somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাফিক জট সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের যে কয়টি দেশে গিয়েছি তার বেশির ভাগ দেশেই দেখেছি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সরকার পরিচালনা করে। আমাদের দেশে ট্রেন ছাড়া, অন্য প্রায় সব গণ যাতায়াত ব্যবস্থা, বিশেষ করে শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর মুনাফার আকাঙ্ক্ষার নিগড়ে বন্দী। স্বাভাবিক ভাবেই এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলো গণমানুষের কল্যাণ ও সুবিধার চেয়ে নিজেদের মুনাফা সর্বোচ্চীকরণের দিকেই মনযোগী হবে।

আমি বর্তমান বাস্তবতায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলছিনা; বরং তারা যেন একটা regulation এর আওতায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেই বিষয়ে জোরারোপ করছি। আর এ নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে কেবলমাত্র সরকার, যাদেরকে জনগণ তাদের সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু জনগণের সুবিধা অবহেলিত থেকে যাবে যদি সরকারও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতোই নিজ নিজ মুনাফা সর্বোচ্চীকরণের দিকে বেশি মনযোগী হয়ে ওঠে।

শোয়া কোটি জনসংখ্যার একটি শহরে সীমিত সম্পদ নিয়ে সরকারের কি করার আছে, অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন। অবিশ্বাসের তীর্যক দৃষ্টি তীর্যকতর হয়ে ওঠে যখন মুনাফাকামী যাতায়াত ব্যবসায়ীদের মুনাফার অগ্নিস্ফূলিঙ্গে জল ঢেলে দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। তাই আমি এর মাঝামাঝি এক প্রস্তাব রাখতে চাই যাতে ব্যসসায়ীদের ভাগ্যাকাশ ছায়াচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে আবার সরকারেরও অপর্যাপ্ত কোষাগারে বিশেষ টান না পড়ে। তবে দুপক্ষকেই কিছু ছাড় তো দিতেই হবে।

ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোর traffic density সহজেই মাপা সম্ভব। অর্থাৎ কোন সড়ক দিয়ে গড়ে প্রতিদিন কি পরিমাণ মানুষ যাতায়াত করে, দিনের বিভিন্ন সময় চলাচলের তারতম্য কেমন হয়, সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে কেমন হয়, বছরের বিভিন্ন মাসে কেমন হয় তা মাপা দুরূহ কোন কাজ নয়। ঢাকা শহরে সর্বমোট জনযানবাহণ কয়টি এবং তার ধারণক্ষমতা কত সেটাও নির্ণয় করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ। এখন খুব সহজ ঐকিক নিয়মে একটি রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণের জন্য মোট কয়টি যানবাহণ দরকার তা বের করা সম্ভব।

এভাবে ঢাকার বিভিন্ন রুটে, দিনের বিভিন্ন সময়ে এবং সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে সর্বোচ্চ কয়টি যানবাহণ দরকার তা নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী সরকারকে একটি শিডিউল তৈরি করতে হবে। সেই নির্ধারিত সংখ্যার বেশি বা কম যানবাহণ সেই রুটে চলাচল করতে পারবেনা। কিন্তু সরকার সেটা নিশ্চিত করবে কিভাবে?

বাণিজ্যিক যাতায়াত কোম্পানিগুলো শুধু যানবাহণ কিনে ব্যাবসায় নিয়োগ করতে পারবে, কিন্তু রুট নির্ধারণ করতে পারবেনা। কোন রুটে কোন যানবাহণ চলবে, কয়টা চলবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। বাণিজ্যিক যাতায়াত কোম্পানিগুলো যানবাহণ কিনে সরকারের হাতে তুলে দেবে। এর রক্ষণাবেক্ষন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আলোচনা সাপেক্ষে সরকার, যানবাহনের মালিক পক্ষ অথবা তৃতীয় কোন পক্ষের হাতে তুলে দেয়া যেতে পারে। ভাড়ার বিষয়টি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে (শ্রীলঙ্কায় ছোট্ট একটি হাতে ধরা যন্ত্রের সাহায্যে কন্ডাক্টর ভাড়া আদায় করে), আর তা সম্ভব না হলে কন্ডাক্টর বাসের ভেতরে টিকিট বিক্রি করে তার রশিদের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারে। বাস কোম্পানি বড়জোর তার যানবাহন ঠিক মত চলছে কিনা, ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কিনা, কেউ এর অপব্যবহার করছে কিনা এসব বিষয় mistry client বা অন্য যে কোন প্রক্রিয়ায় যাচাই করে নিতে পারবেন।

এর সুবিধাজনক দিক হল, যানবাহনের frequency ঠিক রেখে সময় মতো বাস বা অন্য যানবাহনের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা যাবে। অতিরীক্ত যাত্রী বোঝাই করে যানবাহন মালিক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারবেনা। ভাড়া সরকার নির্ধারিত ও নিয়ণ্ত্রিত হবার কারণে এ নিয়ে বিতন্ডার ঘটনাও কমবে। সর্বোপরি, পুরো ব্যবস্থা একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অধীনে আসার কারণে জনগণ কারো কাছে জিম্মি হয়ে থাকবেনা। বাণিজ্যিক যাতায়াত কোম্পানিগুলোর ন্যায্য লাভের বিশেষ হেরফের হবেনা। সরকারেরও এর পেছনে বিরাট অর্থ লগ্নি করতে হবেনা।

প্রশ্ন হল, ঢাকার এতগুলো রাস্তার চলাচল ঘনত্ব মাপবে কে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রিদের লাগিয়ে দিন না? এটাকে তাদের স্নাতকোত্তর গবেষণার অংশ করে দিন, সুযোগ্য গবেষণা অধীক্ষকের নির্দেশনায় এ কাজ করতে তাদের অমত হবার কথা নয়, উপরি হিসেবে একটা গবেষণা নিবন্ধ তৈরি হয়ে যাচ্ছে, নিজেকে দেশের কাজে লাগার তৃপ্তি উপভোগ করা যাচ্ছে, বন্ধুদের কাছে এ নিয়ে গল্প করার সুযোগ থেকে যাচ্ছে, আরো কত অনীর্ণিত উপযোগ যে রয়েছে তা তারাই আবিষ্কার করে নেবে। উপরন্তু, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুকুল, যাঁদের বিরুদ্ধে কাজে অবহেলার, ছাত্রদের আবশ্যক সময় না দেয়ার, বাণিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিমনযোগী হবার এবং গবেষণা কর্মকান্ডে চরম অনীহা প্রকাশের অভিযোগ উঠছে- তাঁরাও নিজেদের গুণপনা জাহিরের এবং দুর্মুখের সমালোচনা নির্বাপনের উপলক্ষ পাবেন। সেই সাথে চাই কি দু একটা পাবলিকেশনও এই সূত্রে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।

আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী মহোদয় যেখানে মাল্টি মিলিয়ন কি বিলিয়ন ডলারের সুপার ফিউচারিস্টিক সব ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইন্টারভেনশন এর স্বপ্ন দেখিয়ে কুল পাচ্ছেন না, সেখানে আপনি পাঠক, আমার লেখা পড়ে নাসিকা কুঞ্চিত করে বলে উঠতেই পারেন, 'এহ্‌; কুতুব আইছে। হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়ায় বলে কত জল।' বলতে পারেন, আমার আপত্তি নেই। আমি বলছিনা এটাই একমাত্র সমাধান, বা শ্রেষ্ঠ সমাধান, বা চূড়ান্ত সমাধান। মন্ত্রী মহোদয়ের সুদূর পরাহত স্বপ্ন বাস্তবের মুখ দেখার আগ পর্যন্ত তো আমরা এই ব্যবস্থা চালু করে দেখতে পারি। নজির চাই? মুম্বাই কিন্তু এক পয়সার বাড়তি ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি না করেই, শুধুমাত্র বিরাজমান পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাস গুলোর সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় মাত্রার যানজট নিয়ন্ত্রণের নজির স্থাপন করে গিয়েছে। আমাদের হাতের কাছের ভালো উদাহরণগুলো আমরা অনুসরণ করি না কেন?

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×