ফরেন ডগ ঔনারস এসোসিয়েশান: (এক পর্বের ছোট্ট গল্প)
আজ রাতের পার্টির জন্য প্রায় তিন ঘন্টা ধরে পার্লারে মেকাপ নিচ্ছেন বাংলাদেশ ফরেন ডগ ঔনারস এসোসিয়েশানের সভানেত্রী পিলু চৌধুরী । টোটাল চার স্তরের মেকাপ লাগিয়েছেন তিনি । প্রথম স্তর উঠে গেলেও ভ্য় নেই দ্বিতীয় স্তর এবং তৃতীয় স্তর রয়েছে প্রোটেকশনের জন্য । নিজেকে আজ প্রায় ২৩৩৩ বার আয়নায় দেখেছেন ৪৫ বছর বয়স্কা এই স্মার্ট নারী । আজকের পার্টিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে চান পিলু ।
গেল বারের পার্টিটে সবাই মিসেস মল্লিকার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল । হুমম, আর ওই বুড়ো লোকগুলোর কথা নাহয় বাদই দিলো সে । মল্লিকার বিশাল খোলা ব্লাউজের পিঠ দেখে যেন চোখই সরাতে পারছিলোনা ওরা । যেন খেয়েই ফেলবে । এখানে বলে রাখা ভালো, মিসেস মল্লিকা হলেন ডগ ঔনারস এসোসিয়েশানের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদিকা ।
উনার দেখাদেখি আজকে পিলু চৌধুরীও পিঠ সম্পুর্ন খোলা একটা ব্লাউজ পরেছেন । "আজকে সবার চোখ ছানাবড়া করে দেবো ।" ভাবলেন সভানেত্রী পিলু ।
পিলুর বাসায় মোট তিনটে ডগ রয়েছে প্রথমটি জার্মান শেফার্ড, দ্বিতীয়টি ল্যাভ্রাডর রিট্রিভার এবং তৃতীয়টি একটি রটউইলার । তিনটিকেই তিনি নিজের স্বামীর চেয়েও বেশী ভালোবাসেন । আর না বাসার কোন কারনই নেই কারন কুকুর গুলো অনেক বিশ্বাসী বা বফাদার, যেটা তার স্বামীর জন্য মোটেও প্রযোজ্য নয় ।
তাদের এই এসোসিয়েশানের মেম্বার সংখ্যা এখন প্রায় ১২০০ । লাইফ মেম্বার হতে হলে এককালীন প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিতে হয় । এবং তার আগে বিদেশী কুকুরগুলোর জন্য সার্টিফিকেট সংগ্র্হ করতে হয় যেটার মুল্য প্রায় ৫লাখ টাকা । আর এক মাসের মধ্যেই উনি একটি ইংলিশ শীপডগ আর একটি গ্রেহাউন্ড আনাচ্ছেন যেগুলোর মিলিত মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা । যেগুলো তার নট সো ট্রাস্টওরদি বাট সামটাইমস হানি টাইপ হাসব্যান্ড ই এনে দিচ্ছেন ।
যাহোক পার্টির আগে তাকে মেকাপ লাগানো অবস্থাতেই একটি ক্লাব বিচার কার্য সম্পাদন করতে হবে ।
মিটিংয়ে ঢুকতেই সাচ্চু সাহেব চোখ গোলগোল করে বললেন , " আহ ভাবী আপনাকে আজ যা সুন্দরী লাগছেনা ।" পাশে বসা ববিতা গুহ তার পাশে বসা মিসেস চাকলাদারকে কানে কানে বললেন "সাচ্চু মিয়ার কুকুরটা যেরকম, উনার চরিত্রও সেরকম, সারাক্ষণ নারী জাতির পিছে ঘুরঘুর করা স্বভাব ।"
অন্যদিকে মিসেস রোমানা, মিসেস সানজানাকে বলছিলেন " আপা আমার বেবীডগটার কি যে হয়েছে জানেন সারাদিন ঘুমায়না, সারাদিন খালি বাংলা কুত্তার মত ছুনুমুনু ছুনুমুনু করে ।"
মিসেস সানজানা যিনি কিনা আজকে মিনি স্কার্ট পড়েই চলে এসেছেন জবাব দিলেন " আহারে বেবীটা, ডাক্তার দেখান ভালো করে, ছুনুমুনু রোগটা ভালো নয়, আমার বয়ফ্রেন্ডেরও হয়েছিলো একবার । আহা বেচারা কি যে কষ্ট পেয়েছে ।"
" তা ভাবি তখন কি করেছিলেন আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ।"
জিজ্ঞাসা করলেই মিসেস সানজানা বললেন " আর বলবেননা, অনেক সহ্য করেছি, কিন্তু যখ্ন দেখলাম এ রোগ সারবার নয় তখন ছেড়েই দিয়েছিলাম ওটাকে । এ জন্যই তো বলছি যে ছুনুমুনু ভালো রোগ নয় ।"
যা হোক আজকের মুল বিচার কার্য শুরু হলো, এটাকে যদিও ঠিক বিচার কার্য না বলে কম্প্লেইন শুনানী কার্য বলাই ভালো । কারন যার বিরুদ্ধে কম্প্লেইন সে একটা কুকুর, তাও আবার নন মেম্বারের । যাহোক আজকের কম্প্লেইন্টা পড়ে শুনাবেন মিসেস জাফর । উনি রীতিমত নাঁকি সুরে কাঁদছেন ।
সভানেত্রী উনাকে অভয় দেওয়ার জন্য বললেন, " আহা জাফর আপা প্লিজ কাঁদবেননা বলুন কম্প্লেইনটা ।"
উনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই বললেন " ৪২০ নম্নর বাসাটাতে নতুন আসা সাদা জাহাঙ্গীর সাহেবের বউ মোসলেমা বেগমের বাংলা কুত্তাটা আমার সুইট বেবী লওরাকে প্রেগন্যান্ট করে ফেলেছে ।" বলেই উনি কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন ।
সবাই একসাথে বলে উঠলেন "শেইম, শেইম ।"
মিটিংয়ে বসা ডি, আই জি সাহেবের বউ বললেন , " সে কি আপনি এখনি বাংলা কুত্তাটার নামে থানায় একটা রেইপের মামলা করে দেন । আমার ডার্লিং বলেছে নারী নির্যাতন কেইস একটি নন বেইলেবল কেইস । পুলিশ আসামীকে এরেস্ট করতে বাধ্য ।“
অন্যদিকে ডেপুটি মেয়রের স্ত্রী মিসেস মোসাদ্দেকা বললেন, " কি ক্ষ্যাত রে বাবা, কুকুর গুলোকে কি কনট্রাসেপটিভ ইউজ করানোর শিক্ষা দিতে পারেনি, মানুষ গুলোও যেমন বস্তি টাইপ, কুত্তাটাও বস্তি টাইপ । আমার হাজব্যান্ডকে বলে শহর থেকে বাংলা কুত্তা নিধন করার কথা বলবো ।"
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, কুত্তাটার বিশেষ অস্ত্র কেঁটে নেওয়া হবে । যাতে করে আর কোনদিনও এই ধরনের কূকর্ম না করতে পারে ।
আর কুত্তাটির মালিক যারা কিনা কুত্তা মালিক সমিতির বেশ ক্ষমতা সম্পন্ন সদস্য তাদেরকে নোটিশ পাঠানো হবে যে, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, ঘটলে এলাকা থেকে ঘাড় ধরে বিতাড়িত করা হবে । সমাজচ্যুত করা হবে তাদেরকে । সোশ্যালি বয়কট করা হবে ।
রাতের পার্টতেই ঘটলো ঘটনাটা, সবাইকে থমকে দিয়ে কোত্থেকে যেন পার্টিতে যোগদান করলেন মোসলেমা বেগম, সাথে তার বাংলা কুত্তাটাও আছে, সবাই কানাঘুষো, ছি: ছি: করা শুরু করেছে, তখনই পার্টির প্রধান আকর্ষন পেট মিনিষ্টারের ওয়াইফ ঘোষনা দিলেন আজকে পার্টর বিশেষ অতিথি হলেন মোসলেমা বেগম আর উনি হলেন বাংলা কুকুর মালিক সমিতি নির্বাচিত সভানেত্রী এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব সাদা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ।
এটা শুনেই মিসেস জাফরের সুর পাল্টে গেলো । উনি বললেন " দেখেছেন আমার বেবী ডগ, আমি জানতাম, বেবী লওরা যাকে তাকে পছন্দ করতেই পারেনা ।"
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯