পরপর কয়দিন ধরে কাছের মানুষদের কাছে বেশ কিছু অপরাধের শীকার হবার কাহিনী শুনলাম। তার একটা সংক্ষেপে শেয়ার করছি।
আমার কলিগের বন্ধু, ধরে নেই তার নাম জামিল। জামিল সাহেব একটা দাতা সংস্থার বাংলাদেশ অফিসে কাজ করেন। বাবার অসুখের খবর শুনে তাঁকে দেখতে একটু সকাল করে বেরিয়েছেন; এর পর অফিসে যাবেন ভেবে। উত্তরা থেকে মিরপুর যাওয়ার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করে পেয়ে গেলেন একটা ব্ল্যাক ক্যাব। তখন ভোর পৌনে সাতটা। চালক তাকে বলল যে নতুন রাস্তা যেটা হয়েছে সেটা দিয়ে গেলে সুবিধা হবে, তাই সে ওদিক দিয়ে যাবে। জামিল আগেও দু'একবার ওই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে বলে রাজি হয়ে গেল।
নির্জন রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ থেমে গেল গাড়ি। দুইদিক থেকে দরজা খুলে দু্'জন উঠেই পেটের কাছে ছুরি ধরল। সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠল আরেকজন, হাতে ল্যাপটপ। গাড়িতে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল (ল্যাপটপ দিয়ে কি করছিল আমরা জানিনা)। পনের হাজার টাকা আর ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নিল। গাড়ি চলতে থাকল গাজিপুরগামী একটা রোডে (বা অন্য কোন নির্জন রাস্তা ধরে, জামিল সে রাস্তা চেনেনা)।
কিছুক্ষণ চলার পর স্বভাবতই জামিল জিজ্ঞেস করল, 'ভাই, সব কিছু তো নিলেন, এখন আমাকে নামায় দ্যান, চলে যাই।' ছিনতাইকারীরা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে জবাব দিল, 'লাশ ফেলে দিব; ঝামেলা রাখবনা।' জামিলের শত অনুনয়েও কাজ হলনা, তাদের এক কথা, 'তুই বড় অফিসে চাকরি করিস, ঝামেলা করবি। আর খামাখা তোর জন্য অন্য ব্যবস্থা কেন হবে? আমরা মেরে ফেলি।' তারা আবারো স্বভাবিক ভঙ্গিতে রঙ্গ তামাশায় মেতে উঠল।
জামিল এবার ওদের মধ্যে একটু বেশি বয়সী একজন, যাকে দলনেতা মনে হচ্ছিল তাকে বলল, 'ভাই, আমার মানিব্যাগ দ্যাখেন, ওখানে আমার মেয়ের ছবি আছে। এগার মাস মাত্র বয়স। আমি মরলে তো মরেই গেলাম। আপনাদেরও কিছুই যাবে আসবে না। আমার মেয়েটাকে দেখবে কে?' মানিব্যাগে মেয়ের ছবি দেখে দলনেতার মন গললেও অন্যরা রাজি হলনা, 'বাদ দ্যান এইসব ঝামেলা। আইসা পরছি প্রায়, এখন লাশ খালাস কইরা বাড়ি যামু। শ্যাষ'। জামিলের অনুনয় বিনয়ে তেমন কাজ হয়না, ওরা আরো বিরক্ত হয়ে ওঠে।
জামিলকে একটা অচেনা জায়গায় ধান ক্ষেতের মধ্যে নামান হয়। দলনেতা দলের বাকিদের সাথে কি যেন কি বলে। ওরা জামিলকে পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে উল্টা দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। জামিল অপেক্ষা করতে থাকে কখন তার প্রাণ সংহার করা হবে। এভাবে পাঁচ মিনিট না কতক্ষণ সে নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিল সে বলতে পারেনা। তার সম্বিত ফিরে কিছু মানুষের কথার আওয়াজে।
ধানক্ষেতেই অদুরে কিছু কৃষক তখন কাজ করছিল। দু'জন এগিয়ে এসে তাকে ডাক দেয়। তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা ঘটনা কি ঘটেছে। তারা জামিলকে বলে, 'ভাইজান, আপনার ভাগ্য আসলেও খুব ভাল। এরা তো এদিকে প্রায়ই লাশ ফালাইতে আসে। এটাই এদের খুন করার স্পট। এই প্রথম দেখলাম কাউরে এইখানে আইনা জীবিত রাইখা গ্যাল। '
জামিল কিভাবে ফিরে আসল সে নিজেও বলতে পারেনা। সমস্ত রাস্তার প্রত্যেককেই তার মনে হচ্ছিল ছিনতাইকারীদের দোসর। কথাটা কি আসলেও ভুল? এই অপরাধীদের নির্মূল করে নিরাপত্তা বিধান করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র কি? রাষ্ট্র কে? রাষ্ট্র কারা? আমরাই তো কিছু অযোগ্য, অথর্ব, অপরাধী, কুলাঙ্গারকে রাষ্ট্র শাসনের অধিকার দিয়েছি। আমরাই এদেরকে সমর্থন যুগিয়ে চলেছি। এইসব অপরাধের দায় আমাদের ঘাড়েও বর্তায় কিছুটা হলেও।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




