্ষক দিবস পালনের দাবী রাবি পরিবারের দীর্ঘদিনের।


১৯৬৯ সালের গন-অভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও দূর্বর আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আন্দোলনের কর্মসূচীর ঘোষণায় পাক-বাহিনী ১৪৪ ধারা জারী করে। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারী সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ ধারা উপেক্ষা করে মেইন গেটের সামনের মহাসড়কে পাকিস্তানী স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। খবর পেয়ে প্রক্টর ড. জোহা মেইন গেইটে ছুটে যান। প্রক্টর হিসেবে তিনি ছাত্রদের শান্ত করার এবং ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ছাত্ররা পিছু হঠতে না চাইলে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন হাদী ছাত্রদের গুলি করার নির্দেশ দেয়। তখন জোহা পাক বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে’। ড. জোহা ডন্ট ফায়ার! ডন্ট ফায়ার! বলে চিৎকার করতে থাকেন। তিনি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রক্টরের আশ্বাসে কোন কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার সময় ক্যাপ্টেন হাদী তার পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা। বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল মতিহারের নিষ্পাপ সবুজ চত্ত্বর। হাসপাতাল নেয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।


অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ড. শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালে পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাঁকুড়া জেলা স্কুলে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন এবং ১৯৪৮ সালে এই স্কুল হতে তিনি প্রথম বিভাগে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালের পর ড. জোহার পরিবার স্থায়ীভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে চলে আসেন। ১৯৫৩ সালে ড. জোহা দ্বিতীয় শ্রেণীতে সম্মান ডিগ্রী লাভ করে। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্থান অর্ডিন্যান্স কারখানায় সহকারী কারখানা পরিচালক পদে শিক্ষানবীশ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে বিষ্ফোরক দ্রব্যের উপর প্রশিক্ষণ লাভের জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এআরসিএস ও বিএস স্পেসিয়াল ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বিদেশ থেকে পিএইচডি ও ডিআইসি ডিগ্রী নিয়ে পুনরায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে। এরপর ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। ড. জোহা বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সাথেও জাড়িত ছিলেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জার্নালে তার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই দিনটি ভূলতে পারিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র তথা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল। প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারী রাবিতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ড. জোহার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য পাঠ্যপুস্তকে তার আত্মদানের কাহিনী অন্তর্ভূক্ত করা এবং জাতীয় ভাবে দিবসটি উদযাপন করা এখন সময়ের দাবি। এ দাবীতে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও করেছে।



ড. জোহার স্মৃতিকে চির অ¤¬ান করে রাখার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র হলের নামকরন করা হয়েছে তার নামানুসারে। মেইন গেটে গুলিবিদ্ধ হওয়া তার স্থানটিতে নির্মান করা হয়েছে জোহা স্মৃতি ফলক এবং মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত শহীদ জোহার মাজার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে আগমনকারী যে কোন দর্শনার্থী এই দুটি স্মৃতি চিহ্ন দেখে শহীদ জোহার অ¤¬ান স্মৃতিকে স্মরণ করলে তাদের দু'চোখ সজল হয়ে উঠে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×