somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মাস পার করতে যাচ্ছে শাহবাগ আন্দলোন

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে পড়ে সেই দিনটির কথা, টেলিভিশনের সামনে অধীর আগ্রহে বসে আছি কসাই কাদের মোল্লার রায়ের ঘোষণা শুনার জন্য। সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলাম, একসময় অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। হঠাৎ শুনলাম রায় ঘোষণা হয়েছে....অত:পর আর কী! যে রায় হয়েছে তা আর লিখতেও ইচ্ছা করছে না। ক্ষোভে আর হতাশায় নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে তাৎক্ষণিক ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস আপডেট করলাম।

সেদিন শুধু আমি নয়, সারা বাংলাদেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, তারাও ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন যে যার অবস্থানে থেকে। কারোটা মিডিয়ার মাধ্যমে শুনতে পেয়েছি কারোটা পায়নি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে বিভিন্ন সময় অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর রাজাকারদের উৎপাত লাখো মানুষের ভিতর চাপা ক্ষোভ আর হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই রায়ের পর মানুষ সেই চাপা দু:খ আর ধরে রাখতে না পেরে রাজপথে নেমে এসেছে।

শুরু হয় আন্দোলন। রাজধানী ঢাকার শাহবাগ চত্বরে হাজার হাজার মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে, প্রতিবাদী গান ধরে, স্লোগানে মুখরিত করে এবং প্লাকার্ড, পোস্টার, ফেস্টুন দিয়ে নানাভাবে তাদের তীব্র ক্ষোভ আর হতাশাকে একটি ভিন্নধর্মী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রূপ দেয়। মাসটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি। এর মূল সংগঠক ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওর্য়াকের আহ্বায়ক ডা: ইমরান এইচ সরকার। আন্দলনটির অন্যতম নারী সংগঠক; যে পরবর্তীকালে স্লোগান কন্যা নামে খ্যাতি পেয়েছেন দেশে এবং বিদেশে, তার নাম লাকী আক্তার।

এই আন্দোলনে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ছাড়া সরকার থেকে শুরু করে দেশের সকল আমজনতা, প্রবীণ, নবীন, শিশু, মিডিয়া জগতের তারকা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালী তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন ।

আন্দোলনের কিছুদিনের মধ্যেই এর অন্যতম সংগঠক ব্লগার রাজীব হায়দারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার বাসার সামনে। সন্দেহের তালিকায় থাকে রাজাকার জামায়াত-শিবির। এবং এর কিছুদিন পর সন্দেহভাজনরা ধরাও পরে পুলিশের হাতে। তারা স্বীকারও করে যে শিবিরের একজনের উষ্কানীতেই তারা খুন করেছে রাজীবকে। এছাড়াও এই আন্দোলের সংগঠকদের মধ্যে আরো কয়েকজন অসুস্থ হয়ে মারা যান।

এছাড়াও এই আন্দোলন নিয়ে দেশের কয়েকটি মহল ও কিছু মিডিয়া বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে শুরু করে। হুমকি আসে এর মূল সংগঠকদের হত্যা করার। কিন্তু এই সব বাঁধা বিপত্তিকে জয় করে নানা চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে ও ভিন্নধর্মী কর্মসূচী পালন করে প্রায় ৩০ টি দিন পার করতে চলেছে এই নির্ভীক নিরস্ত্র যোদ্ধারা।

তাই এই যোদ্ধাদের স্যালুট যারা, নানা দূর্যোগ কাটিয়ে, লাশ কাধে নিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, প্রখর রোদে পুড়ে, নিজের সংসার রেখে, চাকরি, পড়াশুনা ফেলে, নারী-পুরুষ সকলে একত্রিত হয়ে রাত-দিন জেগে আছেন এই শাহবাগ চত্বরে। স্যালুট তাদেরকে, যারা দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ, যে তারা এই শাহবাগ চত্বর ছেড়ে যাবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয় এবং জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়। স্যালুট তাদেরকে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ব্লগিং করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগিয়ে রেখেছেন এবং ভার্চূয়াল দুনিয়া থেকে এই চেতনাকে রাজপথে রূপ দিয়েছেন। এরা অকুতোভয় সৈনিক। দেশের জন্য, দেশের পবিত্র মাটির জন্য তারা নিজের রক্ত আর মূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করতেও অকুতোভয়।

১৯৭১ সালের পর সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী রাজাকার-দালালদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ ঘোষণা করার। এই যুদ্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, এই যুদ্ধ ধর্মের নামে যারা সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করে, রাজাকারদের আশ্রয় দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, দেশের জাতীয় পতাকা ছিড়ে ফেলে, শহীদ মিনার ভাংচূড় করে, মসজিদে জায়নামাজ পুড়িয়ে ফেলে তাদের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধের একমাত্র শক্তি জনতা ও তাদের কন্ঠে উচ্চারিত হওয়া মুষ্টিবদ্ধ হাতে প্রেরণা যোগানো স্লোগান।

জয় বাংলা...জয় আমাদেরই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×