”তৃতীয় বিভাগ পাওয়াদের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়”!!!
-
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক মগজ বড়ই আজব জিনিস।বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী প্রথম বা দ্বিতীয় বিভাগ না পেয়ে তৃতীয় বিভাগ পেয়েছে তাদের ব্যাপারে সতীর্থ ও পাবলিকের মনোভাব প্রায়ই একই।তারা মনে করে যে তৃতীয় বিভাগ যে শিক্ষার্থীরা পেয়েছে তারা আসলেই ভাল শিক্ষার্থী ছিলেন না!!তাদের কোথাও মূল্যায়ন করতে নেয়।সবসময় বড় বড় কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি পেশাগত জায়গায়ও তৃতীয় বিভাগদের সরাসরি এপ্লিকেশন করতে মানা করে দেয়।কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি? শুধুমাত্র ভাল যোগ্য শিক্ষার্থী না হওয়া নাকি এই তৃতীয় বিভাগ পাওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা,পারিবারীক আর্থিক অনটন,নানা প্রতিকূলতাও জড়িত আছে-কোনটা??? আমাদের দেশের পাবলিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের মনোভাব একই রকম।তৃতীয় বিভাগ যারা পায় তাদেরকে কোন রকম সুযোগ দিতে চাই না।অনেক জায়গায় দেখেছি নানা তুচ্ছ ঘটনায় এইসব বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে।বেকবেঞ্চার আছিলি—আজকাল এই সেই কতো কিইতো বলে তাইনা!!
দুনিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থায় এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যাপার আর কোথাও আছে কিনা জানি না।শিক্ষা কি এর স্বরুপ যেহেতু আমাদের কাছে পরিষ্কার না—তাই এই কুৎসিত ব্যাপারটা চালু থাকবেই এখানে।এটাই নিয়তি।বিদ্যালয়ে পড়তে না পারাটা শুধু একতরফা ব্যর্থতা না।ভালো কলেজে,ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারাটা একতরফা ব্যর্থতা না।এর সাথে অনেককিছু জড়িত আছে।আজকাল অনেকেই প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে কি অহংকারীই না করে।কেউ মেডিকেলে পড়ে,কেউ প্রকৌশলী,কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,কেউ মাধ্যমিকের সেরা নামের নিজের নামকে পরিচিতি করাতে চায়।ওরা মাইন্ডসেটআপ করে নিয়েছে এইখানে পড়লে ভাল শিক্ষিত,যোগ্য!অন্য জায়গায় না পড়লে ফালতু,থার্ডক্লাস।পাত্তা না দেয়ার যে মানসিকতা সেটা প্রতিমূহূর্তে আপনাদের যে একজন অমানবিক মানুষে পরিণত করছে সে ব্যাপারে কোন খেয়ালই নাই।
শিক্ষার সাথে প্রথম দিত্বীয় বা তৃতীয় এমন কোন বিষয় নাই।কার যোগ্যতা কোথায় কিভাবে মাপা হয় সে ব্যাপারে দেশের সর্বত্র পা্ল্লার মালিকরা বসে আছে।তারা ওজন দিচ্ছেন—এই যাবে এখানে! ও যাবে ওখানে!কর্মে ক্ষেত্র বা শিক্ষা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে।শুধুমাত্র শিক্ষাজীবনের এইসব দিয়ে একজন মানুষকে ঠিক মূল্যায়ন করা যায় না।কে কোথায় কি করতে পারে সে ব্যাপারে অন্যজনের ধারণা নাও থাকতে পারে।যে কাজটি প্রথম দ্বিতীয় কেউ পারল না তৃতীয় গ্রেডরা হেসে খেলে করে ফেলল!আমাদের শিক্ষা বৈষম্য শিখানোর শিক্ষা,বর্ণবাদী হওয়ার শিক্ষা – এই শিক্ষার সাথে নৈতিকতার কোন যোগ নাই।সবকিছুতে বিয়োগ দেখানো,হোল করে দেখানোই শিক্ষা।শিক্ষার আর্দশ,শিক্ষার মূলকথা কোনদিনই একজন শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষার উপর দাঁড়িয়ে জানবে তা নয়।তাকে আরো অনেক দিক দিয়ে যাচাই করার মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকে।
কে লেখাপড়া করল,আবার অনেকেই লেখাপড়ার সুযোগ পেলো না,কেউ নিজে নিজে ব্যর্থ হতে শিখল—অনেক কিছুই ঘটতে পারে জীবনে।
তৃতীয় বিভাগরা দুনিয়ায় কতো যোগ্যতা দেখাল।কোথায় কি কি করল এইরকম সাধারণ জ্ঞান দেখানোর মতোন কোন কিছুই প্রয়োজন বোধ করছি না।তাতো আপনার জানা নাই!! তাই না??তবু যখন দেখি দেশে তৃতীয় বিভাগদের কোথাও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বা সরাসরি বাতিল করে দিচ্ছে তখন শিক্ষার মহৎ আদর্শ নামক ভূয়া তত্ত্বের উপর কোন আস্থা রাখা যায় না।আর যারা এসব করে তাদেরকে করুণা করতে ইচ্ছে করে।তৃতীয় বিভাগ সংখ্যাটা বিশাল।তাই একে বাতিল করে দেয়া মানে বৈষম্য করা,তার মানাবধিকার ক্ষুণ্ন করা,তাকে পাওয়া অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।তাকে যোগ্যতার পরীক্ষায় কোন সুযোগ না দেয়া।শুধুমাত্র বিভাগ দিয়ে কোন শিক্ষার্থীকে সত্যিকারে মূল্যায়ন করা যায় না।জীবন এতো ছোট নয়।অল্পকথায়,একবাক্যে তাকে বাতিল করে দেবেন।এইরকম রেসিস্ট টপ টু বটম সেটিং করা ব্যবস্থায় কল্যাণ সূদূর পরাহত।
সোশ্যাল ট্যাবু ভেঙে দাও, দিতে হবে।
এই সমাজের মূলে কুঠারাঘাত হানতে হবে সবরকমের হীনম্ন্যতার বিরুদ্ধে।
এমন সমাজ কবে পাব?যারা সবরকম বিবেচনামতি হবেন।সবার পাশে সবার বিচিত্র যোগ্যতাকে স্থান দেবেন।বিচিত্রতাকে যোগ্যতা বলে স্বীকৃতি দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩