এক.
আমাদের সমাজে খুবই প্রচালিত একটি শব্দ, “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত” আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থা এমন হবে না তো? কারন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। আর আমার জানা মতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাদে ৩৭ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি জায়গায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দখলে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় দলীয় শিক্ষকগুলো কি নিজেদের অবস্থানে অনঢ় থাকতে পারবে না পিছু হটবে।
দুই.
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষকদের আন্দোলন কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন। ১২৩ ভাগ বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। বলেছি অসুবিধা হলে দেখবো। ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার ক্ষতি করবেন না। তাহলে শিক্ষার্থীরাও তা মেনে নেবে না। সম্মানবোধ নিজেদের ওপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে সম্মান আদায় করা যায় না। যদি এতোই মর্যাদায় লাগে তাহলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে সচিব হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নষ্ট করবেন না।’(সূত্র-বাংলাট্রিবিউন)
তিন.
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে একটা কথা বলেছেন ‘সম্মানবোধ নিজেদের ওপর নির্ভর করে’। তাহলে বিষয়টা দাড়াচ্ছে গ্রেড-৩ তে থাকলেও শিক্ষকদের মান মর্যদায় গ্রেড-১এ অবস্থানকারী সচিবদের চেয়ে বেশি থাকবে। অবশ্যই আমি শিক্ষক আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানে নেওয়ার জন্য এই কথাগুলো বলছি না, এইভাবে যদি ৩য় শ্রেণীতে রেখে প্রথম শ্রেনীর সম্মান দেখানো হয়, সেটা কতটা যৌক্তিক হবে? সেটা সাধারন মানুষেই ভালো বলতে পারবে। গত ৭ জানুয়ারিতে দৈনিক প্রথম আলো প্রত্রিকায় ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ শিক্ষক অধ্যাপক কাবেরী গায়েন লেখেন, ‘যে শিক্ষকসমাজের বিদ্যা-বুদ্ধি-কমিটমেন্ট কিছু নেই, তাদের ‘সম্মানিত’ করার জন্য রাষ্ট্রের কতইনা আয়োজন! এত সম্মানিত সম্প্রদায় কেন সামান্য বেতন-ভাতা, বেতনকাঠামো নিয়ে মাথা ঘামাবে? কিছু কিছু সম্মানজনক পদ আছে, যেসব পদ টাকাকড়ি দিয়ে মাপা ঠিক নয়।’ শুধু কাবেরী গায়েন ম্যাডাম নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি শিক্ষকের দাবি তাদের প্রাপ্ত সম্মানটুকু দেওয়া হোক।
আর একটা বিষয়, শিক্ষকেরা জাতির পথনির্দেশক। সেই শিক্ষকদের গ্রেড-৩তে রেখে তাদের হাতে শিক্ষা নিয়ে সচিবদের গ্রেড-১ দিয়ে জাতি কতটুকু কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে সেটাও দেখতে হবে।
চার.
নতুন বেতনকাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বহাল ও বেতন গ্রেডের সমস্যায় শিক্ষকরা প্রথম থেকে দাবি করে আসছে, আমলাদের ইচ্ছায় শিক্ষকদের এই আষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে তাদেরকে এই অবনোমন করেছে। গত শনিবার একই দাবি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পে-স্কেলে সৃষ্টি জটিলতায় আমলাদের ভূমিকা মেনে নেওয়া হবে না, জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা চাই। কিন্তু শিক্ষকদের সেই আশাও গুড়ে বালি। কারন ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ও অর্থমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে বিরুপ আচারণ দাবি আদায়ে কতটা স্বপ্ন দেখাবে শিক্ষকদের সেটায় ভাবার বিষয়.?
অবশ্যই শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সরকারপন্থী শিক্ষক নেতাদের দাপুটি মনোভাব কতটুকু থাকে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
পাঁচ.
শিক্ষকরা আজকে থেকে আন্দোলন শুরু এমনটা নয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টা নিয়ে সমাধানের জন্য বিভিন্ন রকমের অবস্থান ধর্মঘট থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত ছিল শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে বসে সমাধান করার। একদিকে যেমন শিক্ষকদের সাথে সরকারের বৈরী মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ৩৭ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে অনিশ্চিয়তার ছায়া নেমে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৭